বাংলারজমিন
মৌলভীবাজারে আঞ্জুম হত্যাকারীর ফাঁসির দাবিতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার থেকে
২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার স্কুল শিক্ষার্থী নাফিসা জান্নাত আঞ্জুমের হত্যাকারীর বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় রাস্তা অবরোধ ও জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন প্রায় ২ হাজারের অধিক আন্দোলনকারী ও বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গতকাল দুপুরে মিনিবাস, ট্রাক ও বেশ কয়েকটি প্রাইভেটকারযোগে কুলাউড়ার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও এলাকা থেকে দুই হাজারের অধিক ছাত্র-জনতা মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাট থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা দায়রা জজ ও সিজিএম’র কোর্টের সামনে এসে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে মৌলভীবাজার সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, আইনজীবী, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা ব্যানার ও ফেস্টুনসহ অংশগ্রহণ করেন। তারা আঞ্জুমের চিহ্নিত হত্যাকারী ধর্ষক জুনেলের ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। সেখানে কিছু সময় অবস্থান করে তারা প্রেস ক্লাবের সামনে এসে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হন। সেখানেও আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করে রাস্তায় বসে পড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এ সময় প্রেস ক্লাব মোড়সহ আশপাশ এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। আঞ্জুমের সহপাঠী ও এলাকাবাসী জানান, চিহ্নিত খুনি ও ধর্ষক জুনেলের বিচারের দাবিতে তারা কয়েকদিন থেকে নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নেমেছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত ফাঁসির রায় কার্যকর না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আর কোনো মেয়ে শিক্ষার্থী যেন এমন পৈশাচিক নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে এভাবে মৃত্যুবরণ করতে না হয়। তারা এ বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। দ্রুত সময়ে আসামি গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ প্রশাসনকেও তারা ধন্যবাদ জানান। সামাজিক সংগঠন বোরহান উদ্দিন (রহ.) ইসলামী সোসাইটি’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম মুহিবুর রহমান মুহিবের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ মিছিল শেষে প্রতিবাদ সমাবেশের সঞ্চালনা করেন সমাজকর্মী শিক্ষার্থী মো. আবু সামাদ সুজেল। বক্তব্য রাখেন- এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পিপি এডভোকেট ড. আব্দুল মতিন চৌধুরী, সাংবাদিক এসএম উমেদ আলী, মু. ইমাদ উদ দীন, কুলাউড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক খান সাহেদ, মানবাধিকারকর্মী ও এপিপি এডভোকেট নিয়ামুল হক, নিহত আঞ্জুমের পিতা আব্দুল খালিক, ভাই আফিফ ইসলাম রাজিন, ইম্পেরিয়াল কলেজের প্রভাষক মাওলানা তাজুল ইসলাম, কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক খালেদ আহমেদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ১৪ই জুন প্রাইভেট পড়া থেকে বাড়ি ফেরার পথে কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্রী নাফিসা জান্নাত আনজুমকে রাস্তা থেকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন করে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে জুনেল। এর একদিন পর বাড়ির পাশের কবরস্থানের পাশ থেকে স্থানীয়রা লাশ উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে খুনিকে গ্রেপ্তার করে। খুনি জুনেল পুলিশের কাছে খুনের কথা স্বীকার করলেও কোর্টে সে খুনের কথা স্বীকার করেনি। এ সময় পুলিশ সাতদিনের রিমান্ড চাইলেও আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। তবে ওইদিন কোর্টে কোনো আইনজীবী জুনেলের পক্ষে দাঁড়াননি। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেন।