ঢাকা, ২৩ জুন ২০২৫, সোমবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৫ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলার ঝুঁকি কী কী?

মানবজমিন ডিজিটাল

(৫ ঘন্টা আগে) ২৩ জুন ২০২৫, সোমবার, ৪:৪৫ অপরাহ্ন

mzamin

মার্কিন যুদ্ধবিমান ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়েছে। যেগুলোকে ইরানের সাথে চলমান যুদ্ধে ইসরাইলি বিমানগুলো লক্ষ্যবস্তু করেছিল। লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে একটি ছিল ফোরদো।  এটি একটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র যা একটি পাহাড়ের কোলে  লুকানো ছিল এবং ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য ফোরদো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাতানজ এবং ইসফাহানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতেও হামলা চালানো হয়েছে।জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে যে, স্থাপনাগুলোর কতটা ক্ষতি হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়, জানা গেছে সাইটের বাইরে তেজস্ক্রিয়তা লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণের ঝুঁকি কতখানি ?

IAEA ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে মার্কিন আক্রমণকে ‘গভীর উদ্বেগজনক’ বলে বর্ণনা করেছে। গত সপ্তাহে এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেছিলেন, সামরিক উত্তেজনার মধ্যে তেজস্ক্রিয় পদার্থ নির্গত হওয়ার সম্ভাবনা  মানুষ এবং পরিবেশের জন্য গুরুতর পরিণতি ডেকে আনবে। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সাইটগুলো একটি নির্দিষ্ট ধরণের আইসোটোপ বা ইউরেনিয়ামের সরবরাহ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। সারে বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের জাতীয় ভৌত পরীক্ষাগারের অধ্যাপক প্যাডি রেগান ব্যাখ্যা করেছেন যে, ‘যখন আপনি মাটি থেকে ইউরেনিয়াম খনন করেন, তখন এটি দুটি রূপে আসে: ৯৯.৩% হল ইউরেনিয়াম-২৩৮। অথবা ১৫০ পরমাণুর মধ্যে প্রায় একটি পরমাণু হল ইউরেনিয়াম-২৩৫,পারমাণবিক চুল্লিতে কাজ করার জন্য এটিই প্রয়োজন হয়।’

শক্তির বিস্ফোরণ
অধ্যাপক রেগান বলছেন, পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার মূল  অর্থ ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর পরিমাণ বৃদ্ধি করা। এটি করা হয় গ্যাস আকারে ইউরেনিয়াম গ্রহণ করে এবং সেন্ট্রিফিউজ নামক মেশিনে ঘুরিয়ে। যেহেতু ইউরেনিয়াম-২৩৮ প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর চেয়ে ভারী, তাই দুটি ঘূর্ণনের সময় আলাদা হয়ে যায়। সমৃদ্ধকরণ বৃদ্ধির জন্য এই প্রক্রিয়াটির   বারবার পুনরাবৃত্তি করা হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে সাধারণত এই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের প্রায় ৩-৫% প্রয়োজন হয় যাতে একটি নিয়ন্ত্রিত পারমাণবিক বিক্রিয়া তৈরি হয় শক্তি নির্গমনের জন্য। কিন্তু যখন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির লক্ষ্য থাকে, তখন ইউরেনিয়াম-২৩৫ এর অনেক বেশি অনুপাত প্রয়োজন হয় - প্রায় ৯০%। মূলত, ইউরেনিয়াম যত বেশি সমৃদ্ধ হবে, সমস্ত পরমাণু বিভক্ত হলে শক্তির বিস্ফোরণ তত বেশি হবে। 

IAEA  জানিয়েছে যে, ইরানের ইউরেনিয়াম প্রায় ৬০% সমৃদ্ধকরণে পৌঁছেছে- যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য যথেষ্ট পরিমাণে ঘনীভূত হওয়ার পথে। কিন্তু সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সঠিকভাবে সঞ্চিত মজুদে রকেট নিক্ষেপ করলে ফুকুশিমা বা চেরনোবিলের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ঘটে যাওয়া বিপর্যয়ের মতো একই মাত্রায় ‘পারমাণবিক ঘটনা’ ঘটবে না। পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিম স্মিথ, যিনি চেরনোবিল বিপর্যয়ের পরের ঘটনা অধ্যয়ন করেছেন, বলছেন, ‘অত্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম অ-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি তেজস্ক্রিয়। কিন্তু বাস্তবে, দুটির কোনওটিই বিশেষভাবে তেজস্ক্রিয় নয়। এটি কোনও বড় পরিবেশগত দূষণের সমস্যা তৈরি করবে না। তবে আমরা ফিশন পণ্য সম্পর্কে বেশি চিন্তিত-চুল্লিতে বা বোমায় থাকা অবস্থায় ইউরেনিয়াম বিভাজিত হয়-তেজস্ক্রিয় সিজিয়াম, তেজস্ক্রিয় স্ট্রন্টিয়াম, তেজস্ক্রিয় আয়োডিনের মতো যৌগে। এগুলো পরিবেশগত দূষণের একটি বিষয়।’

কিন্তু যেহেতু সমৃদ্ধকরণ স্থানগুলোতে কোনও পারমাণবিক বিক্রিয়া ঘটছে না তাই এই বিপজ্জনক তেজস্ক্রিয় পদার্থ সেখানে উপস্থিত থাকবে না বলে মনে করেন অধ্যাপক স্মিথ। পরিবর্তে, বিস্ফোরণের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে ইউরেনিয়াম ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে।

স্থানীয়রা কতটা  হুমকির মুখে 
IAEA  জানিয়েছে যে মার্কিন হামলার পর  সাইট-বহির্ভূত তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বৃদ্ধির কোনও খবর পাওয়া যায়নি । গত সপ্তাহে, যখন ইসরাইল নাতানজ স্থাপনায় আঘাত হানে, তখন IAEA  সাইটটিতে তেজস্ক্রিয় দূষণ খুঁজে পায়, তবে তারা বলেছে যে বাইরে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা অপরিবর্তিত এবং স্বাভাবিক স্তরে রয়েছে। বৃস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের খনিজবিদ্যা এবং তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ক্লেয়ার কর্কহিল জানাচ্ছেন, ইউরেনিয়ামের সাথে... বিকিরণ আসলে খুব বেশি দূরে যায় না। কিন্তু এই স্থানের কাছাকাছি থাকা মানুষদের জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকতে পারে। মানবদেহে ইউরেনিয়াম কণা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে যাওয়া উচিত নয়। কারণ ইউরেনিয়াম কণাগুলো  কোষে,  ফুসফুস বা  পেটের ভিতরে আটকে যেতে পারে এবং ধীরে ধীরে, তেজস্ক্রিয়ভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পারে। সেটি ক্ষতির কারণ হতে পারে। 'তেজস্ক্রিয়তার পাশাপাশি, রাসায়নিকের সংস্পর্শও আশেপাশের যে কোনো প্রাণীর জন্য শারীরিক  সমস্যার কারণ  হতে পারে। 

ব্যাঙ্গর বিশ্ববিদ্যালয়ের পারমাণবিক পদার্থ বিজ্ঞানী অধ্যাপক সাইমন মিডলবার্গ বলছেন -'যদি কোনও ঘটনা ঘটে এবং সেন্ট্রিফিউজের মধ্যে থাকা গ্যাস, ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড নির্গত করে, তবে এটি সত্যিই একটি গুরুতর রাসায়নিক বিপর্যয়  হবে।'

যদি এই ইউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড বাতাসের আর্দ্রতার সংস্পর্শে আসে, তাহলে এটি সত্যিই বেশ ক্ষতিকারক। কারণ এটি এই অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যাসিড তৈরি করতে পারে। কিন্তু এটি স্থানীয় এলাকার বাইরে ব্যাপকভাবে পরিবেশগত প্রভাব ফেলবে না। IAEA জানিয়েছে যে, গোটা বিষয়টি নিয়ে তারা চব্বিশ ঘন্টা কাজ করছে। জাতিসংঘের সংস্থাটি জানিয়েছে যে আরও তথ্য পাওয়া গেলে তারা ইরানের পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও মূল্যায়ন করতে পারবে।

সূত্র : বিবিসি

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status