বাংলারজমিন
শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন থাকলেও মিলছে না সেবা
শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি
২১ জুন ২০২৫, শনিবার
হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয়ার কথা। কিন্তু নাম মাত্র ১-২টি পরীক্ষা করে অসহায় ও গরিব রোগীদের পাঠিয়ে দেয়া হয় বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্লিনিকের ছেড়ে রাখা দালালদের দৌরাত্ম্য রয়েছে চরমে। দালালদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ রোগী ও তার স্বজনরা। এমন ঘটনা ঘটছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
সরজমিন দেখা যায়, গ্রাম থেকে আসা দরিদ্র ও অসহায় রোগী এবং তাদের স্বজনকে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন দালাল চক্রের সদস্যরা। প্রবেশদ্বার থেকে ভেতরের জরুরি বিভাগের দরজা পর্যন্ত পুরো হাসপাতালে দালালদের অবাধ বিচরণ ও আধিপত্য। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘিরে অর্ধশতাধিক দালালের সক্রিয় উপস্থিতি দেখা গেছে। যাদের বয়স ২৫-৪৫ বছর। এ ছাড়াও হাসপাতালের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীও দালাল চক্রের সঙ্গে জড়িত। হাসপাতালের চারপাশের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসির মালিকরা এসব দালালকে নিয়মিত দেখভাল করেন। এ ব্যাপারে কথা হয় ধোবড়া এলাকার সাথী বেগম, সোনামসজিদ এলাকার বিউটি বেগম, মির্জাপুর এলাকার জেসমিন ও গোলাপবাজার এলাকা সোমা বেগমের সঙ্গে।
তারা বলেন, আমরা গরিব মানুষ। উপজেলা হাসপাতালে আসলে ডাক্তার দেখালে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেন। সরকারি পরীক্ষার করার স্লিপ নিতে গেলে তারা বলেন, ‘আজকে কোনো পরীক্ষা হবে না।’ বিষয়টি বাড়িতে ফোন দিয়ে জানাচ্ছিলাম। এ সময় এক মহিলা এসে পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমি মেডিকেলের স্টাফ। এখানে আল্টার মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আল্টা করে পাবেন না। চলেন, বাইরে থেকে আল্ট্রা করে নিয়ে আসি।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারী বলেন, রোগী ভাগানোর ওপর দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে কমিশন পান এসব দালাল। দালালদের মধ্যে প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব তৈরি করতে দেয়া হয় লোভনীয় সব প্রস্তাব। যেসব বিভাগে রোগী বেশি, অস্ত্রোপচারের জন্য বেশি টাকার প্রয়োজন হয়, সেসব রোগী ভাগাতে দালালদের তৎপরতা বেশি দেখা যায়।
এদিকে, মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট (ফিজিওথেরাপিস্ট) রওশন আরা বলেন, দু’দিনের মোট ৪টি আল্ট্রাসনোগ্রাফির স্লিপ কেটেছি। আমাকে আল্ট্রা রুম থেকে জানানো হয়েছে আজ কোনো আল্ট্রা হবে না। কেন হবে না সে ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। আমাকে যেভাবে বলা হয়েছে, আমি সেভাবে রোগীদের বলছি। আল্ট্রাসনোগ্রাফি রুমে দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. শাপলা বলেন, কাউন্টার থেকে ১২টা পর্যন্ত টিকিট ছাড়ে। যতক্ষণ আল্ট্রা করার রোগী থাকবে ততক্ষণ আল্ট্রা করা যাবে। কিন্তু আমাকে আরএমও স্যার দুপুর সাড়ে ১২টায় রুম বন্ধ করে দিতে বলায়, তা আমি করেছি।
তবে, এ বিষয়ে আরএমও আজিজুর রহমান সুইটের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি হাসপাতালে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আল্ট্রাসনোগ্রাফি সাপ্তাহিক ২ দিন করা হয়। সোমবার ও বুধবার। এ দু’দিন দুপুর ১টা পর্যন্ত যত রোগী হয়, সেসব রোগীর আল্ট্রা করা হবে। এতে সংখ্যা যাই হোক। কিন্তু সময়ের আগে আল্ট্রা করা বন্ধ করে দেয় তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। দালালদের বিষয়ে তিনি বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন আল্ট্রাসনোগ্রাফি চালু করতে না পারায় কিছু কিছু অসাধু ব্যক্তি রোগী বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমার অভ্যন্তরীণ কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী রোগীদের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে সতর্ক আছি। কিন্তু বাইরেরগুলো অফিস সময়ের বাইরে রোগীদের নিয়ে যাচ্ছে। এদের আইনের আওতায় আনতে হবে।