বাংলারজমিন
চেম্বার ভবন ১১ মাস ধরে তালাবদ্ধ
সুনামগঞ্জে কয়লা-চুনাপাথর আমদানিকারকরা ভোগান্তিতে
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
২১ জুন ২০২৫, শনিবারসুনামগঞ্জের কয়লা চুনাপাথর আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি অফিস গত ১১ মাস ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে। কার্যক্রম না থাকায় হাজারো ব্যবসায়ীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
জানা যায়, গত বছরের ৫ই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রতিষ্ঠানটির সভাপতিসহ চেম্বারের অধিকাংশ কর্মকর্তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এরপর থেকে অফিসের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ভবনের প্রধান ফটকে ঝুলছে তালা। চেম্বারের আয়ের প্রধান উৎস শহরের উকিলপাড়ায় থাকা চারতলা ভবনের ভাড়াও এখন আর জমা হচ্ছে না ব্যাংক হিসাবে। জুন মাসের পর আগামী জুলাই মাসে আইআরসি নবায়ন ও এলসি দেয়াসহ তাদের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে এ জেলার হাজারো আমদানিকারকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
তাহিরপুর কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি (অন্তর্বর্তীকালীন) খসরুল আলম জানান, ৩০শে জুনের পর চেম্বার অব কমার্সের কার্যক্রম শুরু না হলে আইআরসি (ইমপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট) নবায়ন ও এলসি (লেটার অফ ক্রেডিট) করতে সমস্যায় পড়বেন আমদানিকারকরা। যেহেতু আগের কমিটির দায়িত্বশীলরা দেশে নেই। সেহেতু আইন মান্য করে হয় নতুন করে চেম্বারের কমিটি দেয়া প্রয়োজন। না হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসককে কার্যক্রম চালাতে হবে। অন্যথায় বিপাকে পড়বেন আমদানিকারকরা।
এ বিষয়ে চেম্বারের সদস্য আবু সাঈদ মো. খালিদ বলেন, অবৈধ কমিটি বাতিল করে গেল বছরের ১৯শে নভেম্বর প্রশাসক নিয়োগের জন্য আবেদন করেন তারা। একই সঙ্গে ২০১২ সাল থেকে আইন বা বিধি না মেনে যারা চেম্বার পরিচালনা করেছে। তিনি বলেন, আমরা চাই মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে মামলা দায়ের করে চেম্বারের সরানো নথিপত্র উদ্ধার করা হোক। তার দাবি, চেম্বারের কাগজপত্র জ্বলেনি, এগুলোও সরিয়ে নেয়া হয়েছে। চেম্বারের নেতৃত্বে থাকা ‘ফ্যাসিস্টচক্র’ এখনো সক্রিয়। তারা বিএনপি’র একটি পক্ষের সঙ্গে মিলেমিশে আবারও একটি অবৈধ কমিটি গঠন করে ব্যবসায়ীদের শাসন করার চেষ্টা করছে। যা আইনত কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, যারা চেম্বারের কমিটি করার বৈধতা রাখে না, এমন কর্তৃপক্ষের কাছে আগের ‘সিন্ডিকেটরা’সহ একটি কমিটিও প্রস্তাব আকারে জমা দিয়েছে এরা।
চেম্বারের বর্তমান পরিচালক জিএম তাশহিজ জানান, ৮ বছর হয় সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সদস্য তিনি। এখানে কোনো অনিয়ম দেখেননি তিনি। এখানকার আর্থিক রিপোর্ট তৈরি হয় গ্রহণযোগ্য অডিট ফর্ম দিয়ে, পরে বার্ষিক সভায় এ রিপোর্ট বই আকারে প্রকাশ করে সকল সদস্যকে জানানো হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআইসহ সকল কর্তৃপক্ষকে এ কপি দেয়া হয়। এই প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার পর কাগজপত্র সঠিক থাকলে সদস্য করা হয়নি। চেম্বারে আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ সকল দলের লোকই আছেন।
চেম্বারের আরেক পরিচালক এনামুল হক বলেন, সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের কার্যক্রমে দলীয়করণ বা পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে করার অভিযোগ সত্য নয়। চেম্বারের নেতৃত্বে থাকা পরিচালকদের মধ্যে বিএনপি’র অনেক সমর্থক ও নেতা ছিলেন। ২০১৩ সালে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ মোতাবেক নিয়ম ও বিধি মেনেই চেম্বার পরিচালিত হয়েছে। সর্বশেষ যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারা বিধি মোতাবেকই ছিলেন। তিনি বলেন, কোনো কাগজপত্র চেম্বার থেকে কেউ সরায়নি, ৫ই আগস্টে আগুন দেয়ার ফুটেজ দেখলেই বোঝা যায় ওখানে কারা আগুন দিয়েছে, কী উদ্দেশ্যে জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে। উকিলপাড়ার চেম্বার ভবনে ‘সুরমা ক্লিনিক’- নামের একটি ক্লিনিক রয়েছে বহুদিন ধরেই।
জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল মুনসুর শওকত বলেন, উকিলপাড়ার চেম্বার ভবন দীর্ঘ মেয়াদি ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন তারা। ওই ভবনের ভাড়া প্রতিমাসে ৭০ হাজার টাকা। পাঁচ বছর পর পর ভবন সংস্কার করে দেয়ার কথা। ৫ই আগস্টের আগে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছিল। এই কাজ করানোর খরচ আমরাই করেছি। এখন কর্তৃপক্ষ না থাকায় ভাড়া দেয়া যাচ্ছে না। সংস্কার কাজের হিসাব-নিকাশ তাদেরকে দেখানো যায়নি।
চেম্বারের প্রশাসক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সমর কুমার পাল বললেন, গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র প্রশাসক নিয়োগ করা হয় আমাকে। চিঠি পেয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে বসেছিলাম। একটি পক্ষ আমাকে বলেন, মামলা আছে, স্থগিতাদেশও আছে। এই অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবগত করি, মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, মামলা থাকলে কাজ করার প্রয়োজন নাই। পরে আরেকটি পক্ষ আদালতের আগের আদেশের উপর স্থগিতাদেশের কাগজ জমা দেন। আমরা এই কাগজসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। ওখান থেকে এখনো এর কোনো উত্তর আসেনি।