ঢাকা, ২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

চিংড়ি খেয়ে গুরুতর অসুস্থ যাত্রী, জরুরি অবতরণ করানো হলো সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের বিমানকে

মানবজমিন ডিজিটাল

(৫ ঘন্টা আগে) ২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার, ১২:২৯ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ২:৩২ অপরাহ্ন

mzamin

এক যাত্রীর গুরুতর অসুস্থতার কারণে জার্মানি থেকে নিউইয়র্ক সিটিগামী একটি ট্রান্সআটলান্টিক বিমানকে ফ্রান্সে জরুরি অবতরণ করানো হলো। ৪১ বছর বয়সী ওই চিকিৎসক যাত্রীর অভিযোগ, তার শেলফিশে তীব্র অ্যালার্জি রয়েছে। কেবিন ক্রুদের তার অসুস্থতা সম্পর্কে অবহিত করার পরেও তাকে চিংড়িযুক্ত খাবার পরিবেশন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে। 

দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট কর্তৃক প্রাপ্ত সেই ফেডারেল মামলার নথি অনুসারে, ম্যানহাটনের বাসিন্দা ডোরিন বেনারি পেডিয়াট্রিক ইমার্জেন্সি মেডিসিনে কাজ করেন। বিমানে যাত্রাকালে তিনি জানতেন না যে, তাকে যে খাবার পরিবেশন করা হয়েছে তাতে চিংড়ি আছে।অভিযোগে বলা হয়েছে যে, খাবারের থালায় অন্যান্য উপাদানের সাথে চিংড়ি থাকায় তিনি সেই খাবার খেয়ে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। 

সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ৭৭৭-৩০০ইআর এর বিমানটিকে রুট ঘুরিয়ে প্যারিসে নিয়ে যাওয়া হয়। বিমানটি অবতরণের পর বেনারিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং  জরুরি চিকিৎসা দেয়া হয়। 

মামলার নথিতে  বলা হয়েছে, ‘চিংড়ির প্রতি বেনারির বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং এর ফলে যে তিনি যে অসুস্থতার সম্মুখীন হয়েছেন তাতে তার কোনো দোষ নেই। এটি ঘটেছে চূড়ান্ত অবহেলার কারণে।’

শেলফিশের সাথে সম্পর্কিত অ্যালার্জিগুলো সবচেয়ে বিপজ্জনক। আক্রান্তরা অ্যানাফিল্যাকটিক শকে পড়তে পারেন। এটি একটি সম্ভাব্য মারাত্মক প্রতিক্রিয়া যা শরীরের শ্বাসনালী বন্ধ করে দেয় এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে মারাত্মক বিপদ ঘটতে পারে। 

মায়ো ক্লিনিকের একটি কেস রিপোর্টে শেলফিশের অ্যালার্জিযুক্ত ২০ বছর বয়সী এক নারীর বর্ণনা দেয়া হয়েছে যিনি তার প্রেমিককে চুম্বন করার কিছুক্ষণ পরেই প্রায় মারাত্মক অ্যানাফিল্যাক্সিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কারণ তার প্রেমিক সেই সন্ধ্যায় চিংড়ি খেয়েছিলেন। বেনারির প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী আব্রাম বোহরার দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে তার মক্কেলের অনুমতি ছাড়া মামলাটি নিয়ে আলোচনা করতে চাননি। 

মামলা অনুসারে, ২০২৪ এর ৮ অক্টোবর বেনারি ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে জন এফ. কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট SQ026-এ উঠে বিজনেস ক্লাস কেবিনে তার আসন গ্রহণ করেন। বিমানে ওঠার পর, বেনারি বিমান ক্রুদের বলেছিলেন যে বিশেষ কিছু খাবারে তার অ্যালার্জি আছে, বিশেষ করে চিংড়িতে।সতর্ক করে দেয়া সত্ত্বেও বিমানের খাবার পরিবেশনের সময় কেবিন ক্রুদের মধ্যে একজন বেনারিকে চিংড়িযুক্ত খাবার পরিবেশন করেছিলেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, বেনারি অজান্তেই সেই খাবারের কিছুটা অংশ খেয়ে ফেলেন। ওই খাবারের একটি অংশ খাওয়ার প্রায় সাথে সাথেই, বেনারি  চিংড়ির উপস্থিতি টের পান এবং অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন। বিমান ক্রুদের জিজ্ঞাসা করার পর তারা ভুল সংশোধন করে ক্ষমা চেয়ে নেন। ততক্ষণে বেনারির অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন, ফলে বিমানটিকে  প্যারিসে জরুরিভাবে স্থানান্তর করতে হয়। সেখানে  বেনারিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং জরুরি চিকিৎসা দেয়া হয়। বেনারির অভিযোগ হলো, কেবিন ক্রুদের সতর্ক করার পর তাদের নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত ছিল। 

বেনারির অভিযোগে বলা হয়নি যে, তিনি একটি এপিপেন বহন করছিলেন কিনা, যা একটি অটো-ইনজেক্টর। জরুরি পরিস্থিতিতে এপিনেফ্রিনের জীবন রক্ষাকারী ডোজ সরবরাহ করে। বর্তমান FAA নিয়ম অনুসারে, বিমান সংস্থাগুলোকে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার কিটে সহজে ব্যবহারযোগ্য এপিনেফ্রিনের শিশি বহন করতে হয় , সেটি প্রদান করার  জন্য একজন প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের প্রয়োজন হয়। আমেরিকান কলেজ অফ অ্যালার্জি, অ্যাজমা এবং ইমিউনোলজি অনুসারে এই ওষুধের সঠিক ডোজ নির্ধারণ এবং সিরিঞ্জের মাধ্যমে তা রোগীকে দেবার জন্য পেশাদারিত্ব প্রয়োজন। বিমানে যাত্রীদের  তীব্র অ্যালার্জির কারণে অবতরণের ঘটনা  অত্যন্ত বিরল, তবে তা ঘটে। 

২০১৯ সালে মিয়ামি থেকে ফিলাডেলফিয়াগামী একটি বিমান জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয় যখন বাদামে অ্যালার্জিযুক্ত একজন যাত্রী শ্বাস নিতে অক্ষম হয়ে পড়েন, কারণ বিমানের পরিচারিকারা নাস্তা হিসেবে তাকে বাদাম সম্বলিত খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছিলেন। 

২০২২ সালে সান ফ্রান্সিসকো থেকে সিঙ্গাপুরগামী ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট হনোলুলুতে ঘুরিয়ে দেয়া হয় যখন বাদামে  অ্যালার্জিযুক্ত এক যাত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত বছর শেলফিশে অ্যালার্জিযুক্ত একজন ডেল্টা যাত্রী তার অবস্থা সম্পর্কে কেবিন ক্রুদের জানানোর পরে তাকে বিমান থেকে নেমে যেতে বলা  হয়। কারণ বিমানের ফার্স্টক্লাসের খাবারে শেলফিশ ছিল। বেনারির অভিযোগে বলা হয়েছে যে, মাঝ আকাশে এই ভয়াবহ  ঘটনাটি তাকে অত্যন্ত মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা দিয়েছে এবং পরবর্তীতে তাকে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। তিনি বিচারকের কাছে পূর্ণ, ন্যায্য এবং যুক্তিসঙ্গত ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।

সূত্র : ইন্ডিপেন্ডেন্ট

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status