শেষের পাতা
বিবিএসের তথ্য
সরকারি সেবা নিতে ৩২ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে ঘুষ দিতে হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার
২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার
সরকারি সেবা নিতে গিয়ে প্রায় ৩২ দশমিক ৬৭ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হতে হয়। দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বিআরটিএ। প্রতিষ্ঠানটির সেবা নিতে হলে ৬৩ দশমিক ২৯ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হতে হয়। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেবা নিতে ৬১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, পাসপোর্ট অফিসের ৫৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং ভূমি অফিসের সেবা নিতে ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে ঘুষ-দুর্নীতির স্বীকার হতে হয়। গতকাল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সিটিজেন পারসেপশন সার্ভেতে (সিপিএস) এই চিত্র উঠে এসেছে। এ উপলক্ষে আগারগাঁও পরিসংখ্যান ভবনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিবিএস। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে সন্ধ্যার পর নিজ বাড়িতে নাগরিকদের নিরাপত্তাবোধের হার ৯২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ৮৪ দশমিক ৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ এলাকার আশপাশে একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন। তবে, পুরুষদের ৮৯ দশমিক ৫৩ শতাংশের তুলনায় নারীরা (৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ) এক্ষেত্রে কম নিরাপদ বোধ করেন। শহরাঞ্চলের নাগরিকদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ (৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ) গ্রামীণ এলাকার নাগরিকদের (৮৫ দশমিক ৩০ শতাংশ) তুলনায় কিছুটা কম। অন্যদিকে, সন্ধ্যার পর নিজ বাড়িতে নারীদের নিরাপত্তাবোধের হার ৯১ দশমিক ৮২ শতাংশ ও পুরুষের ক্ষেত্রে ৯৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
রাজনৈতিক প্রভাবের ক্ষেত্রে ২৭ দশমিক ২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন যে, তারা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতে পারেন। এক্ষেত্রে শহর ২৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ ও গ্রাম ২৬ দশমিক ৯৪ শতাশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য না থাকলেও লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য রয়েছে। এখানে পুরুষের ক্ষেত্রে ৩১ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং নারীর ক্ষেত্রে ২৩ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। অনুরূপভাবে ২১ দশমিক ৯৯ শতাংশ নাগরিক মনে করেন যে, তারা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। এই হার নারীর ক্ষেত্রে ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ ও পুরুষের ক্ষেত্রে ২৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ৪৭ দশমিক ১২ শতাংশ নাগরিক গত ১ বছরের মধ্যে অন্তত একবার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা নিয়েছেন। সেবাগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮২ দশমিক ৭২ শতাংশ নাগরিকের মতে ওই স্বাস্থ্যসেবা সহজে প্রাপ্তিযোগ্য এবং স্বাস্থ্যসেবার খরচ সামর্থ্যের মধ্যে ছিল।
শিক্ষাক্ষেত্রে ৪০ দশমিক ৯৩ শতাংশ নাগরিকের কমপক্ষে একটি শিশু সরকারি প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেন। এর মধ্যে ৯৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ নাগরিক প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহজে প্রবেশযোগ্য বলে তারা মনে করেন। যেকোনো ধরনের যানবাহনে বা পায়ে হেঁটে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছানো যায়। ৯২ দশমিক ৬৬ শতাংশ নাগরিক রিপোর্ট করেন যে শিক্ষাব্যয় সামর্থ্যের মধ্যে ছিল, যেখানে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এ হার ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। অন্যদিকে, প্রাথমিকে ৬৮ ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন শিক্ষার মান মানসম্মত ছিল।
অন্যান্য সরকারি সেবার (পরিচয়পত্র/নাগরিক নিবন্ধন) ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৮ দশমিক ১২ শতাংশ সেবার প্রাপ্যতা ও ৮৬ শতাংশ সেবাপ্রাপ্তি ব্যয় সামর্থ্যের মধ্যে ছিল মনে করেন। কার্যকর সেবাদান প্রক্রিয়া, সম-আচরণ, সময়মতো সেবাদানে সন্তুষ্টির হার ৬২ দশমিক ৬০ শতাংশ। গত দুই বছরে ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো বিবাদ বা বিরোধের মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৬০ শতাংশ নাগরিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আনুষ্ঠানিক অথবা অনানুষ্ঠানিক বিচারব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার পেয়েছেন। এর মধ্যে ৪১ দশমিক ৩৪ শতাংশ আনুষ্ঠানিক (আদালত, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইত্যাদি) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেবা পেয়েছেন। ৬৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক (কমিউনিটি নেতা, আইনজীবী ইত্যাদি) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেবা পেয়েছেন।