শেষের পাতা
সাবেক এমপি আনারের গাড়ি উদ্ধারের পর উধাও চক্রের সদস্যরা
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
২০ জুন ২০২৫, শুক্রবার
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেল ও চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা লিটনের নকল সিগারেট তৈরির চক্রের হেফাজতে ছিল সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের গাড়ি। ১১ দিন আগে ৯ই জুন রাত ১০টার দিকে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে একটি ভবনের গ্যারেজে ভারতে খুন হওয়া আনারের কয়েক কোটি টাকার প্রাডো ব্র্যান্ডের গাড়ির সন্ধান পান স্থানীয়রা। পরদিন গাড়িটি উদ্ধার করে থানায় রাখে পুলিশ। গাড়িটি উদ্ধারের পর গা-ঢাকা দিয়েছে চক্রের সদস্যসহ তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
জানা গেছে, তিন মাস আগে শহরের সাফিনা টাওয়ারের গ্যারেজে আনারের গাড়ি রাখেন নকল সিগারেট তৈরির চক্র তারা ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি কুষ্টিয়ার কর্মকর্তারা। ওই ভবনের সাতটি ইউনিট ও গাড়ি পার্কিং জোন ভাড়া নেন ওই কোম্পানির কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। গাড়ি উদ্ধারের পর থেকে তিনিসহ কর্মকর্তা, কর্মচারী ও চক্রের সদস্যরা উধাও হয়ে গেছেন। ভবনের নিরাপত্তাকর্মী ও স্থানীয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। মোস্তাফিজুর রহমানও জেনুইন লিফ কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক। ৫ই আগস্টের আগে এ কোম্পানির নাম ছিল তারা টোব্যাকো। পরে কোম্পানির নাম পরিবর্তন হলেও কর্মকর্তা একই থাকেন। এর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) বিল্লাল হোসেন।
সরজমিন সাফিনা টাওয়ারে দেখা মেলে নিরাপত্তারক্ষী আলমগীর হোসেনের। তিনি বলেন, মোস্তাফিজুর স্যার গাড়িটি প্রায় তিন মাস আগে এখানে নিয়ে আসেন। হঠাৎ জানাজানি হয় যে, গাড়ির মালিক ভারতে খুন হওয়া আনার এমপি’র। একদিন পরে গাড়িটি উদ্ধার করে নিয়ে গেছে পুলিশ। এরপর থেকে বড় স্যাররা কেউ এখানে আসেন না। কোম্পানির অন্য গাড়িগুলোও নিয়ে গেছেন তারা। মোস্তাফিজুর স্যার তার পরিবার নিয়ে চলে গেছেন। এটা আগে তারা কোম্পানি ছিল। ৫ই আগস্টের পর জেনুইন কোম্পানি হয়েছে। ত্রিমোহনী এলাকায় তাদের অফিসে সরজমিন দেখা যায়, অফিসে কোনো কর্মকর্তা নেই। নিরাপত্তাকর্মীসহ দু’জন রয়েছেন। অপরজন কোম্পানির পাবলিক রিলেশন অফিসার এ এম সালেহীন তৌহিদ।
তিনি বলেন, অফিসে কেউ নেই। আপনারা পরে আসেন। কর্মকর্তারা কোথায় আছেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি, স্যাররা কোথায় আছেন বলতে পারবো না। বেশ কয়েকদিন স্যাররা অফিসে আসেন না বলে জানান তিনি। নিরাপত্তাকর্মী ফজলুল শেখ ও কর্মচারী আব্দুল বারী বলেন, এটির নাম আগে তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো ছিল। ৫ই আগস্টের পর জেনুইন লিফ টোব্যাকো নামকরণ করা হয়েছে। অফিসের কার্যক্রম সবমিলিয়ে ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু পুলিশ লাইনের সামনের অফিস থেকে একটি গাড়ি উদ্ধারের পর থেকে কর্মকর্তারা অফিসে আসেন না। অফিস দু’টির পাশের ভাড়াটিয়া ও স্থানীয়রা বলেন, তারা কোম্পানি তামাকের বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। অফিসের মধ্যে কী হতো সেটি আমরা জানি না। আনার এমপি’র গাড়ি উদ্ধারের পর অফিসের কর্মকর্তারা অফিসে আসেন না। আগের মতো লোকজনের যাতায়াত দেখা যায় না।
জেনুইন লিফ টোব্যাকো কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, বর্তমানে কুষ্টিয়া অঞ্চলে জেনুইন লিফ টোব্যাকো কোম্পানির সবকিছু দেখভাল করেন তিনজন কর্মকর্তা। তারা হলেন- সিইও জাহিদ, জিএম বেলাল হোসেন ও নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। এ অঞ্চলে নওফেল সিন্ডিকেটের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এই তারা। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, গাড়িটি উদ্ধার করে থানায় রাখা হয়েছে। এখানে কীভাবে এলো, সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় একটি জিডি হয়েছে। আমরা আইনানুযায়ী আদালতকে বিষয়টি অবগত করেছি। কেউ মালিকানা দাবি করলে, আদালতের আদেশ অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। প্রয়াত এমপি আনারকন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, কুষ্টিয়াতে ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ব্র্যান্ডের যেই গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে সেই গাড়িটি আমার বাবার। সংসদ সদস্য হিসেবে শুল্কমুক্তভাবে গাড়িটি আমদানি করা হয়েছিল। আমরা গাড়িটি পাওয়ার চেষ্টা করছি। এজন্য যে যে পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেগুলো নেয়া হচ্ছে।