শেষের পাতা
এসএসএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধান উপদেষ্টা
রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে গিয়ে কাজ করতে হবে
স্টাফ রিপোর্টার
১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বলেন, রাষ্ট্র ঘোষিত ভিআইপিদের নিরাপত্তা প্রদানে পেশাগত দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি চারিত্রিক দৃঢ়তা, উন্নত শৃঙ্খলা, সততা, দায়িত্বশীলতা এবং মানবিক গুণাবলীর বিষয়সমূহকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘প্রধান উপদেষ্টার দরবার’ অনুষ্ঠানের বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সরকারপ্রধান বলেন, নিরাপত্তার খাতিরে এসএসএফকে বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে হয়, যা অনেক সময় জনভোগান্তি সৃষ্টি করে। এ ব্যাপারে আমি এসএসএফকে যতটুকু সম্ভব জনভোগান্তি পরিহার করার ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছি। অতীতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি ফ্লাইটের জন্য প্রায় এক ঘণ্টা সকল ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ থাকতো। এতে অনেক ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হতো। আমি এই নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়েছি। এতে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘব হবে বলে আমি আশাবাদী।
আমি মনে করি জনবিচ্ছিন্ন না হয়ে বরং জনসংযোগ ও নিরাপত্তার মেলবন্ধনের মাধ্যমেই এসএসএফ তার ওপর অর্পিত সকল দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করবে। প্রফেসর ইউনূস বলেন, বর্তমান বিশ্বে আধুনিক প্রযুক্তি ও তথ্য আদান-প্রদান খুব সহজ হওয়ার কারণে নিরাপত্তা হুমকির ধরন ও প্রকৃতি দ্রুত পরিবর্তনশীল। তাই শতভাগ নিরাপত্তা প্রদান করা খুবই চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এসএসএফ সুষ্ঠুভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। আমি আশা করি, এসএসএফ নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা হুমকি পর্যালোচনা এবং সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, সমপ্রতি এসএসএফ যমুনার সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুসংহত করেছে। আশা করি, এসএসএফ একই ভাবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়েরও সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করবে। আমি আরও আশা করি, এসএসএফ একটি পেশাদার বাহিনী হিসেবে উন্নত প্রশিক্ষণ, উন্নত প্রযুক্তি এবং উন্নত মনোবলের সন্নিবেশে দিন দিন আরও উন্নতিসাধন করবে। এসএসএফের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও সরঞ্জামাদির আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত বছরের ৫ই আগস্ট এই বাহিনীর কিছু যানবাহন ও সরঞ্জামাদির ক্ষতি হয়েছিল, যা অল্প সময়ের মধ্যেই কার্যক্ষম করা হয়েছে। পাশাপাশি, বাহিনীর অভিযানিক কার্যক্রম আরও বেগবান ও কার্যকরী করার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক অস্ত্র-সরঞ্জামাদির ব্যবহার এবং দেশে-বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিটি সদস্যের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। শিগগিরই এসএসএফ তাদের ১২ বছরের পুরনো ভিএইচএফ রেডিও কমিউনিকেশন সিস্টেম পরিবর্তন করে সর্বশেষ মডেলের ইউএইচএফ রেডিও কমিউনিকেশন সিস্টেম সংযোজন করবে, যা তাদের অভিযানিক কার্যক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে।
তিনি বলেন, আমি জেনে খুশি হয়েছি যে, এসএসএফের অত্যাধুনিক ইনডোর ফায়ারিং রেঞ্জের কাজ প্রায় শেষ ও আগামী মাস থেকে এটি ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এই ফায়ারিং রেঞ্জের জন্য ভূমি বরাদ্দসহ অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান করায় বিমান বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্যান্য বাহিনীর তুলনায় এসএসএফ একটি ক্ষুদ্র বাহিনী। তবে এর কাজের গুরুত্ব এবং সংবেদনশীলতা অনেক বেশি। এই বাহিনী আমার নেতৃত্বে এবং তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এসএসএফ একটি প্রশিক্ষিত ও সুশৃঙ্খল বাহিনী যারা আমার ও রাষ্ট্রপতির সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বিগত ১০ মাসে এসএসএফ দেশে ও বিদেশে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন এবং সার্বিক পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার জন্য তিনি এসএসএফের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ ও আনসার বাহিনী থেকে সেরা চৌকস অফিসারকে নিয়ে এসএসএফ একটি অত্যাধুনিক ও পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠেছে। তবে তাদের কেবল দেশের সেরা হলে চলবে না পেশাদারিত্ব, কাজের দক্ষতা, প্রযুক্তির ব্যবহার সবকিছু মিলিয়ে বিশ্বমানের হতে হবে।
এসএসএফ সদস্যদের বিশ্বমানের হওয়ার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। তিনি এসএসএফে সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ ও আনসার বাহিনী থেকে চৌকস অফিসার নির্বাচন ও প্রেরণ করায় সকল বাহিনী প্রধানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুস সামাদ চৌধুরী বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাসহ রাষ্ট্র ঘোষিত ভিআইপিদের নিরাপত্তা প্রদান এবং মর্যাদা ও সম্মান রক্ষায় এসএসএফ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। বর্তমানে এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৫৭০। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, তিন বাহিনী প্রধান, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।