অনলাইন
সতর্ক করলেন বিজ্ঞানীরা
বিশ্বের প্রথম পানি শূন্য শহর হতে চলেছে কাবুল
মানবজমিন ডিজিটাল
(১১ ঘন্টা আগে) ৯ জুন ২০২৫, সোমবার, ২:০৭ অপরাহ্ন

কাবুল বিশ্বের প্রথম ‘আধুনিক’ শহর হতে চলেছে যেখানে দেখা দেবে সম্পূর্ণ পানিশূন্যতা। আগাম সতর্ক করে দিলেন বিশেষজ্ঞরা। এনজিও মার্সি কর্পসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, দ্রুত নগরায়ণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত দশকে কাবুলের জলাধারের মধ্যে পানির স্তর ৩০ মিটার পর্যন্ত কমে গেছে।ইতিমধ্যে কাবুলের বাসিন্দাদের জন্য খাবারের পানির প্রাথমিক উৎস বোরহোলগুলো প্রায় অর্ধেক শুকিয়ে গেছে। বর্তমানে প্রতি বছর প্রাকৃতিক রিচার্জ হারের চেয়ে ৪৪ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে।
মার্সি কর্পস আফগানিস্তানের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডেইন কারি বলেন, ‘সংকট মোকাবেলার প্রয়োজনীয়তার প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকা উচিত। পানি না থাকার অর্থ হলো মানুষ দেশ ছেড়ে চলে যাবে, তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি আফগানিস্তানের পানির চাহিদা পূরণ না করে তবে আফগান জনগণের জন্য বাড়বে অভিবাসন এবং তা আরও কষ্টের কারণ হবে।’
প্রতিবেদনে পানি দূষণকে আরেকটি ব্যাপক চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। কাবুলের ভূগর্ভস্থ পানির ৮০% পর্যন্ত অনিরাপদ বলে মনে করা হচ্ছে। যেখানে উচ্চমাত্রার পয়ঃনিষ্কাশন, লবণাক্ততা এবং আর্সেনিক রয়েছে। কাবুলের মানুষের জন্য পানির সরবরাহ একটি নিত্যদিনের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। কিছু পরিবার তাদের আয়ের ৩০% পর্যন্ত পানিতে ব্যয় করে এবং দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি পরিবার পানি সম্পর্কিত ঋণের বোঝায় ভোগে। কাবুলের খায়েরখানা পাড়ায় বসবাসকারী একজন শিক্ষিকা নাজিফা। তিনি বলছেন, ‘আফগানিস্তান অনেক সমস্যার মুখোমুখি, কিন্তু এই পানির সংকট সবচেয়ে কঠিন সমস্যার মধ্যে একটি। প্রতিটি পরিবারই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, বিশেষ করে যাদের আয় কম। পর্যাপ্ত, ভালো মানের কূপের অস্তিত্বই নেই।’
কিছু বেসরকারি কোম্পানি এই সংকটকে পুঁজি করে সক্রিয়ভাবে নতুন কূপ খনন করছে এবং বিপুল পরিমাণে সরকারি ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছে। তারপর তা শহরের বাসিন্দাদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করছে।
নাজিফা বলেন, ‘আমরা আগে পানির ট্যাঙ্কার থেকে ক্যান ভরার জন্য প্রতি ১০ দিনে ৫০০ আফগানি (৫.৩০ পাউন্ড) দিতাম। এখন একই পরিমাণ পানির জন্য আমাদের ১,০০০ আফগানি খরচ হয়। গত দুই সপ্তাহ ধরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। আমরা আশঙ্কা করছি এটি আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।’
২০০১ সালে কাবুলের জনসংখ্যা ছিল ১০ লক্ষেরও কম। এখন সেই কাবুল শহরের জনসংখ্যা সাতগুণ বৃদ্ধির ফলে পানির চাহিদা নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। কেন্দ্রীভূত শাসন ও নিয়ন্ত্রণের অভাবও কয়েক দশক ধরে এই সমস্যাটিকে স্থায়ী করে তুলেছে। ২০২৫ সালের গোড়ার দিকে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস ঘোষণা করে যে, আফগানিস্তানে পরিকল্পিত পানি ও স্যানিটেশন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ২৬৪ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে তাদের অংশীদাররা মাত্র ৮.৪ মিলিয়ন ডলার (৬.২ মিলিয়ন পাউন্ড) পেয়েছে।
২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে আন্তর্জাতিক পানি ও স্যানিটেশন তহবিলের আরও ৩ বিলিয়ন ডলার স্থগিত করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএআইডি তহবিলের ৮০% এরও বেশি হ্রাস করার সাম্প্রতিক পদক্ষেপ সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে।
কারি বলেন, ‘সবকিছুই সাহায্যের উপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল। আমরা স্বল্পমেয়াদী পানির সমস্যার সমাধানের জন্য লক্ষ লক্ষ ডলার ব্যয় করতে পারি এবং বলতে পারি যে আমরা প্রয়োজনটি পূরণ করেছি, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য আরও ভাল বিনিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এই প্রয়োজন অব্যাহত থাকবে।’
শিক্ষিকা নাজিফা বলেন, ‘পানি আফগানিস্তানের একটি মানবাধিকার এবং প্রাকৃতিক সম্পদ। এটি কোনও রাজনৈতিক বিষয় নয়। বাগানের শুকিয়ে যাওয়া ফুল এবং ফলের গাছগুলোর দিকে তাকালে আমার হৃদয় ব্যথিত হয়ে ওঠে। কিন্তু আমরা কী করতে পারি? আমরা বর্তমানে একটি সামরিক রাষ্ট্রে বাস করছি, তাই আমরা বিষয়টি রিপোর্ট করার জন্য সরকারের কাছেও যেতে পারি না।’
পাঞ্জশির নদীর পাইপলাইন এমন একটি প্রকল্প যা সম্পন্ন হলে, ভূগর্ভস্থ পানির উপর শহরের অতিরিক্ত নির্ভরতা কমতে পারে এবং ২০ লক্ষ বাসিন্দাকে খাবার পানি সরবরাহ করা যেতে পারে। এর নকশা ২০২৪ সালের শেষের দিকে সম্পন্ন হয়েছিল এবং বাজেট অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সরকার ১৭০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পরিপূরক হিসাবে অতিরিক্ত বিনিয়োগকারী খুঁজছে। পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার একজন সিনিয়র গবেষক এবং আফগান পানি ও পরিবেশ নেটওয়ার্কের সদস্য ডঃ নাজিবুল্লাহ সাদিদ জানাচ্ছেন,
‘আমাদের বাজেটের জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকার সময় নেই। আমরা এমন এক ঝড়ের কবলে পড়েছি যেখান থেকে অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে আর কোনও প্রত্যাবর্তন সম্ভব হবে না।’
গবেষকের কথায়, ‘কাবুলের বাসিন্দারা এমন এক পরিস্থিতিতে আছেন যেখানে তাদের খাবার বা পানির মধ্যে একটি বেছে নিতে হচ্ছে। তবুও, আমরা যে স্থানীয়দের সাথে কথা বলেছি তারা এখনও একটি টেকসই সমাধানের জন্য তাদের কাছে যা আছে তা বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক। যে প্রকল্পটি সবচেয়ে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলবে তাকে অগ্রাধিকার দিতে তারা প্রস্তুত। আমাদের কেবল কোথাও থেকে শুরু করতে হবে।’
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান
পাঠকের মতামত
সিন্ধু নদ কাবুলের পানি সংকট মোকাবেলা করতে সহায়ক হতে পারে, যদি পাক আফগান যৌথ ভাবে ইসলামের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস পুনঃরুদ্ধারে একমত হয় এবং তদনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
Bangladesh could help Kabul in this sector.