অনলাইন
রূপান্তরকামী দম্পতির সন্তানদের জন্মসনদে ‘বাবা’ কিংবা ‘মা’-র পরিবর্তে লেখা যাবে ‘অভিভাবক'
মানবজমিন ডিজিটাল
(১ দিন আগে) ৩ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩:২২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:২৮ পূর্বাহ্ন
রূপান্তরকামী দম্পতির সন্তানদের জন্মশংসাপত্রে ‘বাবা’ কিংবা ‘মা’র পরিবর্তে ‘অভিভাবক’ (প্যারেন্ট) হিসেবে নাম নথিভুক্ত করা যাবে। এমনটাই রায় দিয়েছে ভারতের কেরালা রাজ্যের হাইকোর্ট। বিচারপতি জিয়াদ রহমান এএ-এর অবকাশকালীন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। কোঝিকোড় পুর কর্তৃপক্ষকে এক রূপান্তরকামী দম্পতির সন্তানের জন্মশংসাপত্রে ‘বাবা’ কিংবা ‘মা’ শব্দ দু’টিকে লিঙ্গনিরপেক্ষ শব্দ ‘অভিভাবক’ দিয়ে প্রতিস্থাপনের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। ওই মামলায় আবেদনকারীদের নাম জাহাদ এবং জিয়া পাভাল।
জাহাদ একজন রূপান্তরকামী পুরুষ। জিয়াও একজন রূপান্তরকামী নারী। সম্ভবত এরাই কেরালার প্রথম রূপান্তরকামী দম্পতি, যারা স্বাভাবিক পদ্ধতিতে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সন্তানের জন্ম দেন জাহাদ। অবশ্য তার আগে থেকেই জাহাদের সন্তানধারণের খবরটি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল সারা দেশে। কারণ ভারতের রূপান্তরকামী সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন ঘটনা ছিল প্রথম। কোঝিকোড় কর্পোরেশন যখন শিশুটির জন্ম সনদ জারি করে, তখন জাহাদকে ‘মা (রূপান্তরকামী )’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয় এবং জিয়া পাভালের নাম ‘পিতা (রূপান্তরকামী)’ রাখা হয়।
তবে দম্পতি সার্টিফিকেটে ‘মা’ এবং ‘বাবা’-এর লিঙ্গগত পরিচয় চাননি। বরং, দম্পতি চেয়েছিলেন যে, ভবিষ্যতে তাদের সন্তান যাতে বিভ্রান্তি বা বৈষম্যের সম্মুখীন না হয় সেজন্য উভয়কেই কেবল ‘অভিভাবক’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হোক। তাদের আবেদনে সম্মতি দিয়েছেন বিচারপতি জিয়াদ রহমান। আদালতে তাদের হয়ে সওয়াল করেন কেরালার প্রথম রূপান্তরকামী আইনজীবী পদ্মা লক্ষ্মী। তিনি আদালতে যুক্তি দেন, জাহাদ ও জিয়ার অনুরোধ মেনে নিতে অস্বীকার করা সংবিধানের ১৪তম অনুচ্ছেদের অধীনে তাদের সমানাধিকারের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে।
সংবিধানের ১৪তম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘ব্যক্তি’ শব্দের অর্থ কেবল পুরুষ বা নারীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একজন রূপান্তরকামীও সব রকম অধিকার এবং আইনি সুরক্ষার অধিকারী। সে কথাই হাইকোর্টকে মনে করিয়ে দেন পদ্মা লক্ষ্মী। শেষমেশ জাহাদ ও জিয়ার পক্ষেই রায় দেয় হাইকোর্ট। দম্পতির দাবি ছিল, জাহাদ জৈবিক উপায়ে সন্তানের জন্ম দিলেও দীর্ঘ দিন ধরে ‘পুরুষ’ হিসাবেই নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন এবং সেই মতোই জীবনযাপন করেছেন। ফলে তাদের ‘মা’ ও ‘বাবা’ হিসাবে নিজেদের চিহ্নিত করতে বাধ্য করা কেবল তাদের অস্তিত্বের লড়াইয়ের বিরোধিতাই নয়, বরং পরবর্তী সময়ে তাদের সন্তানকে স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে আধার, প্যান কার্ড এবং পাসপোর্টের মতো সরকারি নথি তৈরির ক্ষেত্রেও জীবনের প্রতিটি পদে বিভ্রান্তি এবং বৈষম্যের শিকার হওয়ার পথে ঠেলে দেওয়া। এতে শুধু জাহাদ ও জিয়ার মৌলিক অধিকারই লঙ্ঘিত হবে না, বরং তাদের সন্তানেরও মৌলিক অধিকার খর্ব হবে। দু’পক্ষের যুক্তি শুনে আদালতের পর্যবেক্ষণ, প্রত্যেক রূপান্তরকামী ব্যক্তির তার নিজস্ব লিঙ্গপরিচয় নিয়ে বাঁচার অধিকার রয়েছে।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে