খেলা
সিটি অধ্যায়ের ইতি ডি ব্রুইনার
স্পোর্টস ডেস্ক
২২ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগে জায়গা পাওয়া নিয়ে সংশয় দূর হওয়ার রাতেই ঘরের মাঠে শেষ ম্যাচ খেলে ফেললেন কেভিন ডি ব্রুইনা। ফলে ম্যানচেস্টার সিটির খুশির সেই আবহে বেজে উঠলো বিদায়ের রাগিনীও। প্রিয় শিষ্যকে কান্নাভেজা চোখে বিদায় জানান কোচ পেপ গার্দিওলা। সিটিজেন বসের কাছে ব্রুইনার ক্লাব ছেড়ে যাওয়া অপূরণীয় ক্ষতি। আর বিদায় বেলা ডি ব্রুইনা জানান, অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের ম্যাচে মঙ্গলবার বোর্নমাউথকে ৩-১ গোলে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকার তিন নম্বরে উঠে আসে ম্যানচেস্টার সিটি। মৌসুম আর একটি ম্যাচ বাকি তাদের, রোববার সেই ম্যাচটি ফুলহ্যামের মাঠে। ৬৭তম মিনিটে মাতেও কোভাচিচ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ার মিনিট দু’য়েক পর দলীয় ভারসাম্যের স্বার্থে ডি ব্রুইনেকে তুলে নেন কোচ গার্দিওলা। দর্শকদের তুমুল অভিনন্দনের জবাব দিয়ে, সতীর্থ ও প্রতিপক্ষের ভালোবাসার ছোঁয়া নিয়ে আস্তে আস্তে মাঠ থেকে বের হন ব্রুইনা। ম্যাচের পর গোটা দল ‘গার্ড অব অনার’ দেয় সিটির অনেক সাফল্যের নায়ককে। এদিন বিশেষ একটি ভিডিও দেখানো হয় স্টেডিয়ামের বড় পর্দায়, যেখানে ডে ব্রুইনকে স্তুতিতে ভাসান ম্যানচেস্টার সিটির নানা সময়ের তারকা সার্জিও আগুয়েরো, রাহিম স্টার্লিং, রিয়াদ মাহরেজ, ফের্নান্দিনিয়ো, ভিনসেন্ট কোম্পানি, জো হার্ট ও লেরয় সানে। ভিডিওটি দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে গার্দিওলা বলেন, ‘সবাই ছিল সেখানে, খুবই দারুণ। ১০ বছর, অনেক অনেক ম্যাচ, অনেক শিরোপা, অসাধারণ অনেক মুহূর্ত। তার প্রতি ভালোবাসা কতোটা ছিল, সেটির কিছুটা আজকে ফুটে উঠেছে। দিনটি বেদনার। তার অভাব অবশ্যই অনুভূত হবে। অন্যদিকে, দিনটি তার জন্য দারুণ যে দলের জয়ে অবদান রাখতে পেরেছে আরও একবার, যে জয়টি আমাদের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ।’ ১০ বছরে ম্যানচেস্টার সিটিতে ১৬টি ট্রফি জিতেছেন ডি ব্রুইনা। এই এক দশকে শেষ ৮ মৌসুমে ৬টি লীগ শিরোপাই জিতেছে সিটি। যেখানে ৪টি শিরোপা একটানা জিতেছে ক্লাবটি। আর এই ৬ শিরোপা জয়ের অন্যতম নায়ক ডি ব্রুইনা। ৬টি প্রিমিয়ার লিগ ছাড়াও যিনি একটি চ্যাম্পিয়নস লীগ, দু’টি এফএ কাপ এবং পাঁচটি লীগ কাপ শিরোপা জিতেছেন। সিটির হয়ে ডি ব্রুইনার অভিষেক হয় ২০১৫ সালে সেপ্টেম্বরে। লীগে ক্লাবটির হয়ে সবমিলিয়ে ২৮৪ ম্যাচে করেছেন ৭২ গোল সঙ্গে আছে ১১৯টি গোলে সহায়তাও। আর সবমিলিয়ে সিটির হয়ে ৪২১ ম্যাচে তার গোল ১০৮টি এবং অ্যাসিস্ট ১৭৭টি। বছরের পর বছর তিনি ছিলেন মাঝমাঠের প্রাণভোমরা, যিনি দলকে জীবন্ত রাখতেন, এক সুতোয় গাঁথতেন। এমন একজনকে হারিয়ে সিটিজেন বস বলেন, ‘কিছু ফুটবলার আছে, যাদের বিকল্প হয় না। খুবই কঠিন বিকল্প কাউকে পাওয়া। ব্যাপারটি শুধু কিছু গোল বা অ্যাসিস্ট কিংবা অবিশ্বাস্য কিছু মুহূর্ত নয়, এটি হলো সংযোগের ব্যাপার, যেভাবে তারা খেলে, লোকে যা ভালোবাসে, তেনমন কিছুই বছরের পর বছর ধরে ক্লাবকে দিয়ে যাওয়া।’ এই মৌসুম দিয়েই ম্যানচেস্টার সিটিতে চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ডে ব্রুইনের। প্রিয় ক্লাবের কাছ থেকে নতুন চুক্তির প্রস্তাব না পাওয়ায় বিস্ময় ও আক্ষেপের কথাও বলেন তিনি। তবে বিদায়ের সময় আবেগে ভারাক্রান্ত হন এই বেলজিয়ান। তিনি বলেন, ‘কিছুটা অদ্ভুত লাগছে। অবিশ্বাস্য এক ভ্রম ছিল এটি। আমি চেয়েছি লোকের মনে আনন্দ জোগাতে, আগ্রাসী ফুটবল খেলতে, সৃষ্টিশীলতা মেলে ধরতে। মাঠে আমি এমনই থাকতে চাই এবং উপভোগ করতে চাই। এত বছর ধরে ঘাম ঝরানো ও ক্লাবের জন্য কিছু করতে পারা ছিল দারুণ। আমি দারুণ গর্বিত।’ ঘরের মাঠে বিদায়ের আয়োজন নিয়েও দারুণ গর্বিত ব্রুইনা বলেন, ‘গোটা স্টেডিয়াম মিলে আমাকে ও আমার পরিবারের পাশে থাকছে, এতেই সবকিছু ফুটে ওঠে। ৫০ হাজার মানুষের কাছ থেকে এমন বিদায় ক’জন পায়? অবিশ্বাস্য ছিল এটি।’