বিশ্বজমিন
রক্তে রঞ্জিত পাক-ভারত সীমান্ত, নিহত শিশুদের পরিবারে হাহাকার
মানবজমিন ডেস্ক
(১৭ ঘন্টা আগে) ২১ মে ২০২৫, বুধবার, ৫:৩২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৬ পূর্বাহ্ন

ছবির মধ্যে ছিল এক শিশুর হাসিমুখ। মাথায় গোলাপি উলের টুপি। গলায় জড়ানো মাথার ওড়না। বলছি পাক-ভারত উত্তেজনার সময় নিহত মরিয়মের কথা। পরিবারের সঙ্গে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বাস করতো শিশুটি। গ্রামের নাম সুখা কাথা। এটি পুঞ্চ জেলার একটি গ্রাম। মরিয়মের বাবার নাম জাভেদ ইকবাল। বয়স মাত্র পাঁচ বছর। যে ছবিটির বর্ণনা দেয়া হল সেটি মাত্র এক মাস আগেই তোলা হয়েছিল। এখন শিশুটি আর বেঁচে নেই। ৭ মে, আকস্মিক এক বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছে শিশু মরিয়ম। বাড়ির উপর এসে পড়া একটি শেলের আঘাতে চিরদিনের জন্য পৃথিবী ত্যাগ করতে হলো তাকে।
সেদিন সকালে গোটা গ্রামটাই কেঁপে উঠেছিল। চারদিক শুধু গোলাগুলির শব্দ। যাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সারা গ্রামের মানুষ। অন্য সকলের মতো প্রাণে বাঁচতে পরিবার নিয়ে লুকিয়েছিলেন ইকবাল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সামরিক বাহিনীর ছোড়া বোমার শেল ঢুকে পড়ে আশ্রয়স্থলে। এতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় মরিয়মের দেহ। জাভেদ তৎক্ষণাৎ এক বন্ধুকে ফোন করেন। তবে তখনও গোলাবর্ষণ অব্যাহত থাকায় অ্যাম্বুলেন্স এসে আবার ফিরে যায়। একাধিকবার চেষ্টা করেও ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। পরে হাসপাতালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে নিথর হয়ে যায় মরিয়মের দেহ।
শুধু মরিয়ম নয়। একই দিনে নিহত হয়েছে আরও কয়েকজন শিশু। যাদের একজন ভিহান কুমার। মাত্র ১৩ বছরের এক কিশোর। গোলাগুলির সময় পালাতে গিয়ে গাড়িতেই প্রাণ হারান। বাবা-মায়ের সঙ্গেই ছিলেন কিশোরটি। একটি শেল সরাসরি তাদের গাড়িতে আঘাত করে। যাতে তার মাথা ফেটে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। আরও করুণ এক গল্প শুনিয়েছেন আরুশা খান। তার যমজ সন্তান- জাইন ও উরবা। বাড়ির সামনেই যাদের প্রাণ গেছে। দৌঁড়ে গাড়িতে ওঠার সময় পায়নি তাদের পরিবার। এর মধ্যেই বোমার শেল এসে কেড়ে নিয়ে গেছে শিশু দুটির প্রাণ। তাদের উদ্ধার করতে এসেছিলেন মামা। কিন্তু শেলের আঘাতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় উরবা। আর জাইনকে পরে পাশের এক বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এই ঘটনার পর পুঞ্চের অনেক গ্রাম ফাঁকা হয়ে গেছে। সুখা কাথা গ্রাম এখনও নির্জন। বসত বাড়িগুলো জনমানবহীন হয়ে পড়েছে। এখনও দরজা-জানালা খোলা। ঝড়ো বাতাসে পর্দা উড়ছে। তবে সেখানে কেউ নেই। এখনও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর সংঘাতের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেনি গ্রামটির মানুষ। গোলাগুলির ভয় এখনও তাদের তাড়িয়ে বেড়ায়। অনেকেই বলছেন- এত ভয়াবহতা এর আগে কখনও দেখেনি তারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভূপ্রকৃতির কারণে ভারতীয় গ্রামগুলো বেশি ঝুঁকিতে। কারণ পাকিস্তানের চেক পোস্টগুলো পাহাড়ের উপরে। আর ভারতীয় বসতি নিচের উপত্যকায়। ফলে গোলাগুলিতে ভারতের অংশেই বেশি ক্ষতি হয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, শিশুদের ওপর হামলা যুদ্ধাপরাধ। যুদ্ধের নামে এমন হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন। এতে নির্দোষ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়।
সূত্র: আল জাজিরা।