ঢাকা, ২১ মে ২০২৫, বুধবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

রাত হলেই মাঠে নামেন স্বপন

ইমরান হোসেন সুজন, নবাবগঞ্জ (ঢাকা) থেকে
১৮ মে ২০২৫, রবিবার

ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার শিকারীপাড়া ইউনিয়নের বিষমপুরে রাত হলেই তৎপর হয়ে উঠছে মাটিখেকোরা। স্থানীয় মো. স্বপন মিয়া নামে এক মাটিখেকো বিষমপুর জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানের মাটি ভরাটের কাজ নেন। এরপর কৌশলে মাটি বিক্রি শুরু করেন তিনি। ইটভাটার পাশাপাশি মাটি বিক্রি করছেন বসতবাড়িতে। এলাকাবাসী জানান, স্বপন একজন চিহ্নিত মাটিখেকো। তিনি সব আমলেই দেদাচ্ছে মাটির ব্যবসা করেছেন। আগে আওয়ামী লীগের নেতাদের ম্যানেজ করে মাটি কাটতেন, এখন অন্য দলের নেতাদের ম্যানেজ করে মাটি কাটেন। জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষি জমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এ ছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমি থেকে মাটি সংগ্রহ বা ভারী যানবাহনে পরিবহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারীদের জন্য জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্ত অসাধু চক্র এসব আইন তোয়াক্কা না করেই কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে বড় বড় ট্রাক ও মাহেন্দ্রা দিয়ে বিক্রি করছে। সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, কবরস্থান পার্শ্ববর্তী নিচু জমি থেকে দেদাচ্ছে মাটি কাটা হচ্ছে। আর লাইন ধরে মাহেন্দ্র এসে ভরাট করে মাটিগুলো নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় এওবি ইটাভাটায় এবং বসতবাড়িতে।

 সেখানে কথা হয় স্লিপ কাটার রানা নামে এক যুবকের সঙ্গে। তিনি বলেন, স্বপন মিয়া তাকে বেতন দিয়ে শুধু হিসাব রাখার জন্য রেখেছে। তবে অনুমতি আছে কিনা তিনি জানেন না। জানা যায়, নবাবগঞ্জে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১৭,৫১১ হেক্টর। যার মধ্যে এক ফসলি জমি ৬৯৯৩ হেক্টর, দুই ফসলি জমি ৮৬২৮ হেক্টর, তিন ফসলি জমি ২১৮১ হেক্টর। এ ছাড়া তিনের অধিক ফসলি জমির পরিমাণ ২৫ হেক্টর ও আবাদযোগ্য পতিত জমি ২৪৫ হেক্টর। কিন্তু বর্তমানে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ বিষা কৃষিজমি কথিত মাটি ব্যবসায়ীরা বিনষ্ট করছে। পুকুর খনন ও মাছ চাষের কথা বলে মাটি তুলছে তারা- উদ্দেশ্য মাটি বিক্রি করা। স্থানী জানান, গত কয়েকদিন ধরে আমাদের গ্রামের কেউই রাতে ঘুমাতে পারি না।

 প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় গ্রামের ভেতর দিয়ে মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচল। শেষ হয় ভোরে। কালাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, মূলত তাকে (স্বপনকে) কবরস্থান ভরাটের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্ত তিনি ২ ট্রাক মাটি কবরস্থানে ফেললে ২০ ট্রাক ফেলে পার্শ্ববর্তী ইটভাটায় আর বসতবাড়িতে। এটা আসলে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দেয়ার একটা কৌশল। স্বপন চিহ্নিত মাটিখেকো। নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসমা জাহান বলেন, এভাবে কৃষি জমির মাটি বিক্রি করলে ধীরে ধীরে কৃষি জমির সংখ্যা কমে যাবে। মাটি কাটার সময় উপরের ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত যে টপ সয়েল অংশ রয়েছে কেটে নেয়ায় মাটির উর্বরতাও কমে যায়। এখন কৃষি জমির মাটি কাটা বন্ধে ব্যবস্থা না নিলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মাটি ব্যবসায়ী স্বপন মিয়া বলেন, আমি পুকুর খনন করছি তাই অনুমতি প্রয়োজন হয়নি। এর বেশি তিনি কিছু বলতে রাজি হয়নি। এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আসিফ রহমান বলেন, ফসলি জমির মাটি কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কেউ এধরনের কাজ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত

মাননীয় সরকার, এত অথর্ব কেন আপনারা?

জনতার আদালত
১৮ মে ২০২৫, রবিবার, ৫:০১ পূর্বাহ্ন

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status