ঢাকা, ২১ মে ২০২৫, বুধবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

কালীগঞ্জে অর্ধশত বিঘা নদীর জমি আওয়ামী লীগ নেতার দখলে

আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে
২১ মে ২০২৫, বুধবার
mzamin

কালিগঞ্জের ভৈরব নদীর প্রায় অর্ধশত বিঘা জমি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার পরিবার। ভৈরব নদী এখন শুধুই একটি জলপ্রবাহ নদী নয়, এটি এখন রীতিমতো একটি দখলদার চক্রের কবলে পড়া সম্পদে পরিণত হয়েছে। উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শমসের এবং তার দুই ভাই শফিকুল শমসের ও তরিকুল শমসের দীর্ঘদিন ধরে অর্ধশত বিঘারও বেশি নদীর জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা এলাকার কৃষকদের নদীতে গোসল করতে পর্যন্ত বাধা দিচ্ছেন। নদীর পাড় ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে পাকা প্রাচীর, যাতে সাধারণ মানুষ নদীমুখী হতে না পারে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এটা কোনো সাধারণ জমি দখল নয়। বরং এটি একটি সন্ত্রাসী সংঘবদ্ধ ও রাজনৈতিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের প্রকাশ্য তাণ্ডব। সরজমিন দেখা যায়, ঘোপপাড়া ও সাদিকপুর গ্রামের নদীর দু’পাড় জুড়ে বিভিন্ন আবাদ করা হয়েছে। কিন্তু এটা কোনো সাধারণ কৃষকের নয়, প্রভাবশালী সন্ত্রাসী রাজনৈতিক একটি পরিবারের কব্জায়। স্থানীয়রা বলেন, স্বৈরশাসক আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রছায়ায় রাশেদ শমসের ও তার ভাইয়েরা বছরের পর বছর ধরে এই জমিগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে দখল করে রেখেছে। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেই হুমকি-ধমকি, মামলা ও বিভিন্নভাবে  হয়রানি করা হয়।
স্থানীয় কৃষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নদীর দু’পাড় পুরোই তারা দখল করে রেখেছে। আমরা নদীতে নামতেই পারি না। ব্রিজের পাশে দেয়াল তুলে দিয়েছে, যেন এলাকার সাধারণ কৃষকরা একফোঁটা পানিও নিতে না পারে। এটা কি কোনো স্বাধীন দেশে সম্ভব যে নদীর পানি মানুষ ব্যবহার করতে পারবে না? স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম সরদার বলেন, তারা শেখ মুজিবের মুর‌্যাল বানিয়ে, কলেজের নাম ব্যবহার করে নদী ও সরকারি জমি দখল করে নিচ্ছে। কলেজ সরকারি করার পেছনেও ছিল রাজনৈতিক প্রভাব। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এখন আবার এলাকার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন করে দখল শুরু করেছে শফিকুল শমসের। এমনকি সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত জমিও রেহাই পাচ্ছে না এই চক্রের হাত থেকে। 
স্থানীয় ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, আমার দলিল মূলে কেনা জমির নিচে নদীর জায়গা ছিল। সেটি দখল করে সেখানে ছাতা স্থাপন করেছে শফিকুল। এখন সে আমার জমিতেও প্রাচীর তুলছে। আমি আদালতে গিয়েছি, ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। তবুও নির্মাণকাজ বন্ধ করেনি। এটাই কি আইনের শাসন? অভিযোগের বিষয়ে রাশেদ শমসেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে শফিকুল শমসের মুঠোফোনে ছাতা নির্মাণের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এটা স্থায়ী কিছু না। চাইলে ভেঙে দেবো। নজরুল ইসলামের জমি দখলের অভিযোগ তিনি মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন। ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, নদীর জায়গা দখল করে ব্যক্তিগতভাবে চাষাবাদ করা বা কোনো স্থাপনা নির্মাণ করার সুযোগ নেই। আমরা দ্রুতই এলাকায় গিয়ে তদন্ত করে দখলদারদের তালিকা করবো। যদি দখল হয়েই থাকে তবে দ্রুতই তা উচ্ছেদের ব্যবস্থা নিবো।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status