বাংলারজমিন
হেলে পড়া সেতু যেন মৃত্যুফাঁদ
সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
২১ মে ২০২৫, বুধবারমানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় গাজীখালী নদীর ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বেইলি ব্রিজ এখন ভয়াল মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সেতু নির্মাণের পর থেকে সংস্কার না করায় সেতুটি ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছে। এ মৌসুমের ১ম বৃষ্টিতে সেতুটি একপাশ ৫ ফুট মাটির নিচে ডেবে গিয়ে হেলে পড়েছে। সংযোগ সড়ক থেকে সেতু বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রায় অর্ধশতাধিক এলাকার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন। এদিকে সেতুটি প্রায় ১ মাস ধরে ধসে পড়ে যাওয়ার পরও একটি সতর্কতামূলক ব্যানার টাঙানো ছাড়া কিছুই করেননি। অপরদিকে সংস্কার করে দেয়ার পরও সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাফিলতি ও কাজ শুরু না করলে, সাটুরিয়া-গোলড়া সড়ক অবরোধ করার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সরজমিন দেখা যায়, উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত গাজীখালী নদীর ওপর বিকল্প সেতু দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে থাকেন। সাটুরিয়া, ধামরাই ও নাগরপুরের মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন সাটুরিয়া ৫০ শষ্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার হাটের দিন কয়েক হাজার মানুষ এ সেতু দিয়ে চলাচল করে থাকেন। অনেক শিশু শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত সেতু পার হওয়ার সময় গর্তে পড়ে আহত হয়েছেন। সাটুরিয়া হাট হয় বৃহস্পতিবার ও রোববার হরগজের হাটের দিন সাটুরিয়া বাজারের সঙ্গে মানিকগঞ্জ সড়কের সংযোগ হয়েছে আরসিসি সেতু দিয়ে। কিন্তু দুই হাটের দিন যানবাহনের এত চাপ পড়ে যে, তখন এই বেইলি সেতু দিয়ে বিকল্পভাবে দ্রুত পার হতে পারে। তাছাড়া সাটুরিয়া বাজারের পশ্চিম অংশের প্রায় ২ শতাধিক দোকানী ও এর ক্রেতারা এই বিকল্প সেতু ব্যবহার করলে ৩০ মিনিট সময় কম লাগে। এতে এই সেতুটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সড়ক ও জনপথ বিভাগ সতর্কবাণী দিয়ে ব্যানারে লিখেছে- সাবধান ক্ষতিগস্ত বেইলি সেতু। এই সেতু দিয়ে জনসাধারণের চলাচল নিষেধ। আদেশক্রমে নির্বাহী প্রকৌশলী সড়ক ও জনপথ বিভাগ মানিকগঞ্জ। একটি সাইনবোর্ড দিয়েই দায় সেরেছেন সেতু কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে গাজীখালী নদীর ওপর সাটুরিয়া বাজার সংলগ্ন একমাত্র ব্রিজ নির্মাণ করার প্রকল্প পাশ হয়। ২০১৩ সালে ব্রিজটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তখন এই বেইলি ব্রিজটি বিকল্প সেতু হিসেবে স্থাপন করা হয়। বেইলি ব্রিজ হয়ে ওঠে বিকল্প ও হাসপতাল ও কলেজ ও একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহজ মাধ্যম। ফলে ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর জনসাধারণের জন্য নতুন ব্রিজ খুলে দেয়া হলেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় এটি আর অপসারণ করতে বাধা দেয় স্থানীয়রা।
গত ৩০শে এপ্রিল সরজমিন দেখা যায়, বিকল্প রাস্তার ওপর স্টিলের বেইলি সেতু তিনভাগের একাংশ ৫ ফুট মাটির নিচে ডেবে কাত হয়ে গেছে। সেতুর দুইপাশের একপাশ সংযোগ সড়ক থেকে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গাজীখালী নদীর ওপর মূল ব্রিজ দিয়ে বেশির ভাগ সময় গাড়ি চলাচল করে থাকে। আর বিকল্প বেইলি সেতু দিয়ে সাধারণ মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করে থাকেন সময় বাঁচানোর জন্য। ওই সেতুর সঙ্গেই সাটুরিয়া উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। চারটি প্রাইভেট ক্লিনিক রয়েছে। এছাড়া উপজেলার কৃষকদের উৎপাদিত ফসল হাটে বেচাকেনা করা হয় ওই বিকল্প সেতু দিয়েই।
সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সেতুর সব পাটাতন আগলা হওয়ায় রাতের বেলায় চলাচল করার সময় পথচারীরা অনেকে গর্তে পরে আহত হচ্ছে। জনসাধারণের কথা চিন্তা করে আমরা পাটাতনগুলো নিজ খরচে ঝালাই দিয়ে আটকিয়ে দিয়েছি। বিশেষ করে হাসপাতাল আসা যাওয়া এ সেতু দিয়ে সহজ হওয়ায় রোগীরা বেশির ভাগ সময় ক্ষতিগ্রস্ত সেতু দিয়েই পারাপার হয়।
উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বাশার সরকার বলেন, এ সেতুটি সংস্কার করার জন্য গত ২৯শে এপ্রিল আমরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী বরাবর লিখিত আবেদন করি। তখন আমাদের আশ্বাস ও দিয়েছিল। কিন্তু এখন কোনো আপডেট পাচ্ছি না।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে জনসাধারণ মানুষকে চলাচল নিষেধ করা হয়েছে। এটি ছিল একটি বিকল্প সেতু। এটি একাধিকবার অপসারণের জন্য গেলেও তা জনসাধারণের অনুরোধ ও বাধার কারণে সেতুটি অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। পাশেই একটি আরসিসি সেতু আছে বিধায় এখানে এই বেইলি সেতুটি সংস্কার ও নতুন করে নির্মাণ করার মতো বরাদ্দ আমাদের কাছে নেই। আমি আবারও বলছি পাশের আর সিসি সেতু দিয়ে চলাচল করার জন্য জনসাধারণকে অনুরোধ করছি।