বাংলারজমিন
ইব্রাহিমের ডাক শুনলেই ছুটে আসে বনের পাখিরা
মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি
১৪ আগস্ট ২০২২, রবিবার
নাম ইব্রাহিম শেখ (১৩)। অতি অল্প সময়েই বনের পাখিদের সঙ্গে গড়ে উঠেছে তার দারুণ সখ্যতা। অভিনব কায়দায় মুখ দিয়ে শীষ বাজিয়ে ডাক দিলেই বুঝতে পারে পাখিদের ডাকা হচ্ছে। কাছে কিনারে, কিংবা গাছের ডালে থাকলেই মুখের শিসের শব্দ শুনলেই ছুটে আসে বনের পাখিরা। উড়ে এসেই ৪-৫টি একসঙ্গে বসে ইব্রাহিমের কাঁধ, মাথা ও হাতে এসে বসে। ইব্রাহিমের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের বাঔজানি গ্রামে। তার বাবার নাম ইসরাফিল শেখ। পাখির সঙ্গে অভিনব সখ্যতার খবর এখন এলাকার মানুষের মুখে মুখে। অনেকেই দেখতে আসেন ইব্রাহিম ও তার পাখিদের। ইব্রাহিমের প্রতিবেশী আব্দুল্লাহ জানান, পাখির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে শিশু ইব্রাহিমের। পাখি তাকে অনুসরণ করে। আনুমানিক দশটি শালিক পাখি আছে এমন। বনের এই পাখি সব সময় তার সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। পাখিকে খাবার দেয়, যত্ন নেয়। ঝড়ে বাসা ভেঙে গেলে পাখির বাচ্চা নিয়ে বাড়িতে রেখে সেবা করে সুস্থ করে বনে ফিরিয়ে দেয় সে। ডাক দিলেই চলে আসে। ইব্রাহিম শেখ জানান, এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে বড়। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে স্কুলকে বিদায় বলেছে। পড়াশোনা না হওয়ার পেছনেও আছে এই পাখি প্রেম। ছোটবেলা থেকেই পাখির প্রতি তার ভালোবাসা। বছরখানেক আগে ঝড়ে বাসা ভেঙে আহত দুটি শালিক পাখির বাচ্চা পড়ে পায়। অনেক সেবা যত্ন করে সুস্থ ও বড় করে তোলে সে। পাখি দুটি পোষ মেনে যায়। সারা দিন খেয়ে দেয়ে আবার বাড়ি ফিরে আসে। ডাকলে চলে আসে। সবসময় তার পেছন পেছন হেঁটে বেড়ায়। এই পাখির দেখাদেখি আরও পাখি তার কাছে আসতে থাকে। ভালোবাসলে ও ভীতি দূর করতে পারলে পাখিরা নিরাপদ মনে করে। এভাবে যেকোনো পাখি কাছে ডেকে আনা সম্ভব। পিতা ইসরাফিল শেখ বলেন, পাখির জন্য ছেলের পড়ালেখা হলো না। সারা দিন পাখির পেছনে ছুটে বেড়ায়। পাখি তার ধ্যান জ্ঞান, পাখি তার নেশা। পাখিকে খাবার দেয়, যত্ন করে। পাখির সঙ্গে কথা বলে। পাখির সঙ্গে কথা বলার ধরন দেখে মনে হয় পাখির সব ভাষা বোঝে সে। মা মোরিনা বেগম বলেন, ছেলেটির পাখি প্রেমে একসময় বিরক্ত লাগতো। বকাবকি করতাম। এখন আর কিছু বলি না। পাখির খাবার কিনতে টাকা দিতে হয় নিয়মিত। মহম্মদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ বিপ্লব রেজা বিকো মানবজমিনকে বলেন, শিশু ইব্রাহিম শেখের পাখির প্রতি এই ভালোবাসা মানুষকে অবাক করে। বনের পাখিকে ডেকে কাছে আনা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। পাখির সঙ্গে এই শিশুর বিরল সখ্যতার গল্প মানুষের মুখে মুখে ফেরে।