বাংলারজমিন
রাবিপ্রবি’র ভবন নির্মাণকাজে কোটি টাকা চাঁদা দাবি
আলমগীর মানিক, রাঙ্গামাটি থেকে
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবারপাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) চলমান একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণকাজ থেকে কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছে। রোববার সকালে ক্যাম্পাসের ভেতরে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের একটি সশস্ত্র দল প্রবেশ করে চলমান উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দেয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্তৃপক্ষ। এর আগেও আরেকটি গ্রুপ সশস্ত্র অবস্থায় এসে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে জেএসএস নামক সেই গ্রুপটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আলোচনার মাধ্যমে সোয়া কোটি টাকা চাঁদা দিয়ে কাজ শুরু করে। এ ঘটনার দুই মাস না যেতেই ফের অস্ত্রধারীরা চাঁদার দাবিতে কাজ বন্ধ করে দেয়।
জানা যায়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহযোগিতায় তিনতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণকাজটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে এমই-আরবি নামক জয়েন্টভেঞ্চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ ব্যয় আনুমানিক প্রায় ২৫ কোটি টাকা বলে জানা গেছে। রোববার সকাল সাড়ে ৭টায় একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী রাবিপ্রবি’র মূল ফটকে এসে একজনকে ভেতরে পাঠিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বলে। এ সময় ঠিকাদারকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। অন্যথায়, সশস্ত্র হামলা চালানোর হুমকি দেয়া হয়। এতে সকলেই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে কাজ বন্ধ রাখে। উক্ত কাজে নিরাপত্তাপ্রহরী জেফলিন চাকমা প্রতিবেদককে মুঠোফোনে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনার পর পরই চট্টগ্রাম থেকে উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার রাকিব রোববার দুপুরে রাবিপ্রবিতে এসে উক্ত উপজাতীয় গ্রুপদের সঙ্গে আলোচনা করে বিকাল থেকে ফের কাজ শুরু করেছেন বলে প্রতিবেদককে মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে সরকারকে প্রয়োজনীয় ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রাবিপ্রবিতে ভবন নির্মাণকাজটি বাস্তবায়ন করছি আমরা। কিন্তু শহরের অদূরে পৌরসভার ভেতরেই অনেকটা প্রকাশ্যে আমাদের থেকে চাঁদা আদায় করছে। পাহাড়ের সর্বোচ্চ একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে প্রকাশ্য দিবালোকে এ ধরনের ঘটনায় বিস্মিত হলেও নিজেদের জীবন-জীবিকার তাগিদে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তাদের শ্রমিক-ইঞ্জিনিয়ারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিজস্ব সোর্স স্বয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেই রয়েছে। সেখানে চাকরিরতদের মধ্যেই সন্ত্রাসীদের আত্মীয়স্বজনও রয়েছে। তাদের মাধ্যমেই সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরের সকল তথ্য অনায়াসেই পেয়ে যায়। সুনির্দিষ্ট তথ্যানুসারেই সময়-সুযোগ বুঝেই রাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে হুমকি দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। কয়েকদিন আগে রাবিপ্রবি’র কয়েকজন ভর্তি পরীক্ষায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের সহযোগিতাও করেছেন। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই অবহিত হয়েছে বলে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে ভিসি গ্রুপে সংশ্লিষ্টদের ভবিষ্যতের জন্য সতর্কও করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সেই সতর্কবার্তার স্কিনশট প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক আব্দুল গফুর বলেন, ভিসিসহ আমরা ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়গুলো নিয়ে রাঙ্গামাটির সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন থেকে শুরু করে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ধারাবাহিক যোগাযোগ রক্ষা করে রাবিপ্রবি’র উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। কোতোয়ালি থানা জানায়, এ বিষয়ে কেউ থানায় লিখিতভাবে কোনো অভিযোগ জানায়নি।