অনলাইন
বাজারে আগুন
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ের খরচ টানতে পারছেন না বাবা
সিদ্দিক আলম দয়াল, গাইবান্ধা থেকে
(১ বছর আগে) ১৩ আগস্ট ২০২২, শনিবার, ৩:৩১ অপরাহ্ন
চাল, ডাল, তেল, লবণ, আলু, বেগুন, লাউ, কুমড়া, পটোল, ঢেড়স, মাছ মাংস সবই আছে গাইবান্ধার সবগুলো বাজারে। একটা ডিমের দাম প্রতি পিস ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলার পিস ১০ টাকা, মরিচ ২শ’ টাকা কেজি আর বেগুন ৬০ টাকা, করোলা ৬০ টাকা কেজি। ফলে নিত্যপণ্য নিম্নআয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। দিন দিন দাম বৃদ্ধির ফলে ব্যবসায়ীদের সাথে ক্রেতাদের ঝুট ঝামেলা লেগেই আছে।
যেভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে হা হুতাশ শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ও থাকা-খাওয়ার খরচ টানতে পারছেন না বাবা মোস্তাফা। কিন্তু মুখ ফুটে রাত দিন হা হুতাশ করে চলছেন। ধার-দেনাও বেড়ে গেছে। চায়ের দোকানি রহিমা বেগম। বাড়িঘর কিছু নেই।
তিনি বলেন, স্বামী স্ত্রী দোকান চালাই। কাকডাকা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বেচা বিক্রি করে চালের দামটা আসে লাভের মধ্যে। বেশ কিছুদিন ধরে সবজিও কিনতে পারি না। আফসোস করে তিনি বলেন, আলু আর কতোই খাই। জঙ্গল থেকে কচু কাটি আনিয়া পাক করি খাই। আর এক বেলা ভাতের সাথে আলু ভর্তা। কোন মতো আছি পানি খায়া। কাচাবাজারে দোকানি সিদ্দিক মিয়া জানান, ভাই আমরা প্রতিদিন মাল কিনে বিক্রি করি। প্রতিদিন বাজারে সবজির দাম কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা কি করতে পারি। তিনি বলেন, সবজির দাম নিয়ে হরহামেশাই ঝগড়া বিবাদ হয় কাস্টমারের সঙ্গে।
এনজিও কর্মী মোকলেস মিয়া। সুন্দরগঞ্জে জমিজমা থাকলেও মাস্টার ডিগ্রি নিয়ে এনজিওতে ঢুকেছেন। বেতন পান ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু কর্মস্থল বাড়ি থেকে অন্তত ৩৫ কিলোমিটার দূরে। দুই ছেলে আর বউ বৃষ্টি বেগম থাকে শহরে। মোটরসাইকেলের তেল কিনতেই অর্ধেক যায়। যে হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তাতে আর শহরে থাকা যায় না। বউ ছেলেদের ভালোমন্দ খাওয়াতে পারি না। আগে বাড়ি থেকে চাল এনে কোনমতে সংসারটা টেনে নিতেন। কিন্তু মাস খানেক থেকে আর পারছি না। মাছ মাংসের দাম মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের অবস্থা আরো খারাপ।
স্কুল শিক্ষিকা নিপা চৌধুরী বললেন, আরে ভাই শুনে কি হবে আর বলেই বা কি হবে। কোন সমাধান তো দেখি না। শুধু দাম বেড়েই চলছে। এক মাস বেতন পেলে ২/১ কেজি গরুর মাংশ কিনে আনি। এক কেজি করে রান্না করি আর কয়েকদিন খাই। মাঝে ভর্তা আর ডাল ভাত। মিলন খন্দকার মিডিয়া কর্মী। তিনি থাকেন বাড়িভাড়া দিয়ে ব্রিজ রোডে। বলেন, ভাই মুশকিলে আছি। মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা হযরত আলী। কাটা কাপড়ের ব্যবস্থা করেন। সকালে দাম বেশি বলে বাজারে যেতে পারি না। আর শুক্রবার হলেতো কথাই নাই। সরকারি চাকরিজীবী আর দাদন ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যায় বাজারের ভালো মন্দ সব। বিত্তবান বাজার বলে পরিচিত শুক্রবার। সব বিত্তবানরা বড় বড় ব্যাগ আর চাকর বাকর সাথে নিয়ে বাজারে ঢোকেন আর বস্তা ভরে শাকসবজি মাছ মাংস কিনে নিয়ে যান।
সত্তুর বছরের সুশীলা বালা যুদ্ধের পর আকাল দেখেছেন। আর এখন আকাল পার করছি। ৭ টিনের ছাপড়া ঘরে শুয়ে থাকেন ভগবানের উপর ভর করে। সকালে ভিক্ষা করতে বের হন, শহর ঘুরে আবার বাড়ি ফেরেন। রাতে ভিক্ষের চালের ভাত জুটলেও তরকারি জোটে না। দুই চারটা আলু ভিক্ষে করে ভাতে সিদ্ধ করে ভর্তা করেন। রাতের ভাত পানি দিয়ে পান্তা করে দুপুর, সকাল চলে পানি পান্তায়। মরার আগে ইলিশ মাছ খাওয়ার আশা পূর্ণ হবে কিনা বলতে পারেন না সুশীলা বালা।