রাজনীতি
রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরাতে চাচ্ছে সরকার: তারেক রহমান
স্টাফ রিপোর্টার
(১০ ঘন্টা আগে) ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ৮:১২ অপরাহ্ন

অন্তর্বর্তী সরকার নানা ইস্যু সৃষ্টি করে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরানোর ক্ষেত্র হয়তো তৈরি করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শুক্রবার রাজধানীর ফার্মগেট খামারবাড়িতে বার্ক অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান ফোরামের উদ্যোগে ইস্টার পুনর্মিলনী ও শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন র্যাব সদস্যরা ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনকে গুম করে। আজ পর্যন্ত আমাদের এই সহকর্মীর হদিস আমরা পায়নি। স্বৈরাচারের শাসনকালে শুধু একজন সুমন নয়, ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে এরকম অসংখ্য সুমনদেরকে গুম, খুন ও অপহরণ করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে পলাতক স্বৈরাচারের সময় গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গুম হওয়া সুমনের বোনের নেতৃত্বে ২০১৪ সালে গঠিত হয়েছিল সামাজিক একটি সংগঠন ‘মায়ের ডাক’। অত্যন্ত আশ্চর্য এবং উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, গুম হওয়া সুমনকে ধরার জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় সুমনের বোনের বাসায় অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন!
তিনি বলেন, এখন প্রশাসন বলছে, তারা না কি সুমন সম্পর্কে জানতো না। তর্কের খাতিরে আমরা ধরে নিলাম যে, প্রশাসন সুমন সম্পর্কে জানতো না। কিন্তু এই যে পলাতক স্বৈরাচারের সময় একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি (আবদুল হামিদ) বিমানবন্দর দিয়ে চলে গিয়েছেন দেশ ছেড়ে। যেভাবে চলে গিয়েছেন, সেটাতে যদি আমরা মিলাই তাহলে দেখবো যে- ৫ই আগস্ট আরেকজন দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। ইনিও (আবদুল হামিদ) অনেকটা সেভাবে পালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু বলা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার তার এই দেশত্যাগের ব্যাপারে কিছুই জানে না! ঘটনাটি বৃহস্পতিবার এবং বৃহস্পতিবার থেকে আজকে (শুক্রবার) পর্যন্ত আমার যতজন মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে, প্রত্যেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে তাহলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানেটা কি?
এ প্রসঙ্গে তারেক রহমান আরও বলেন, অভিযোগ উঠেছে সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ করে অন্তর্বর্তী সরকার একদিকে হয়তোবা পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের নিরাপদে দেশত্যাগের সুযোগ করে দিচ্ছে। অন্যদিকে অত্যন্ত সুকৌশলে নানা ইস্যু সৃষ্টি করে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদবিরোধী আমরা যারা রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে ছিলাম, সেই দলগুলোর ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরানোর একটা ক্ষেত্র তৈরি করতে চাচ্ছে। পলাতক স্বৈরাচারের সহযোগীদেরও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রও হয়তো তৈরি করতে চাইছে। এই বিষয়গুলো ঘুরেফিরে মানুষের মনে প্রশ্ন তৈরি করছে।
তিনি আরও বলেন, একটি রাষ্ট্রে সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সদস্য হওয়া না হওয়ার উপর দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা কিন্তু নির্ভর করে না। দেশে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন না থাকলে কথিত সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘু, অর্থাৎ আপনি কিংবা আমিÑআমরা কেউ কিন্তু নিরাপদ নই। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বও নিরাপদ নয়। রাষ্ট্রে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনই নিশ্চয়তা দিতে পারে নাগরিকদের নিরাপত্তা। দেশে গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করার অন্যতম পূর্ব শর্ত হচ্ছে, জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সংসদ এবং সরকার প্রতিষ্ঠা।
তারেক রহমান আরও বলেন, জনগণের ভোটে তাদের কাছে দায়বদ্ধ একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপি প্রতিটি ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি এখনো তাদের সহযোগিতা ও সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। তবে সম্প্রতি যদি আমরা দেখি, বিভিন্ন কারণে অন্তর্বর্তী সরকার তাদের দায়িত্ব পালনে সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারছে কিনা, এনিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার মানুষের মধ্যে কিন্তু ধীরে ধীরে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এডভোকেট জন গমেজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, গাজীপুর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।