অনলাইন
এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার হুমকি ক্যাব’র
স্টাফ রিপোর্টার
(৫ ঘন্টা আগে) ৮ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৭:৫৫ অপরাহ্ন

গণশুনানি ছাড়া সরকারি এলপি গ্যাসের দাম বাড়িয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন লঙ্ঘন করেছে। কমিশনকে হয় পদত্যাগ করতে হবে, না হলে সরকারকে তাদের অপসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে ক্যাব তাদের অপসারণে কোর্টে যেতে বাধ্য হবে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় ক্যাবের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দিয়েছেন জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম। জ্বালানির সুবিচারে ক্যাব প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি ২০২৪ শীর্ষক ওই আলোচনায় ক্যাবের বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
ড. শামসুল আলম আরও বলেন, বিইআরসি শুধু আইন লঙ্ঘন করেছেন তাই নয়, তারা কোর্টের আদেশকেও অবমাননা করেছেন। কারণ গণশুনানির মাধ্যমে এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণের আদেশ হাইকোর্টের দেয়া। সুতরাং গণশুনানি ছাড়া সরকারি এলপিজির দাম বাড়িয়ে দিয়ে একইসঙ্গে কোর্টের অবমাননা করেছে কমিশন। যেহেতু তারা আইন লঙ্ঘন ও কোর্ট অবমাননা করেছেন, আমরা চাই তারা সসম্মানে নিজেরা পদত্যাগ করুক, না হলে সরকার তাদের অপসারণ করুক। আর যদি সরকার তাদের অপসারণ না করে তাহলে ক্যাব তাদের বিরুদ্ধে কোর্টে যাবে।
গত ৪ঠা মে গণশুনানি ছাড়াই দাম বাড়ল রাষ্ট্রীয় কোম্পানি এলপি গ্যাস লিমিটেডের, ১২.৫ কেজি এলপিজির দাম ৬৯০ টাকা বাড়িয়ে ৮২৫ টাকা নির্ধারণ করেছে। ডিসেম্বর মাসে ১২.৫ কেজির দাম ৬৯০ টাকা বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা করার প্রস্তাব করেছিল বাংলাদেশ এলপিজি লিমিটেড। তারপরেই ক্যাবের পক্ষ থেকে আল্টিমেটাম দেয়া হলো।
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা আরও বলেন, কমিশনের মনে রাখা উচিত ছিল এলপি গ্যাসের দাম প্রক্রিয়ায় তারা এমনিতেই প্রবেশ করেনি। তাদের বাধ্য করেছে ক্যাব। আমরা যখন হাইকোর্টে গিয়েছি, কোর্ট তখন আদেশ দিয়েছেন। আব্দুল জলিল কমিশন সেই আদেশ অমান্য করলে কোর্ট অবমানার রুল জারি করেন। পরে কোর্টে গিয়ে মাফ চেয়ে এসে এলপি গ্যাসের দামের গণশুনানি করেছে। অন্যদের উচিত ছিল বর্তমান কমিশনকে ওই ইতিহাস জানিয়ে দেয়া। আর যদি কমিশন জেনে শুনেও কাজ করে থাকে তাহলে চরম দুঃসাহসিক কাজ করেছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি শিল্প প্রতিষ্ঠানের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণশুনানি করা হয়। সেখানে ক্যাবসহ সবার পক্ষ থেকে শিল্পে দুই ধরনের দাম নিয়ে আপত্তি তোলা হয়। তারপরও সবার মতামত উপেক্ষা করে নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কমিশন কেন জনগণের কথা শুনতে পারে না। নাকি তারা অন্যের ভয়ে জনগণের বিপক্ষে কাজ করে। কারা এর পেছনে কাজ করে। আমি জ্বালানি উপদেষ্টাকে বলেছি, আপনার পেট্রোবাংলা, পিডিবি, বিইআরসি দাম ক্যালকুলেট করার দক্ষতা রাখে না। কেন ভোক্তাদের পক্ষ থেকে দামের ফর্মুলা নেয়া হয় না। লুণ্ঠনমূলক ব্যয় বন্ধ করা গেলে দাম কমানোর সুযোগ রয়েছে।
ক্যাবের পক্ষ থেকে সরকারের উদ্দেশে ৬ দফা দাবি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময়ে কি পরিমাণ লুণ্ঠনমূলক ব্যয় সমন্বয় করা হয়েছে অংশীজনদের নিয়ে চূড়ান্ত করতে হবে। লুণ্ঠনমূলক ব্যয় ও মুনাফা রোধ করে সরকারের রাজস্ব কমিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার এবং ভর্তুকি কমানো সুযোগ রয়েছে। জ্বালানি অপরাধীদের বিচারের জন্য বিইআরসি আইনের আওতায় বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন, প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মকর্তা বিইআরসির লাইসেন্সীর বোর্ড সদস্য কিংবা পরিচালক হতে পারবেন না। বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের সব কোম্পানির জন্য মুনাফা সুবিধা নিষিদ্ধ করতে হবে। ক্যাব প্রস্তাবিত জ্বালানি রূপান্তর নীতির ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে সেবাখাতে রূপান্তর করতে হবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাবের গবেষণা সমন্বয়ক প্রকৌশলী শুভ কিবরিয়া। তিনি বলেন, জ্বালানি খাত লুণ্ঠনমূলক ব্যায়ের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। জ্বালানি খাতের সব স্তরে জনগণের মালিকানা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। জ্বালানি খাতের অযৌক্তিক উন্নয়ন ব্যয় বন্ধ, ভোক্তাদের কাছে ন্যূনতম ব্যয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা।
ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়ার সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্যাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ড. সৈয়দ মিজানুর রহমান। আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজিমউদ্দিন খান।