অনলাইন
বিদেশি সিনেমার ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের নির্দেশ ট্রাম্পের
মানবজমিন ডিজিটাল
(৩ ঘন্টা আগে) ৫ মে ২০২৫, সোমবার, ১২:৪১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:৪৯ অপরাহ্ন

এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের রোষের মুখে বিদেশি সিনেমা। বিদেশে নির্মিত সিনেমার ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের বক্তব্য, অন্যান্য দেশ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আকৃষ্ট করার জন্য যে প্রণোদনা দিচ্ছে, তার কারণে আমেরিকান সিনেমা জগৎ ধুঁকছে। চলচ্চিত্রের বাজার বিধ্বস্ত।
ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, ‘চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং স্টুডিওগুলোকে আমেরিকা থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্যান্য দেশ প্রলোভন দেখাচ্ছে। হলিউড ও আমেরিকা অন্য অনেক জায়গা বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন দেশ একত্রে এই কাজ করছে। ফলে এটি আমেরিকার জাতীয় সুরক্ষার বিরুদ্ধে হুমকির সমান।’
ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি বাণিজ্য বিভাগের মতো সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে অবিলম্বে বিদেশে নির্মিত সমস্ত চলচ্চিত্রের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য অনুমোদন দিচ্ছেন। ট্রাম্পের কথায়, আবার বলছি-আমেরিকায় তৈরি সিনেমাই আমরা চাই।
বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক এক্স-এ ট্রম্পের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরাও এটাই চাই।’ শুল্ক কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে সে সম্পর্কে লুটনিক বা ট্রাম্প কেউই কোনও বিস্তারিত তথ্য দেননি। স্ট্রিমিং পরিষেবার পাশাপাশি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত সিনেমার ক্ষেত্রেও এই শুল্ক প্রযোজ্য হবে কিনা, নাকি উৎপাদন খরচ বা বক্স অফিসের আয়ের ওপর ভিত্তি করে গণনা করা হবে তা স্পষ্ট নয়।
হলিউডের নির্বাহীরা রোববার রাতে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছিলেন। প্রধান স্টুডিওগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশন তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। জানুয়ারিতে ট্রাম্প হলিউডের অভিজ্ঞ অভিনেতা জন ভয়েট, সিলভেস্টার স্ট্যালোন ও মেল গিবসনকে হলিউডকে আগের চেয়েও বড়, উন্নত এবং শক্তিশালী করার জন্য নিযুক্ত করেছেন। চলচ্চিত্র ও টিভি প্রযোজনা সংস্থাগুলো বছরের পর বছর ধরে হলিউড থেকে বেরিয়ে আসছে। করছাড়ের সুযোগসহ এমন স্থানে যাচ্ছে যেখানে চিত্রগ্রহণ সস্তা হয়।
অ্যাম্পিয়ার অ্যানালাইসিসের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী কন্টেন্ট তৈরিতে যে ২৪৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে, তার একটি বৃহত্তর অংশ দখল করতে এবং প্রযোজনা সংস্থাগুলোকে আকর্ষণ করতে বিশ্বজুড়ে সরকারগুলো ক্রেডিট এবং নগদ ছাড় বৃদ্ধি করেছে। ওয়াল্ট ডিজনিসহ সমস্ত প্রধান মিডিয়া কোম্পানি, নেটফ্লিক্স ও ইউনিভার্সাল পিকচার্স কানাডা ও বৃটেনের মতো দেশে নতুন চলচ্চিত্র তৈরি করেছে।
গবেষণা সংস্থা প্রোডপ্রোর মতে, ২০২৩ সালে ৪০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি বাজেটের সিনেমা এবং টিভি প্রকল্পগুলোতে ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গিয়েছিল। হলিউডের নিজ শহর লস অ্যাঞ্জেলেসে গত দশকে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নির্মাণ প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। জানুয়ারির দাবানলের ফলে উদ্বেগ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। প্রযোজকরা লস অ্যাঞ্জেলেসের বাইরে নজর রাখতে শুরু করেন।
ক্যামেরা অপারেটর, পোশাক ডিজাইনার, সাউন্ড টেকনিশিয়ান এবং পর্দার আড়ালে থাকা অন্যান্য কর্মীরা তাদের কর্মকাণ্ড পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করার পরিবর্তে শহরের বাইরে চলে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন।
প্রোডপ্রোর নির্বাহীদের ওপর করা একটি জরিপে দেখা গেছে যে, টরন্টো, বৃটেন, ভ্যাঙ্কুভার, মধ্য ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার পরে ক্যালিফোর্নিয়া পরবর্তী দুই বছরে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ষষ্ঠ সর্বাধিক পছন্দের স্থান। হোয়াইট হাউসে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নতুন শুল্কনীতি অনুসরণ করছেন ট্রাম্প। যে সমস্ত দেশ আমেরিকার পণ্য থেকে চড়া হারে শুল্ক নিয়ে থাকে, সেই সমস্ত দেশের পণ্যেও পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি। যদিও ট্রাম্পের এই নতুন শুল্ক আপাতত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রয়েছে। ব্যতিক্রম কেবল চীন। এবার বিদেশি সিনেমায় শুল্ক আরোপের কথা জানালেন ট্রাম্প। সূত্র: রয়টার্স