ঢাকা, ৪ মে ২০২৫, রবিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৫ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

শ্রমিক দলের সমাবেশে তারেক রহমান

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকাল সমর্থন যৌক্তিক নয়

স্টাফ রিপোর্টার
৩ মে ২০২৫, শনিবার
mzamin

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা যৌক্তিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে মে দিবসের শ্রমিক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘মে দিবসে দিচ্ছে ডাক, বৈষম্য নিপাত যাক’- এ স্লোগানে তাপপ্রবাহের মধ্যেই দুপুর থেকে ঢাকার আশপাশের শিল্পাঞ্চলগুলো থেকে হাজারো শ্রমিক মাথায় লাল ফিতা বেঁধে লাল এবং দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে মিছিল সহকারে সমাবেশে যোগ দেয়। ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের কলকারখানার হাজার হাজার শ্রমিক এই সমাবেশে অংশ নেয়। কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরেরপুল মোড় পর্যন্ত সড়ক জুড়ে সমাবেশে ছিলেন শ্রমিকরা। সমাবেশের আগে সকাল ১০টা থেকে জাসাসের শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন।

তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের পক্ষে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্যই বিএনপিসহ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে অন্তর্বর্তী সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছে। তবে গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা যৌক্তিক নয়। পলাতক স্বৈরাচার যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ না পায়, এজন্য জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি। ফ্যাসিস্ট কিংবা স্বৈরাচার হওয়ার মন্ত্র দেশের সংবিধান কিংবা দেশের আইনে লেখা থাকে না। বরং সংবিধান ও আইন না মানার কারণে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়।
তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার কিন্তু জনগণকে জানায়নি। এমনকি জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কোনোই আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করেনি। দেশের জনগণকে না জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিনা কিংবা নেয়া উচিত কিনা এই মুহূর্তে সেই বিতর্ক আমি তুলতে চাই না। তবে দেশের স্বাধীনতা প্রিয় জনগণ মনে করে করিডর দেয়া না দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের কাছ থেকে, সিদ্ধান্ত আসতে হবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক বিশ্বের দেশে এটাই নিয়ম, এটাই রীতি।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট- বিদেশিদের স্বার্থ রক্ষার স্বার্থে নয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সবার আগে দেশের জনগণের স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান কিংবা অন্য কোনো দেশ নয়, সবার আগে বাংলাদেশ, এটিই হতে হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।

তিনি বলেন, বিএনপি মনে করে ‘সংস্কার ও নির্বাচন’- উভয়টি প্রয়োজন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান আপনারা একটু সতর্ক থাকবেন। অন্তর্বর্তী সরকারের একটি অংশ সংস্কার এবং নির্বাচনকে দাঁড় করিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরিকল্পিতভাবে বিরোধী উস্কে দিতে চায়, গণতন্ত্রকামী জনগণের মনে এই ধরনের বিশ্বাস জন্ম দিতে শুরু করেছে। তাদের কাছে আমাদের আহ্বান, স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রস্তাবনা প্রণয়ন করুন। কোনো রাজনৈতিক দলের আপত্তি নেই। তবে পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত করুন। সুনির্দিষ্টভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করুন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্ম পরিকল্পনায় পথ নকশা, গণতন্ত্রকামী জনগণের সামনে সুস্পষ্ট থাকলে জনগণের সন্দেহ, সংশয় কেটে যাবে।

তারেক রহমান বলেন, একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যখন থেকে নিজেকে কিংবা নিজেদের একমাত্র অনিবার্য অপরিহার্য মনে করে, জনগণের ওপর একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে শুরু করে তখন থেকেই ফ্যাসিবাদের যাত্রা শুরু হয়। এই কারণে বলতে চাই, কোনো ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠীর মনে বিনা ভোটে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত সুপ্ত ভাবনা মনের আকাঙ্ক্ষা যেন রাষ্ট্র ও সরকারকে ফ্যাসিবাদের প্রতি প্রলুব্ধ করতে না পারে সেজন্যই জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ এবং জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার।

‘গণবিপ্লব ও গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ অথবা স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর বিশেষ পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন যে সরকার গঠিত হয় তা ‘অবৈধ না হলেও জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নয় এবং বিকল্প হতে পারে না’ বলেও সকলকে স্মরণ করিয়ে দেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দয়া করে রাজনৈতিক দলগুলোকে ইগনোর করে অবহেলা করে এমন কোনো চুক্তি করবেন না যেই চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমি আশ্চর্য হয়ে যাই কিছু কিছু ছেলে-পেলে বলে- ১৭ বছর আপনারা কি করেছেন? আরে ১৭ বছর আমরা গাছের গোঁড়ায় পানি ঢেলে গাছের গোঁড়া নরম করেছি, সেই গাছের আগায় বসে আপনারা ফল খেয়েছেন। দুইদিনে হাসিনার পতন হয়ে যায়নি। এটা যারা বলেন, তারা মিথ্যার সঙ্গে বসবাস করেন, তারা সত্যি কথা বলেন না, তারা বিএনপিকে ক্রেডিট দিতে চান না। কিন্তু বিএনপিকে এই দেশের জনগণ ভালোবাসে। আমি বলবো, একা একা ক্রেডিট নিতে গিয়ে দেশটাকে ধ্বংস করবেন না।

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।

সুনির্দিষ্টভাবে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন: ওদিকে, গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এবি পার্টির পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র-রাজনীতির গুণগত সংস্কার এবং নাগরিকদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সব সময় জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ এবং নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছে। রাজনৈতিক দল নির্বাচনের দাবি জানাবে, এটি স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক নীতি। অথচ আমরা খেয়াল করছি গত কিছুদিন ধরে অত্যন্ত সুকৌশলে এমন একটি আবহাওয়া তৈরি করছে, যেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করাটাই যেন একটি অপরাধ। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে অবজ্ঞাসূচক বক্তব্য-মন্তব্য কিন্তু পলাতক স্বৈরাচারকেই আনন্দ দেয়। অপরপক্ষে, এটি গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য কিন্তু অপমানজনক।

তিনি বলেন, রাষ্ট্র-রাজনীতি মেরামতের জন্য সংস্কারের কর্মযজ্ঞ চলছে। তবে চলমান সংস্কার যদি রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিকে অবজ্ঞা করতে হয়, প্রলুব্ধ করে তাহলে সংস্কারের তাপর্যটা কি, এটি বহু মানুষের প্রশ্ন আছে। দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে। তারপরেও সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেন এত সময়ক্ষেপণ করছেন- এ নিয়েও জনগণের মনে প্রশ্ন বেড়েই চলেছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে অবজ্ঞা এবং জনগণের রায়কে অবহেলা করে বিরাজনীতিকরণকে উৎসাহিত করা হলে সেটি শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আবারো আজ এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, সুনির্দিষ্টভাবে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সংসদ ও সরকার গঠিত হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুসংহত থাকবে। রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে সরকার গঠন এবং পরিবর্তনে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যস্ত হয়ে উঠলে আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশকে আর কেউ তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে সক্ষম হবে না, ইনশাআল্লাহ।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুর সভাপতিত্বে  সভায় জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারী চৌধুরী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status