ঢাকা, ৪ মে ২০২৫, রবিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৫ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

শ্রমিক সমাবেশে জামায়াত আমীর

নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কাজের সুযোগ করে দেবো

স্টাফ রিপোর্টার
৩ মে ২০২৫, শনিবার
mzamin

জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে নারীরা নিরাপত্তার সঙ্গে তাদের পছন্দের কর্মক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ পাবে বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। বৃহস্পতিবার পল্টনে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশের শ্রমিকরা  আজও তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা ন্যূনতম মজুরি পাচ্ছে না, ফলে জীবিকার তাগিদে একাধিক জায়গায় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। মিল-কারখানায় নারী শ্রমিকদের নামাজ পড়ারও কোনো ব্যবস্থা নেই। মালিকদের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন এসব মৌলিক চাহিদা পূরণে সচেষ্ট হন। অনেকে গুজব ছড়ায় জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের কর্মক্ষেত্রে যেতে দেবে না। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, আমরা নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের কাজের সুযোগ করে দেবো। আমাদের সংগ্রাম তখনই শেষ হবে, যখন প্রতিটি ঘরে ঘরে সুখ, শান্তি ও মর্যাদা পৌঁছে যাবে।

জামায়াতের আমীর বলেন, ইসলামী আইন বাস্তবায়ন ছাড়া টেকসই ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন সম্ভব না। মালিকরা শ্রমিকদের সম্মান দিলে শ্রমিকরা তাদের পুরো স্বতঃস্ফূর্ত শ্রম দেবে ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা মানুষদের সম্মান দেখাতে চাই। 

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন জায়গায় যারা উদ্যোক্তা তারা বিভিন্নভাবে তাদের শ্রমিক সহকর্মী ও কর্মচারীদের উপযুক্ত মূল্যায়ন করেন না, শ্রমের মর্যাদা দেন না, কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করেন না। আবার তারা যেমন শ্রমিকদের নির্যাতন করেন, তেমনি আবার তারা চাঁদাবাজদের হাতে নির্যাতিত হন। চাঁদাবাজরা নানা রূপ নিয়ে হাজির হয়। চাঁদাবাজরা দিবস পালনের নামে এমনকি আজকের দিবসটি নিয়েও তারা হাজির হয়েছে। এই দ্বন্দ্ব কতোদিন চলবে? আমরা চাই মালিকপক্ষ এটা বুঝবে। শ্রমিক বাঁচলে আমার শিল্প বাঁচবে, শ্রমিকও বাঁচবে। আবার শ্রমিকদেরও বুঝতে হবে উদ্যোক্তা-মালিক-শিল্পপতিরা যদি বাঁচে তাহলে সে নিজেও বাঁচবে। কারণ কর্মস্থলই যদি ধ্বংস হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে দাবিটা উত্থাপন করবো কার কাছে? সেজন্য শ্রমিকদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের কোথাও কোথাও অথবা অধিকাংশ জায়গায় হয়তো আট কর্মঘণ্টা আছে। কিন্তু এজন্য তাদের হাতে যে ভাতা, বেতন তুলে দেয়া হয় তা দিয়ে তার নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। বাধ্য হয়ে এক জায়গায় আট ঘণ্টা কাজ করে আরেক জায়গায় আরও কাজ করে। সে তো মানুষ। মেশিন না। তারও পরিবার আছে, পরিবারকে সময় দিতে হয়, মন, শরীর আছে। চাপ, ক্লান্তি আছে। কিন্তু তাদের জীবনটা হয়ে গেছে অমানবিক জীবন। আমরা এটার অবসান চাই। এটা তখনই ঘটবে যখন আমরা সত্যিকার অর্থে মানুষ হিসেবে আরেকজনকে সম্মান শ্রদ্ধা করবো।

বর্তমানের স্লোগান ‘বৈষম্যমুক্ত সমাজ চাই’ উল্লেখ করে জামায়াত আমীর বলেন, শ্রমিকরা রক্ত পানি করা মজুরি পান তা হালাল। তাদের গায়ের ঘামটা আতরের মতো। যদিও অনেকে ঘাম ঝরানো শ্রমিকের সঙ্গে বুক মেলাতেও কুণ্ঠাবোধ করেন। তাদের অবশ্যই সম্মান শ্রদ্ধা করতে হবে। 

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আ. ন. ম. শামসুল ইসলাম বলেন, “শ্রমিকদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হলে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। ইসলামী শ্রমনীতি চালু করলে শ্রমিকদের প্রকৃত মর্যাদা নিশ্চিত হবে, সেইসঙ্গে সমাজর সকল সমস্যা দূর হবে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জুলাই বিপ্লবে যারা জীবন দিয়েছিল, তাদের ৮০ শতাংশই ছিলেন শ্রমজীবী মানুষ। কিন্তু আজও তাদের অধিকার নিশ্চিত হয়নি। তিনি ঈদের আগে বেতন না পাওয়া শ্রমিকদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে দ্রুত শ্রমিকবান্ধব আইন বাস্তবায়নের দাবি জানান।
সমাবেশে দলের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, শুধু ১লা মে নয়, বছরের ৩৬৫ দিন শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে হবে। ৫৪ বছরেও শ্রমিকরা শান্তি পায়নি, তাদের ওপর চলছে শোষণ ও জুলুম। তিনি ইসলামী রাষ্ট্র ও শ্রমনীতি বাস্তবায়নের দাবি জানান। তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইসলামী দলকে ভোট দিন। 
জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি না দিয়ে তাদের শোষণ করা হচ্ছে। মালিকরা যদি শ্রমিকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় না রাখে, তাহলে কোনো প্রতিষ্ঠানই টিকবে না। শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন তার প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে কথা বলে আসছে। শ্রমিকদের আপনাদের ভাই হিসেবে মর্যাদা দিন, তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন। ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়ন ছাড়া শ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। 

দলের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা প্রমুখ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশের আগে মে দিবসের র‌্যালিতে অংশ নেন নেতাকর্মীরা।

পাঠকের মতামত

এদিকে নারী কমিশনের বিরোধীতা আবার নারীদের নিরাপত্তা দিয়ে কাজের নিঃশ্চয়তা চান।এটাকি স্ববিরোধিতা নয়।জনাব মাওলানা সাহেব।আমারতো বুঝে আসেনা।অবশ্য আমরাতো নেতা নয় যে এগুলো বুঝবো আমরা সাধারন মানুষ।

তৌফিকুর রেজা
৩ মে ২০২৫, শনিবার, ৯:৪২ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status