শেষের পাতা
এনসিপি’র সমাবেশ
যদি কিন্তু ছাড়া আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে
স্টাফ রিপোর্টার
৩ মে ২০২৫, শনিবার
গণ-অভ্যুত্থানের ৯ মাস পর এসেও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রাস্তায় নামতে হচ্ছে, এটা আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতা। কোনো ধরনের যদি কিন্তু ছাড়া আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। বাতিল করতে হবে দলটির নিবন্ধন। আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কারের আগে এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। গতকাল রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টালবাহানা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হবে, এই সিদ্ধান্ত জনগণ গত বছরের ৫ই আগস্টই দিয়েছে। এরপরও কেউ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে জুলাই যোদ্ধারা তাদের প্রতিহত করবে। এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই আন্দোলনের ৯ মাস পরে এসেও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও দলটির নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসতে হচ্ছে। এটা আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতা। অন্তর্বর্তী সরকারে দায়িত্ব নেয়ার সময় আমাদের দাবি ছিল বিচার ও সংস্কার। ইতিহাসে বাংলাদেশের মানুষ বারবার রাস্তায় নেমে এসেছে গণতন্ত্রের জন্য। ৪৭ থেকে ৭১ এরপর আমাদের সবকিছু মুজিববাদের হাতে বেহাত হয়ে গিয়েছিল।
মুজিববাদী সংবিধানে বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। গণতন্ত্রের নামে বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিল। দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তির জন্য ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল। পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরে আলেমদের নির্যাতন, কোটাসংস্কার আন্দোলনসহ সর্বশেষ জুলাই মাসের আন্দোলন এদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে দমন করতে চেয়েছিল। আওয়ামী লীগ খুনির দলে পরিণত হয়েছে। তাদের নিবন্ধন ও রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগের নির্দেশনায় হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। নৌকা মার্কাকে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে। বিচার চলাকালীন সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে বলেছিলাম আমরা। আজকের যারা বর্তমান সরকারে আছেন দায়িত্বে জুলাই আন্দোলনের ফলে। মৌলিক সংস্কারের ভিত্তিতে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে। আইনসভা এবং গণপরিষদ নির্বাচন দিতে হবে। আহত, নিহতদের পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকে। আগামীতে জনগণ এনসিপি’র ওপরই তাকিয়ে আছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে এনসিপি’র বার্তা পৌঁছে দিতে হবে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে পাড়ায় পাড়ায় ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ তৈরি করুন। দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধদের জন্য পাড়া মহল্লায় জনতার আদালত গড়ে তুলুন। সরকার বিচার করতে ব্যর্থ হলে আমরা জনতার আদালতে বিচার করবো। এনসিপি’র দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস শহীদদের রক্তের ওপর দিয়ে আমরা আপনাকে ক্ষমতায় বসিয়েছি। আমরা কোনো অনুরোধ করছি না, কোনো দাবি করছি না। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিচ্ছি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। কোনো যদি কিন্তু অথবা নেই। আওয়ামী লীগকে অনতিবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে। গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ কর?তে হবে। উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, আমরা মুষ্টিবদ্ধ হাতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছি। যারা বিডিআর হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের অভিযান ও জুলাইয়ের হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, যে দল গণহত্যা চালিয়েছে, সেই দলকে রাজনীতি করার অধিকার দেয়া যায় না। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আপনারা সুশীল সরকার নয় আপনারা গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি।
৫ই আগস্ট জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুজিববাদ এই দেশে টিকে থাকতে পারবে না। আওয়ামী লীগকে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন তালিকা থেকে বাদ দিয়ে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। যারা তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে, তাদের হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, ছাত্র ও জনতা তাদের বিরুদ্ধে দুর্গ গড়ে তুলবে। এনসিপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন বলেন, খুনি হাসিনাকে আমরা বিদায় করেছি। এই বিজয় আমাদের ধরে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। কিন্তু এই বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগ আর কখনো রাজনীতি করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ। দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহাদী বলেন, খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে এনে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলাতে হবে। এ ছাড়া মৌলিক সংস্কার ছাড়া আবারো একটি নির্বাচনের দিকে যাওয়া হলে শহীদদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি করা হবে।
এনসিপি’র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আমরা টালবাহানা দেখতে পাচ্ছি, এটা লজ্জাজনক। আমাদের হাইকোর্ট দেখাবেন না। হাইকোর্ট দেখে জুলাই বিপ্লব হয়নি। আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ বলেছে, আমাদের রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য আওয়ামী লীগ ও হাসিনার দোসররা হুমকি। এরা বাংলাদেশে থাকতে পারে না। এনসিপি’র যুগ্ম সদস্য সচিব হুমায়রা নূর বলেন, আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৫ বছর দেশের মানুষকে শোষণ করেছে। দেশের মানুষকে তারা ভোট দিতে দেয়নি। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তার জন্য অবশ্যই দুর্নীতিপরায়ণ, খুনি-গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে ন্যূনতম টালবাহানা করবেন না। মৌলিক সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন নয়।
পাঠকের মতামত
Agree
সহমত। তবে এনসিপি কে আরও উদ্যোগী হতে হবে। একটা রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করতে হলে জনগনের আস্থায় আসতে হবে। দলে যে সব মতানৈক্য দেখা যাচ্ছে এবং যে অভিযোগ আসছে তার মোকাবেলা করতে হবে। সুশৃঙ্খল সংগঠন গড়তে হবে।
সোজা কথা BAL ডিলিট বাংলাদেশ থেকে।