বাংলারজমিন
নবীনগরে ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা
নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
২৬ এপ্রিল ২০২৫, শনিবারব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগরের ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকেরা। নবীনগর উপজেলার হাওরের চরাঞ্চল এবং যেখানে পানির স্বল্পতা, ধান আবাদ কঠিন সেই সব জায়গায় কয়েক বছর ধরে কৃষকরা ভুট্টা চাষ করছেন। ভুট্টায় উৎপাদন খরচ কম, লাভ বেশি। বন্যা কিংবা খরার ভয় নেই। গত কয়েক বছরে শীতকালের শুরুতে ঝড় বা বৃষ্টিতে রবিশস্যে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নিরাপদ ফসল হিসেবে এ বছর ভুট্টা আবাদ বৃদ্ধি করেছে কৃষকরা। যখন থেকে দেশের পোল্ট্রি ও ফিড মিল খাতে ভুট্টার চাহিদা বাড়ে, তখন তাদের চোখে জ্বলে ওঠে নতুন সম্ভাবনার আলো। তারা ধান ছেড়ে আগলে ধরেন ভুট্টা চাষকে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, গত বছর ভুট্টা আবাদ হয়েছিল ১২৫ হেক্টর, এই বছর শীতকালীন ভুট্টা আবাদ হয়েছে ১৬২ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় ৩৭ হেক্টর বেশি। উপজেলার জিনদপুর, ইব্রাহিমপুর, কাইতলা দক্ষিণ, শ্রীরামপুর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ভুট্টা আবাদ হচ্ছে। এই উপজেলার কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে সোনালি ফসল ভুট্টা।
সরজমিন জানা গেছে, উপজেলার সব ইউনিয়নে ভুট্টার ব্যাপক আবাদ হয়েছে। চাষিরা ভুট্টা সংগ্রহে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাঠেই চলছে ভুট্টা মাড়াইয়ের কাজ। কৃষকেরা বলছেন, এ বছর ভুট্টার ফলন বেশ ভালো হয়েছে। তবে কাঁচা ভুট্টার দাম নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, কাঁচা ভুট্টার দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে না।
কৃষক আহসানুল্লাহ বলেন, জমিগুলো উঁচু, এগুলো পতিত থাকতো। এখানে ভুট্টা চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। যদি দরদাম ঠিক থাকে, তাহলে লাভবান হবো। কৃষি অফিস থেকেও আমরা ভুট্টা চাষে সার, বীজ, প্রশিক্ষণ এবং নানা ধরনের সহযোগিতা পেয়েছি। ফতেহপুর গ্রামের কৃষক শাহ আলম বলেন, ভুট্টা চাষে আমাদের চার ভাবে লাভ হয়। ভুট্টা বিক্রি করা, কাঁচা পাতা গবাদিপশুকে খাদ্য হিসেবে খাওয়ানো, সাথী ফসল হিসেবে শাক শুরুর দিকে আবাদ করা যায় এবং গাছ শুকিয়ে লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন, তুলনামূলক নিরাপদ ফসল হিসেবেই ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। সেচের সমস্যা, অতিবৃষ্টি এবং অনাবৃষ্টি কিংবা আগাম বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এমন জমিতে ভুট্টা চাষ করলে কৃষক অন্তত কিছুটা হলেও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পান। তাছাড়া পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশে এই অঞ্চলে ফিড মিলগুলোর চাহিদা ভুট্টার দিকে। আমরা যে সকল জমিতে ধান আবাদ করি চ্যালেঞ্জ কেবল সেখানে ভুট্টা আবাদ করতে পরামর্শ দেই। তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিকেজি শুকনা ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে ২৮-৩৪ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি মণ ভুট্টা কেনাবেচা হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। ভুট্টা চাষে কৃষকদের নিয়মিত মাঠপর্যায়ে প্রযুক্তিগত পরামর্শ, বীজ নির্বাচন, সার ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে রোগবালাই দমন পর্যন্ত পাশে আছে উপ-সহকারী কৃষি অফিসারগণ।