ঢাকা, ২১ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

ওসির ঘুষ লেনদেনের অডিও ভাইরাল

‘৫-১০ হাজার কোনো টাকা? নানাকে বইলো লাখ পাঁচেক টাকা দিতে’

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

(৫ ঘন্টা আগে) ২১ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ৬:১৭ অপরাহ্ন

mzamin

গাজীপুরের শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মন্ডলের ঘুষ লেনদেনের একটি অডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। রেকর্ডটি উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নগর হাওলা গ্রামের ঝুট ব্যবসায়ী সেলিম সিকদারের সঙ্গে ওসির কথোপকথন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর থেকেই ওসি বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি অব্যাহত রেখেছেন বলে তিনি জানান। সোমবার সকালে ঝুট ব্যবসায়ী সেলিম সিকদার নিজেই রেকর্ডের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন এবং ওসি তাকে অব্যাহত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান।

ওই অডিওতে ঘুষ লেনদেন নিয়ে ওসি বলেন, ‘তুমি তো আমাকে গেঞ্জি দিলা না, ফুল হাতা। আচ্ছা ঢাকা থেকে নিয়ে আসব। তোমার নানা আমাকে দেখে না কেন? ৫ হাজার, ১০ হাজার এটা কোনো টাকা? এই টাকা দিয়ে কী হয়? আমি এত চাপ নিচ্ছি। তোমার নানাকে বইলো আমাকে লাখ পাঁচেক টাকা দিতে।’ তবে ওসি একটি চক্র তার কথা এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ছড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানান। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সেলিম শিকদার বলেন, অনেক টেনশনে আছি। অনেক হুমকি দিচ্ছে। আমার এক আত্মীয়র মাধ্যমে রোববার সকাল থেকেই ওসি ফোন দিচ্ছে। পরে রাতে যখন রেকর্ড ফাঁস হয়ে গেছে, তখন আর ফোন দেয়নি। ওনার তৈরি করা একটি লেখা আমাকে ধরিয়ে দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ফেসবুক লাইভে এসে বলবেন এই রেকর্ড ভুয়া। তাহলে আমার কোনো সমস্যা হবে না। আপনারও কোনো সমস্যা হবে না। নাহলে কিন্তু আপনার খবর আছে।’

তিনি জানান, উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নগর হাওলা গ্রামে ফর্মূলা ওয়ান স্পিনিং মিলস্ লিমিটেড কারখানা তার নানা ১০-১৫ বছর আগে জমি কিনে দেয়াসহ কারখানা স্থাপনে সহযোগিতা করেন। এ সুবাদে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনি ঝুট ব্যবসাসহ কারখানার ভালো-মন্দ দেখে আসছেন। তিনি বলেন, এখানে কোনো রাজনৈতিক পরিচয়ে ব্যবসা করতাম না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও আমাদের ব্যবসায় বাধা দিয়েছিল। ৫ আগস্টের পরে ওসি থানায় আসার পর পুরোনো এক উপ-পরিদর্শকের (এসআই) থেকে আমার নাম্বার সংগ্রহ করে আমাকে ফোন দিয়ে থানায় যেতে বলে। থানায় যাওয়ার পর ওসি বলতেছে যদি ব্যবসা করতে চান তাহলে আমাকে মাসে দুই লাখ টাকা করে দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, প্রথম দিন আমি ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। তারপরে বলি, স্যার ব্যবসা হয় ২-৩ লাখ টাকা। আপনাকে ২ লাখ টাকা দিলে কীভাবে হবে? পরে ওই জায়গায় এক লাখ টাকা মাসে তার সঙ্গে চুক্তি হয়। প্রথম মাসে এক লাখ নিয়েছিল। পরের মাসে দুই লাখ। এরপর দেড়-দুই লাখ টাকা করে নিত। এছাড়াও সাহাবুদ্দিন নামে একজন আমার খালু জাকিরের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। অডিওতে ৫ লাখ টাকা দাবি করেছিল। পরে ওসিকে বললাম, ব্যবসা বাণিজ্য ওই রকম নাই। আপনার চাওয়া ২ লাখ টাকা আমি দিবো। কিন্তু ৫ লাখ টাকা দিতে পারবো না। পরে আমাকে এক নেতার মাধ্যমে ডেকে নিয়ে আটক করে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারের শর্তে বাসায় গরু বিক্রির আড়াই লাখ টাকা তাকে দেই। তিনি বলেছিলেন, ৫৪ ধারায় চালান দিয়েছেন। টাকা হাতে পাওয়ার পর ওসি থানায় আসেননি। আমাকে আদালতে নেয়ার পর তিনি থানায় আসেন। পরে আমাকে একটি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় চালান দেয়া হয়।

ফোনে ধারণ করা রেকর্ড সম্পর্কে সেলিম শিকদার বলেন, মাস কয়েক আগে শ্রীপুর পৌরসভার তুলা গবেষণা মাঠ এলাকায় ওসি আমাকে ডেকে নেন। সেখানে যাওয়ার পর বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলেন, আমি ব্যবসা করলে তাকে টাকা দিতে হবে। এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, এটা আমি শুনেছি। এটা আমার কণ্ঠ না। আমার কথা এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে একটি চক্র। গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) ড. চৌধুরী যাবের সাদেকের সরকারি নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় এ বিষয়ে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
 

পাঠকের মতামত

এই একটা ঘটনার সত্যি মিথ্যা নিয়ে উৎসাহী বা দুঃখিত হওয়ার কিছু নাই। এদেশের প্রেক্ষাপটে এটাই বাস্তব চিত্র। তাছাড়া যে লোক ঝুট ব্যবসা করে, সেও অনেকটা শূণ্যের ওপরে স্থানীয়তার প্রভাব খাটিয়ে ঝুঁট ব্যবসার নামে কারখানাকে লুট করছে। কার বিচার কে করে!!!!

Asham ahad
২১ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার, ৭:১৪ অপরাহ্ন

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status