খেলা
যেন আলাদিনের চেরাগে বন্দি শান্তদের ‘ব্যাটিং’
ইশতিয়াক পারভেজ, সিলেট থেকে
২১ এপ্রিল ২০২৫, সোমবার
আলাদিনের চেরাগে বন্দি জিনের গল্প কে না শুনেছেন! প্রদীপ ঘষতেই জিন হাজির। দিয়ে দেয় কতো রকমের উপহার। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিংটাও যেন সেই চেরাগবন্দি জিনের মতো! প্রত্যাশা থাকে এক দিন জিন এসে বদলে দিবে সব কিছু। শুরু হবে নতুন দিন। কিন্তু বাস্তবতা যে বড় কঠিন। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক তা স্বীকার করেছেন। কিন্তু প্রত্যাশা করেছিলেন জাদুর পরশে সব বদলে দেয়ার, নতুন দিনের সূচনা করার। কিন্তু মাঠে আরো একবার তিনি মুখোমুখি হলেন কঠিন বাস্তবতার। রূপকথার মতো কোনো কিছু বদলে গেল না! জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে তাদের স্বপ্নের ব্যাটিং রইলো চেরাগেই বন্দি। ৬১ ওভার ব্যাট করে মাত্র ১৯১ রানে গুটিয়ে গেলো টাইগাররা। যেখানে ওয়ানডেতেই ৩’শ রান এখন মামুলি বিষয় সেখানে টেস্টে দুইশ’র নিচে গুটিয়ে সিলেট টেস্টের প্রথম দিনেই পথ হারিয়েছে বাংলাদেশ দল। নিজেদের ঘরের মাঠ, এক সপ্তাহের প্রস্তুতি, উইকেটটাও নিজেদের মতো করে বানানো আবার টসে জিতে আগে ব্যাটিং। সবকিছুই ছিল নিজেদের পক্ষে। কিন্তু গতকাল প্রথম দিন শেষে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং দেখে মনে হবে এটি যেন তাদেরই ঘরের মাঠ। জিম্বাবুয়ের বোলারদের সামনে টাইগার ব্যাটাররা করেছে অসহায় আত্মসমর্পণ। আর শেষ বিকালে সফরকারীরা দেখিয়েছেন ব্যাটিং প্রদর্শনী। মাত্র ১৪ ওভার ব্যাট করে হারায়নি কোনো উইকেট। দিনশেষে তাদের সংগ্রহ ৬৭ রান। টাইগার বোলারদের পাত্তাই দেননি দুই ওপেনার। ১২৪ রানে পিছিয়ে সফরকারীরা ১০ উইকেট হাতে নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করবে। সিলেট টেস্টে প্রথম দিনের যে চিত্র তাতে স্পষ্ট অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে বাংলাদেশ! জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ দিয়ে নিজেদের মাটিতে চলতি বছরে এটি প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। টেস্ট বলেই কিনা বেশির ভাগ ক্রিকেটপ্রেমীর শঙ্কা ছিল বাংলাদেশ হয়তো নিজেদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় ম্যাচ হাতছাড়া করতে পারে। কারণ টেস্টে বরাবরই টাইগারদের অন্যতম দুর্বলতার নাম ব্যাটিং। এখন পর্যন্ত ১১০ টেস্ট ম্যাচ হেরেছে তার অন্যতম কারণটাও ব্যাটিং ব্যর্থতা। ভয়টা ছিল ওপেনিং নিয়ে। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে সাদমান ইসলাম অনিক ও মাহমুদুল হাসান তাদের ব্যর্থতার ধারা অব্যাহত রাখলেন। দলীয় ৩২ রানেই দু’জন ফিরলেন সাজঘরে। এরপর অধিনায়ক শান্ত ও অভিজ্ঞ মুমিনুল হক হাল ধরলেন। তবে তাদের বিদায়ের পর শুরু হয় আসা যাওয়ার মিছিল। শেষ দিকে জাকের আলী অনিক ও পেসার হাসান মাহমুদের অষ্টম উইকেটে ৪১ রানের জুটি গড়ে মান রক্ষা করেন। এরপর ১০ বলের মধ্যে শেষ ৩ উইকেট হারিয়ে প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ দলের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টের প্রথম ইনিংসে দুইশ’ করতেও ব্যর্থ টাইগাররা। বেশ কয়েকজন ব্যাটার আলগা শটে উইকেট ছুড়ে দিয়ে মাঠ ছাড়েন দলকে ডুবিয়ে। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৪ ওভারে ৮৪ রান দুই উইকেট হারিয়ে। এরপর খানিকটা বৃষ্টিতে ম্যাচ শুরু হতে কিছু বিলম্ব হয়। কিন্তু মাঠে ফিরে বাংলাদেশের ব্যাটারদের যেন রান তোলার ভীষণ তাড়া। মনে হচ্ছে আবার বৃষ্টি আসার আগে যতটা রান স্কোর বোর্ডে তোলা যায় ততোই লাভ। তাতে ভুল শটে একের পর এক উইকেটের পতন। ৭ উইকেটে ১৫৪ রান নিয়ে চা বিরতিতে যাওয়া বাংলাদেশ পরে যোগ করেছে আর ৩৭ রান। জাকের ও হাসানের প্রতিরোধ ভেঙে জিম্বাবুয়েকে ব্রেক থ্রু দেন পেসার ব্লেসিং মুজারাবানি। তার চমৎকার এক ডেলিভারির লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান হাসান। তিনি সাজঘরে ফেরেন ৩০ বলে ১৯ রানে। দুইশ পর্যন্ত পৌঁছাতে স্বাগতিকরা তাকিয়ে ছিল জাকেরের দিকে। কিন্তু জোড়া আঘাতে তাকে ও নাহিদ রানাকে আউট করে বাংলাদেশের ইনিংস থামান স্পিনার ওয়েসলি মাধেভেরে। ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে ছক্কা মারার চেষ্টায় ক্যাচ দেন জাকের। অনেক উঁচুতে ওঠা বল আস্থার সঙ্গে লুফে নেন বেন কারান। ৫৯ বলে জাকেরের সংগ্রহ ২৮ রান। শেষ ব্যাটার নাহিদ টেকেন কেবল চার বল। বোল্ড হওয়ার আগে রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। খালেদ আহমেদ অপরাজিত থাকেন ৩ বলে ৪ রানে। তার আগে ২৬ ওভারে ৭০ রান যোগ করতে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। অধিনায়ক শান্তর বিদায় দিয়ে পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি ভাঙার পর ধসের শুরু। এরপর একে একে বিদায় নেন মুশফিকুর রহীম, মুমিনুল হক, মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। ৫ উইকেটের তিনটি নিয়ে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করেছেন বাঁহাতি স্পিনার ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। বলতে গেলে তিন উইকেটই একরকম উপহার পেয়েছেন তিনি। বাকি দুটি নিয়েছেন পেসার ব্লেসিং মুজারাবানি। ৪০ রান করে বিদায় নেন অধিনায়ক। ৫৬ রানে থামেন মুমিনুল।