অনলাইন
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, হিন্দু ধর্মীয় ট্রাস্টে কি কোনও মুসলিমকে সদস্য হতে দেবে সরকার?
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা
(২ দিন আগে) ১৬ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার, ৯:১৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৫ পূর্বাহ্ন
নতুন সংশোধিত ওয়াকফ আইনকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে ৭২টিরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে। সেগুলিকে একসঙ্গে করে সুপ্রিম কোরটে বুধবার শুনানী শুরু হয়েছে। প্রথম দিনের শুনানীতেই বিচারপতিরা সরকারকে বেশ কয়েকটি অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। নতুন আইন অনুযায়ী, ওয়াকফ বোর্ডের সদস্য হতে পারবেন অমুসলিমরাও। সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, হিন্দুদের ধর্মীয় অছি পরিষদে বা ট্রাস্টে কি কোনও মুসলিমকে সদস্য হতে দেবে সরকার?
এক মামলাকারীর হয়ে সওয়াল করে আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, এই আইন সংবিধানের ২৬ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করছে। সংবিধানের এই ধারা স্বাধীন ভাবে মানুষকে ধর্মাচরণের অধিকার দিয়েছে। তাঁর সওয়াল, জেলাশাসক সরকারের অঙ্গ। তিনি ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তা অসাংবিধানিক। ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সিব্বল। এই ধারায় দীর্ঘ দিন ধরে কোনও সম্পত্তি ধর্মীয় বা সেবার স্বার্থে ব্যবহার করা হলে তা ওয়াকফ বলে ধরে নেওয়া হয়, তার নথিভুক্তকরণ না হলেও চলে। সিব্বল জানান, এই ধারা ইসলাম ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে আদালত প্রশ্ন করে, বেশির ভাগ মসজিদ চতুর্দশ, পঞ্চদশ শতকে তৈরি। তাদের নথি দাখিল কী করে সম্ভব?
ওয়াকফ আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি), জমিয়ত উলামা-ই-হিন্দ, দ্রাবিড় মুন্নেত্র কাজগম (ডিএমকে), কংগ্রেস সাংসদ ইমরান প্রতাপগড়ি এবং মোহাম্মদ জাভেদ, বিহারের আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা, বাংলার তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র, সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি, ভরতপুরের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক হুমায়ুন কবীর প্রমুখের ৭২টি আবেদন সুপ্রিম কোরটে দাখিল করা হয়েছে।
বুধবার সব মামলাকে একসঙ্গে জুড়ে শুনানি শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চে এই মামলা চলছে। বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথন। বুধবার এই সংক্রান্ত শুনানির পর সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে অন্তর্বর্তী কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি শীর্ষ আদালত। বৃহষ্পতিবার ফের শুনানির দিন ধার্য করেছে।
ভোটাভুটির মাধ্যমে সম্প্রতি ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশ হয় লোকসভা এবং রাজ্যসভায়। রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে তা আইনে পরিণত হয়েছে। তার পর থেকেই এই সংশোধনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন অংশে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিনের শুনানির একেবারে শেষ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বার্তা দেন, সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু, তার ফলে হিংসাও ছড়াচ্ছে। এটা কাম্য নয়। বিশেষ করে এই আইন নিয়ে যখন আদালতে মামলা রুজু করা হয়েছে এবং বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন রয়েছে, সেখানে কখনই এই ধরনের হিংসা বা অশান্তির ঘটনা বাঞ্ছনীয় নয়। এমন ঘটনা উদ্বেগজনক।