ঢাকা, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

'শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবো': ট্রাম্পের শুল্ক হুমকিতে প্রতিক্রিয়া চীনের

মানবজমিন ডিজিটাল

(১ সপ্তাহ আগে) ৮ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার, ৬:২৭ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৬ পূর্বাহ্ন

mzamin

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প চীনা আমদানির উপর অতিরিক্ত ৫০% শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। জবাবে চীন জানিয়েছে, তারা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে এবং নিজস্ব স্বার্থ রক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে,  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই তথাকথিত 'পারস্পরিক শুল্ক'" আরোপ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং এটি  হুমকি দেবার কৌশল। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন প্রতিশোধমূলক শুল্ক ঘোষণা করেছে এবং মন্ত্রণালয় তার সর্বশেষ বিবৃতিতে ইঙ্গিত দিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আরও শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, "চীন যে পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে তা তার সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের  স্বার্থ রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে। এটি  সম্পূর্ণ বৈধ। চীনের উপর মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধি একটি ভুল পদক্ষেপ। এটি   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাকমেইলিং মনোবৃত্তির  প্রকাশ । চীন কখনই এটি মেনে নেবে না। যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব পথে চলতে থাকে, চীন শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে। '

বিশ্লেষক এবং ব্যবসায়ীরা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে উদ্বিগ্ন

চীনের উপর ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি  আর্থিকভাবে ধ্বংসাত্মক বাণিজ্য যুদ্ধকে আরও তীব্রতর করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা ।শুল্ক যুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার সাথে সাথে টোকিও থেকে নিউ ইয়র্ক পর্যন্ত শেয়ার বাজারগুলো  আরও অস্থির হয়ে উঠেছে। গত সপ্তাহে ট্রাম্পের ঘোষণা করা মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে চীন প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলার পর ট্রাম্পের নতুন এই  হুমকি সামনে  এলো। ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন- 'চীন যদি  ২০২৫ এর  ৮ই এপ্রিলের  মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার না করে , তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৯ই এপ্রিল থেকে কার্যকরভাবে চীনের উপর ৫০% অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবে। উপরন্তু, আমাদের সাথে চীনের অনুরোধকৃত   সমস্ত আলোচনা বাতিল করা হবে।' যদি ট্রাম্প চীনা পণ্যের উপর তার নতুন শুল্ক কার্যকর করেন, তাহলে চীনা পণ্যের উপর মার্কিন শুল্ক সম্মিলিতভাবে ১০৪% এ পৌঁছাবে। এতে কেবল আমেরিকান ভোক্তাদের জন্য দামই বাড়বে না, বরং চীনকে অন্যান্য দেশে  সস্তা পণ্য সরবরাহ করতে এবং   বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে আরও গভীর সম্পর্ক স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করতে পারে।

চীনা জনগণ চিন্তিত, কিন্তু তাদের দেশের প্রতি আস্থা আছে 
বেইজিংয়ের মানুষ বলছে ,   তাদের কাছে এতো শুল্কের হিসেবে রাখা  কঠিন।  তবে  ঝড় মোকাবেলা করার জন্য নিজের দেশের সরকারের উপর আস্থা রাখছে তারা।    ৩৭ বছর বয়সী চীনা নির্মাণকর্মী উ কি মনে করেন -  'ট্রাম্প আজ এক কথা বলেন, কাল আরেক কথা বলেন। যাই হোক, তিনি কেবল সুবিধা চান, তাই তিনি যা খুশি বলতে পারেন। '৩০ বছর বয়সী পল ওয়াং, যিনি ইউরোপে নেকলেস, ব্রেসলেট এবং টাং  স্টাডসহ   আনুষাঙ্গিক গহনা বিক্রি করেন, তিনি বলছেন -অতিরিক্ত  ৫০% মার্কিন শুল্কের পরে ইউরোপীয় বাজার এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিযোগিতার বাজার কোন দিকে যায় সেদিকে তিনি নজর রাখবেন।  জেসি হুয়াং এবং ইয়াং আইজিয়া, যাদের কোম্পানিগুলো  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাসায়নিক আমদানি করে, তারা বলেছেন যে এই শুল্ক যুদ্ধের জেরে  তাদের হয়তো  দোকান বন্ধ করতে হতে পারে। হুয়াং উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছেন , " কোম্পানি থেকে ছাঁটাই হলে আমি হয়তো আর কোনও চাকরিও  খুঁজে পাব না।"

চীনের সামনে  একাধিক বিকল্প রয়েছে

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়াশিংটনকে  পাল্টা আক্রমণ করার জন্য চীনের কাছে এখনও বিভিন্ন বিকল্প রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ফেন্টানাইলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা স্থগিত করা, কৃষি পণ্যের উপর উচ্চ কোটা স্থাপন করা। ২০২৪ সালে চীনের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট পণ্য বাণিজ্য ছিল আনুমানিক ৫৮২ বিলিয়ন ডলারের , যা এটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পণ্যের শীর্ষ বাণিজ্যকারী করে তুলেছে।২০২৪ সালে চীনের সাথে পণ্য ও পরিষেবা বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল ২৬৩ বিলিয়ন থেকে ২৯৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে সংলাপের সম্ভাবনা  এড়িয়ে গেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। লিন বলেছেন- ' আমি মনে করি না যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে তা আন্তরিক সংলাপের জন্য আগ্রহের বহিঃপ্রকাশ । যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই সংলাপে অংশগ্রহণ করতে চায়, তাহলে তাদের সমতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং পারস্পরিক সুবিধার মনোভাব গ্রহণ করা উচিত। 'মঙ্গলবার হংকংয়ে, যেখানে স্টক মার্কেট অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা বেশি ছিল, প্রধান নির্বাহী জন লি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ শুল্ক আরোপকে  "গুন্ডামি" বলে উল্লেখ করেছেন।  তাঁর মতে  এই   "কঠোর  আচরণ" বিশ্বব্যাপী এবং বহুপাক্ষিক বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং  বিরাট অনিশ্চয়তা ডেকে এনেছে। লি বলেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় হংকং তার অর্থনীতিকে চীনের উন্নয়নের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত করবে, আরও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করবে। শুল্কের প্রভাব মোকাবেলায় হংকং  আরও বিদেশি কোম্পানি এবং মূলধন আকর্ষণ করবে , সেইসাথে  স্থানীয় উদ্যোগগুলিকে সহায়তা করবে।

সূত্র : এপি নিউজ

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status