বিশ্বজমিন
সায়েন্স ফিকশন নয়, সত্যি!
মনের কথা বলে দেয় কম্পিউটার
মানবজমিন ডেস্ক
(১ মাস আগে) ২৩ মার্চ ২০২৫, রবিবার, ৩:৩৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১:৪৫ অপরাহ্ন

ভাবুন তো, আপনার ব্রেনে একটি চিপ ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। তা আপনার চিন্তাভাবনাকে ডিজিটাল ব্যবস্থায় পরিবর্তন করে কম্পিউটার কমান্ডে রূপ দিচ্ছে। ভাবতে পারেন কোনো সায়েন্স ফিকশন বা কল্পবিজ্ঞানের কাহিনী শোনাচ্ছি। আরে না, সত্যি এমন ঘটনা ঘটেছে নোল্যান্ড আরবা’র ক্ষেত্রে। তিনি প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হওয়ার আট বছর পর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ৩০ বছর বয়সে এ চিপ গ্রহণ করেছেন। নিউরালিংক নামের যুক্তরাষ্ট্রের নিউরোটেকনোলজি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান এই চিপটি তৈরি করেছে। ফলে নোল্যান্ড আরবা’কে মুখ দিয়ে কিছু বলতে হয় না। মনের কথা কাউকে বুঝিয়ে বলতে হয় না। তিনি শুধু মনে মনে ভাবেন। সেই ভাবনা ব্রেনের চিপ কম্পিউটারে নিয়ে রূপান্তর করে। তবে এমন চিপ এটাই প্রথম নয়। এর আগেও অনেক কোম্পানি এমন চিপ তৈরি করেছে এবং তার বাস্তব প্রয়োগ করেছে। কিন্তু নোল্যান্ডের বিষয়টি অপরিহার্যভাবে বেশি মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। এর কারণ নিউরালিংকের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক। তবে নোল্যান্ডের কাছে তিনি নিজে বা ইলন মাস্ক কেউই গুরুত্বপূর্ণ নন। গুরুত্বপূর্ণ হলো বিজ্ঞান। এই বিজ্ঞানই তার বিকলাঙ্গ জীবনে গতি এনেছে। নোল্যান্ড বলেছেন, এই চিপ ব্যবহারের ফলে ঝুঁকির বিষয় তিনি জানেন। হয় ভালো হবে, না হয় খারাপ হবে। কিন্তু সেটা তো তাকে সহায়তা করবে।
তিনি আরও বলেন, যদি সবকিছু ঠিকমতো কাজ করে তাহলে আমি হবো নিউরালিংকের একজন অংশগ্রহণকারী। যদি ভয়াবহ কিছু ঘটে, তাহলে আমি জানি তা থেকে তারা (নিউরালিংক) কিছু শিখতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় বাড়ি নোল্যান্ডের। তিনি ২০১৬ সালে ডুবুরি হিসেবে কাজ করার সময় দুর্ঘটনায় পড়েন। তাতে কাঁধ থেকে তার শরীরের নিচের অংশ প্যারালাইসিস হয়ে যায়। তার এই অসুস্থতা এতটাই প্রখর ছিল যে, তিনি মনে করেছিলেন আর পড়াশোনা চালাতে, কাজ করতে এমন কি আর কখনো খেলাধুলা করতে পারবেন না। তিনি বলেন, নিজের ওপর আমার নিয়ন্ত্রণ ছিল না। কোনো গোপনীয়তাও ছিল না। সবই ছিল আমার কাছে কঠিন বিষয়। এমন অবস্থায় সবকিছুর জন্য আমাকে অন্য মানুষের ওপর নির্ভর করতে হবে। নোল্যান্ডের ব্রেনে যে চিপটি বসানো হয়েছে তাকে নোল্যান্ডের মনকে কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে। এটা ব্যবহার করে নোল্যান্ডের পেছনের সব স্বাধীনতার বিষয় ফেরানোর চেষ্টা চলছে। এই চিপটি পরিচিত ব্রেন কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) নামে। মানুষ চলাচল করার সময় যেসব বিষয় ভাবে তাকে বৈদ্যুতিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আবেগে পরিণত করে এবং তাকে ডিজিটাল কমান্ডে পরিবর্তন করে। যেমন একটি স্ক্রিনের ওপর একটি কার্সার করে। বিজ্ঞানের এই জটিল শাখাটি নিয়ে বেশ কয়েক দশক ধরে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। অপরিহার্যভাবে এই ক্ষেত্রে ইলন মাস্কের জড়িত হওয়ার ফলে নোল্যান্ড আরবা’র বিষয়টি সংবাদ শিরোনাম হয়েছে।
ফলে নিউরালিংকে প্রচুর বিনিয়োগ আকৃষ্ট হয়েছে। যখন নোল্যান্ডের ব্রেনে ওই চিপটি বসানোর ঘোষণা দেয়া হয়, তখন বিশেষজ্ঞরা এর প্রশংসা করে বলেন, এটা বড় এক মাইলফলক। ওই সময় মাস্ক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে লিখেছিলেন, প্রাথমিক ফলাফলে নিউরন স্পাইকগুলো কাজ করছে। নোল্যান্ড বলেছেন, বাস্তবে এই বিলিয়নিয়ার তার চেয়েও অনেক বেশি আশাবাদী। নিউরালিংক তার মালিকের চেয়ে অনেক বেশি কিছু। তাই এই চিপকে ইলন মাস্ক ডিভাইস হিসেবে বিবেচনা করতে রাজি নন।
অপারেশন শেষে নোল্যান্ড যখন চেতনা ফিরে পান, তখন তিনি শুরুতেই নিজের আঙ্গুল নাড়ানোর চিন্তা করার মাধ্যমে স্ক্রিনে একটি কার্সার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, বাস্তবেই বলছিÑ আমি কি আশা করছি। বিষয়টি খুব বেশি সায়েন্স ফিকশনের মতো শোনায়। এখন তিনি এই চিপ ব্যবহার করে স্বাভাবিক কাজের অনেকটাই করতে পারছেন।