শেষের পাতা
চিরনিদ্রায় শায়িত আরেফিন সিদ্দিক
স্টাফ রিপোর্টার
১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার
চিরনিদ্রায় শায়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। গতকাল বিকালে রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে, শুক্রবার সকালে রাজধানীর গ্রীন রোডে নিজ বাসার পাশের মসজিদে আরেফিন সিদ্দিকের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। স্বজন, দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাতে অংশ নেন। এরপর বাদজুমা ধানমণ্ডির ঈদগাহ্ মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে, সার্বিক নিরাপত্তা ও পরিবারের অসম্মতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। ড. আরেফিন সিদ্দিকের ছোট ভাই সাইফুল্লাহ সিদ্দিক তুহিন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে মস্তিষ্কে স্ট্রোক ও রক্তক্ষরণ হয়ে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তার ভাই। গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন ঢাবি’র সাবেক এই ভিসি।
জানা গেছে, গত ৬ই মার্চ ঢাকা ক্লাবে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় হঠাৎ পড়ে যান তিনি। এরপর তাকে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা শুরুর পর তাকে নিউরো আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতাল এবং মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ডকুমেন্টস পাঠানো হয়েছিল। ঢাকার ডাক্তাররা অনুমতি দিলে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে আরেফিন সিদ্দিককে সিঙ্গাপুরে নেয়ার পরিকল্পনাও করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭তম ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর ভিসি’র দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৭ সালে আবারো গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে যোগ দেন। অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময়ে পদাধিকার বলে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
এর আগে, ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক, ১৯৯৪ ও ১৯৯৬ সালে সাধারণ সম্পাদক এবং ২০০৪ ও ২০০৫ সালে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সঙ্গে ছিলেন। ২০২০ সালের জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে অবসরে যান তিনি। ২০২০ সালের ১৫ই জুলাই তাকে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হয়।
আরেফিন সিদ্দিক তার বাবার ওয়াপদার চাকরির বদলির সুবাদে বিভিন্ন এলাকায় শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন। তার প্রথম স্কুল সিরাজগঞ্জে-বিএল স্কুল এবং পরে ভিক্টোরিয়া স্কুল। এরপর খুলনায় তার বাবা বদলি হওয়ার পর দৌলতপুর মুহসীন স্কুল থেকে ১৯৬৯ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি এবং ১৯৭১ সালে (১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ায় পরীক্ষা হয় ১৯৭২ সালে) সরকারি বিএল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭৩ সালে বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে এমএস শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৭৫ সালে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮০ সালে অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৮২ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে ভারতের মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
পাঠকের মতামত
শ্রদ্ধেয় আরেফিন সিদ্দিকী'র আত্নার মাগফেরাত কামনা করছি তাঁর পরিবারের জন্য রইলো সমবেদনা।