ঢাকা, ৪ মার্চ ২০২৫, মঙ্গলবার, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

বেতন নিয়ে বিপাকে সাড়ে তিন লাখ শিক্ষক

পিয়াস সরকার
১ মার্চ ২০২৫, শনিবারmzamin

ফাইল ফটো

সামনে রমজান মাস। এখনো জানুয়ারি মাসের বেতন পাই নাই। সংসার চালানো মুশকিল হয়ে গেছে। অসহায়ত্বের সুরে এমনটাই বলেন নোয়াখালী থেকে আসা শিক্ষক আসাদুল্লাহ মিয়াজী। বলেন, না পারি মানুষের কাছে ধার-দেনা করতে আবার না পারি ভিন্ন পেশায় যেতে। আমার বাসা ভাড়া বাকি পড়েছে এক মাসের। কিস্তি দেয়া লাগে। ঋণ করে আর চলতে পারছি না। আমার ওষুধ কেনা লাগে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকার। ফার্মেসিতেও বাকি পড়ছে। আসাদুল্লাহ মিয়াজী। ঢাকা মেডিকেলে এসেছিলেন অসুস্থ ভাগ্নিকে দেখতে। এরপর আসেন মাউশি’তে (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর)। উদ্দেশ্য বেতনের খোঁজ নিতে। আসাদুল্লাহ মিয়াজী বেতনের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু মাউশিতে প্রতিদিন কয়েকজন করে শিক্ষক-কর্মচারী আসেন সার্ভারে নাম উঠানোর জন্য। তথ্যগত ভুলের কারণে নাম আসেনি তাদের সার্ভারে। দিনাজপুর থেকে মাউশিতে এসেছিলেন শিক্ষক শাকিল চৌধুরী। তিনি বলেন, আমার জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সনদপত্রের নামের মিল নেই। এখন তড়িৎ নামটাও সংশোধন করতে পারছি না। এই কারণে সার্ভারে এন্ট্রি দিতে পারিনি। বেতন ছাড়া অনেক কষ্টে জীবন চলছে।

ফেব্রুয়ারিও শেষ। এখনো বেসরকারি স্কুল-কলেজের এমপিওভুক্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর পকেটে আসেনি জানুয়ারির বেতন। কর্মকর্তারা বলছেন, এপ্রিল পর্যন্ত বেতন নিয়ে এই অস্বাভাবিকতা থাকতে পারে। আর এক থেকে দুই কর্মদিবসের মধ্যেই মিলবে জানুয়ারি মাসের বেতন। নতুন প্রক্রিয়ায় বেতন দেয়া শুরু করেছে সরকার। ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে শিক্ষকদের দেয়া হচ্ছে বেতন। আগে এনালগ পদ্ধতিতে বেতন দেয়া হতো। এর মাধ্যমে নানা ভোগান্তির মুখে পড়তেন তারা। নির্ভুল তথ্য সরবরাহ করা শিক্ষক-কর্মচারীরা অপেক্ষা করছেন বেতনের জন্য। কিন্তু অনেকেই নির্ভুল ও একই তথ্য দিতে না পারায় নামই ওঠাতে পারেননি সার্ভারে। মাউশি’ও রয়েছে বিপাকে।

মাউশি বলছে, নতুন একটি প্রক্রিয়া। তাই কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। মাউশি থেকে পত্র গেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে ছাড়পত্র পাস হলেই মিলবে বেতন। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারির বেতনের আবেদন পাস হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারির বেতন নিয়ে এখনো কাজই শুরু করেনি ইএফটি সেল।

শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন সহজলভ্যভাবে পৌঁছানোর তাগাদা থেকে গত ৫ই অক্টোবর থেকে ইএফটি চালু হয়। প্রথম ধাপে পরীক্ষামূলক ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের এমপিও ইএফটিতে ছাড় হয়। পরবর্তীতে গত ১লা জানুয়ারি ১ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতার সরকারি অংশের টাকা পেয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে ৬৭ হাজার, তৃতীয় ধাপে ৮৪ হাজার এবং চতুর্থ ধাপে ৮ হাজার ২০০’র অধিক শিক্ষক-কর্মচারীকে বেতন দেয়া হচ্ছে। প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপে শিক্ষক-কর্মচারীরা ডিসেম্বর মাসের বেতন পেলেও এখনো জানুয়ারি মাসের বেতন পাননি।

বেতন দিতে বেশ চাপেই রয়েছে মাউশি। তারাও কিছুটা ছাড় দেয়ার পথে। মাউশি’র এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ইএমআইএস) সেল জানায়, প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে নাম। অনেকেরই নাম সনদপত্রের সঙ্গে মিলছে না। আগে সমস্যা হয়নি কিন্তু সার্ভারে ভিন্ন নামের কারণে আটকে গেছেন। আবার অনেক নারী বিবাহের পর পরিবর্তন করেছেন নামের। আবার অনেকেরই ডট, কমা, হাইফেন ইত্যাদিতে রয়েছে ভিন্নতা। তবে ইএফটি সেল ডট, কমা, হাইফেন এসবে ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেভাবেই সংশোধন করা হবে সার্ভার। তবে যাদের সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রে নামের ভিন্নতা প্রবল (৫০ শতাংশের বেশি অমিল) ও জন্ম তারিখ সঠিক নয়- তাদের সংশোধন করেই ইএফটিতে যুক্ত হতে হবে।

সার্বিক বিষয়ে ইএমআইএস সেলের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট খন্দকার আজিজুর রহমান বলেন, কাজটি খুবই জটিল। এখানে প্রতিটি শিক্ষকের তথ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে। আমরা ছাড় দেয়ার প্রবণতা দেখাচ্ছি কিন্তু ভুল করতে চাই না। আমাদের লোকবলেরও সংকট রয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এপ্রিলের মধ্যে সকল জটিলতা মুক্ত হওয়া সম্ভব হবে।  

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব (বাজেট) লিউজা-উল-জান্নাহ বলেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। শিক্ষকরা কষ্টে আছেন এটা সত্য। তবে নতুন একটি প্রক্রিয়া শুরু করলে কিছুটা জটিলতা থেকে যায়। আমরা জানুয়ারি মাসের বেতন ছাড় করতে কাজ করছি। বেতন নিয়মিতকরণ নিয়েও আমরা কনসার্ন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম-সচিব (বাজেট অধিশাখা) মোর্শেদা আক্তার বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব নিয়ে দেখা হচ্ছে।

পাঠকের মতামত

মাউশিতে যারা কর্মরত আছেন তাদের অধিকাংশরই সততার ঘাটতি রয়েছে।

md.bablu
১ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ৪:২৪ অপরাহ্ন

দয়া করে আমাদের দেশে এই পেশায় যেন কেউ না আসে.... পৃথিবীর সবকিছু পরিবর্তন হবে এদেশের শিক্ষক কর্মচারিদের ভাগ্যের কখনো পরিবর্তন হবে না...... পেটে খুদা তার উপর আবার খুদার্থ মানুষ গুলোকে দিয়ে মানসম্মত শিক্ষার আশা করি.....

তপু
১ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ২:৪৩ অপরাহ্ন

পৃরথম লটে যাদের ইএফটিতে বেতন এসেছিল তাদের বেতনও আটকে গেছে। এর পিছনে কী যুক্তি থাকতে পারে? প্রথমবার সবকিছু ঠিক ছিল বলেই EFT তে বেতন এসেছিল। MPO শিক্ষকরা সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার! স্বাধীনতার এত বছর পরেও এই সেক্টর এত হয়রানিমূলক ভাবা যায় না! সময়মতো বেতন না পেলে শিক্ষকরা কী পাঠদান করবে!

কে. জামান
১ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ১:৪৭ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status