ঢাকা, ১২ মার্চ ২০২৫, বুধবার, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

ড. সিরাজুল আই. ভূইয়া

মানবজমিন-এর যাত্রা: সাহস, অধ্যবসায় এবং সত্যের উত্তরাধিকার

(২ সপ্তাহ আগে) ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৪:৩২ অপরাহ্ন

mzamin

সাংবাদিকতাকে প্রায়ই ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ বলা হয়। একটি নজরদারি শক্তি যা ক্ষমতাধারীদের জবাবদিহির মধ্যে রাখে। কিন্তু বিশ্বের অনেক অঞ্চলে সত্য কথা বলায় অনেক বড় মূল্য দিতে হয়। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ বাংলাদেশ, যেখানে দেশের প্রথম বাংলা ভাষার ট্যাবলয়েড দৈনিক মানবজমিন সরকারি দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করেও সাহসী সাংবাদিকতার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
গত ২৭ বছর ধরে মানবজমিন একের পর এক সরকারি নিপীড়নের শিকার হয়েছে। সম্পাদককে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে, এবং পত্রিকাটির কার্যক্রমকে হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত বাধার মধ্যেও পত্রিকাটি কখনোই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার সংকল্প থেকে পিছু হটেনি। মানবজমিন-এর এই পথচলা শুধুমাত্র একটি পত্রিকার টিকে থাকার গল্প নয়; এটি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিরোধের সাক্ষ্য।

পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর জীবনকাহিনি বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বৃহত্তর সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সামরিক শাসন থেকে শুরু করে বেসামরিক স্বৈরশাসন, তিনি সবকিছুর সাক্ষী এবং ভুক্তভোগী। হুমকি, কারাবাস, নির্বাসন সবকিছু সহ্য করেও তিনি কখনো সত্য প্রকাশের দায়িত্ব থেকে সরে যাননি। তাঁর অবিচল নীতি সবসময় একটাই ছিল: ‘মানবজমিন কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। এটি কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর সেবা করে না। এটি কেবল সত্যের সেবা করে।’ এই নিবন্ধটি স্বাধীন সাংবাদিকতার অপরিহার্য ভূমিকাকে তুলে ধরতে চায়, বিশেষত সেইসব দেশে যেখানে স্বৈরশাসকরা জনমত নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। মানবজমিন এবং এর সাংবাদিকরা কীভাবে সরকারি দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন, সেন্সরশিপ, হুমকি, এমনকি নির্বাসিত হওয়া পর্যন্ত সেই গল্পই এই লেখায় উঠে এসেছে। কিন্তু তারা কখনো নীরব হয়নি। তাদের এই সংগ্রাম শুধুমাত্র একটি সংবাদপত্রের নয়, এটি বাংলাদেশের মুক্ত গণমাধ্যমের বৃহত্তর লড়াই।

স্বাধীন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে হুমকি শুধু নথিভুক্ত করাই নয়, এই নিবন্ধটি সাংবাদিকদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তাকেও জোরালোভাবে তুলে ধরে। আইনি সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা, এবং আন্তর্জাতিক চাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধুমাত্র একটি আদর্শিক কল্পনা না হয়ে বাস্তবায়িত সত্য হয়ে ওঠে। যদি এই সুরক্ষাগুলো না থাকে, তাহলে সাংবাদিকতা রাজনৈতিক শক্তির ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে, এবং গণতন্ত্রও দুর্বল হয়ে পড়বে।

সত্যের প্রতি এক অবিচল প্রতিশ্রুতি: 
মানবজমিন এবং এর প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর গল্প শুধুমাত্র একটি পত্রিকার নয়, এটি সত্য বলার মৌলিক অধিকারের গল্প। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে, সামরিক শাসন থেকে বেসামরিক স্বৈরশাসন পর্যন্ত মি. চৌধুরী হুমকি, নির্বাসনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু সত্যের প্রতি তার অঙ্গীকার কখনো টলে যায়নি। 

আমরা যখন মানবজমিন-এর নির্ভীক সাংবাদিকতার কথা ভাবি, তখন আমাদের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে: গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র কি টিকে থাকতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর শুধু বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে না, বরং দেশের গণতন্ত্রের স্থায়িত্বও নির্ভর করবে এর ওপর। এমন এক সময়ে, যখন মিথ্যা তথ্য এবং প্রচারণামুক্ত সমাজের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে দিচ্ছে, সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো শুধু একটি বিকল্প নয়- এটি আমাদের দায়িত্ব।

শাসনের পর শাসন নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই: বাংলাদেশে সাংবাদিকতা কখনোই সহজ পেশা ছিল না, তবে ধারাবাহিকভাবে একের পর এক সরকার আসার পর এই চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। নিপীড়নের সূচনা শেখ হাসিনার শাসনামলে হয়নি; এটি অনেক আগের থেকেই চলে আসছে, বিশেষ করে ১৯৮০-এর দশকে স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনকাল থেকে।
এরশাদের একনায়কত্বের সময় সাংবাদিকদের নিয়মিত হয়রানি, গ্রেপ্তার, এবং সেন্সরশিপের শিকার হতে হতো। মতিউর রহমান চৌধুরী এবং তার সহকর্মীরা দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য প্রকাশ করার কারণে বারবার টার্গেট হয়েছিলেন। সে সময়ে প্রেস সেন্সরশিপ ছিল চরমে, এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করতে নির্মম শক্তি প্রয়োগ করা হতো।

এরশাদের পতনের পরও গণমাধ্যমের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধ হয়নি। খালেদা জিয়ার বিএনপি সরকার এবং পরবর্তীতে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেও সাংবাদিকরা সত্য প্রকাশের জন্য হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। তবে গত ১৬ বছরে শেখ হাসিনার শাসনামল ছিল মানবজমিনের জন্য সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোর একটি। এই সময় সরকার সাংবাদিকদের দমন করার জন্য আরও সূক্ষ্ম এবং পরিকল্পিত কৌশল গ্রহণ করে। এর বিপরীতে লড়েছে মানবজমিন। এটি শুধুমাত্র মানবজমিন-এর লড়াই ছিল না, এটি ছিল বাংলাদেশের স্বাধীন সাংবাদিকতার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।

হুমকি ও নির্বাসনের মধ্যেও নির্ভীক সাংবাদিকতা: শেখ হাসিনার শাসনামলে মানবজমিন সরকারি প্রতিশোধের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল, বিশেষত তাদের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কারণে। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে পত্রিকাটির নির্ভীক সত্য অনুসন্ধান সরকারকে বারবার অস্বস্তিতে ফেলেছে। সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার মধ্যে ছিল বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু সংক্রান্ত তদন্ত। হাসিনা সরকার এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো রিপোর্টটিকে ‘ভুয়া সংবাদ’ বলে উড়িয়ে দেয় এবং এর বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করার চেষ্টা করে। এমনকি একটি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত গণমাধ্যম পাল্টা প্রতিবেদন প্রকাশ করে জনমত বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু হাসিনা সরকারের পতনের পর, আদালতের আদেশে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে হারিছ চৌধুরীর মেয়ে নিশ্চিত করেন যে মানবজমিন-এর প্রতিবেদন সঠিক ছিল, তার বাবা বহু বছর ধরে ছদ্মনামে জীবনযাপন করছিলেন। সম্প্রতি শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের বয়ান প্রকাশ করে দেশ-বিদেশে আলোড়ন তৈরি করেন মতিউর রহমান চৌধুরী।

আরেকটি যুগান্তকারী তদন্ত ছিল ‘ক্যাসেট স্ক্যান্ডাল’, যা রাজনৈতিক দুর্নীতির বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করে দেয়। প্রতিবেদনটি এতটাই ধ্বংসাত্মক ছিল যে, সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতিও সত্যতা স্বীকার করে পদত্যাগ করেন। তবে শক্তিশালী প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সম্পাদক মাহবুবা চৌধুরী এবং প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দন্ড দেয়া হয় পত্রিকাটিকে চুপ করানোর অপচেষ্টার অংশ হিসেবে। এমনকি এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত সাবেক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও পরবর্তীতে স্বীকার করেন যে, মানবজমিন-এর প্রতিবেদন পুরোপুরি সত্য ছিল।

সবচেয়ে সাম্প্রতিক সময়ে, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়েও মানবজমিন-এর সত্যনিষ্ঠ রিপোর্টিং আবারো সরকারকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। যখন আন্দোলন তীব্রতা পায়, তখন সরকার পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয় এবং এর প্রধান সম্পাদককে নির্বাসনে যেতে বাধ্য করে। 

অবশেষে, শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছাড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ২রা আগস্ট মতিউর রহমান চৌধুরী এবং তার পরিবার দেশত্যাগে বাধ্য হন। ৫ই আগস্ট সরকার পতন হয় এবং হাজার হাজার বাংলাদেশি রাস্তায় নেমে বিজয় উদ্যাপন করে। কিন্তু মি. চৌধুরী সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে পারেননি। 

নাজুক গণতন্ত্রে স্বাধীন গণমাধ্যমের ভূমিকা: একটি দেশের গণতন্ত্র ঠিক ততটাই শক্তিশালী, যতটা স্বাধীনতার সুযোগ তার গণমাধ্যম পায়। যখন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করা হয়, তখন গণতন্ত্র শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাস এই সত্যের নির্মম প্রতিচিত্র। আওয়ামী লীগের শাসনামলে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা কাঠামোবদ্ধ দমননীতির মাধ্যমে ক্ষুণ্ন হয়েছে; সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বিরোধী কণ্ঠস্বর দমন করা হয়েছে, এবং যারা সরকারকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস দেখিয়েছে, তাদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করা হয়েছে। সরকারের গুম, বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহার এবং নির্বাচনী জালিয়াতির কৌশল গণতন্ত্রের মুখোশে স্বৈরতন্ত্রের বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে।

এখন, যখন বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে, প্রকৃত প্রশ্ন হলো শুধু কী ভুল হয়েছে তা খুঁজে বের করা নয়, বরং কীভাবে নিশ্চিত করা যায় যে, এমন স্বৈরাচার কখনোই আর ফিরে আসবে না। এই রূপান্তরের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে হবে একটি স্বাধীন ও মুক্ত গণমাধ্যমকে। যদি এটি না থাকে, তাহলে ইতিহাস নিজেকে পুনরাবৃত্তি করবে।

গণমাধ্যম, গণতন্ত্রের অভিভাবক: থমাস জেফারসন একবার লিখেছিলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর নির্ভর করে, এবং এটিকে সীমিত করা মানে এটিকে হারিয়ে ফেলা।’ এই নীতি তখন যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আজও তেমনই প্রাসঙ্গিক। একটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যম কার্যকর গণতন্ত্রের ভিত্তি, এটি নজরদারির ভূমিকা পালন করে, দুর্নীতির পর্দা ফাঁস করে, ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহিতার আওতায় আনে এবং নিপীড়িতদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরে।

বাংলাদেশে মানবজমিন-এর মতো সংবাদমাধ্যমগুলো এই দায়িত্ব সাহসের সঙ্গে বহন করে চলেছে, সরকারি দমন-পীড়নের মুখেও। নির্বাচন কারচুপি, পুলিশি নির্যাতন, কিংবা রাজনৈতিক অভিজাতদের আর্থিক কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ করেও তারা কখনো পিছু হটেনি। সত্যের প্রতি তাদের অবিচল প্রতিশ্রুতি এসেছে বড় মূল্য দেয়ার মাধ্যমে, সরকারি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে শুরু করে তাদের সম্পাদককে নির্বাসনে পাঠানো পর্যন্ত। তবে, জর্জ অরওয়েলের সেই বিখ্যাত উক্তি আজও গণমাধ্যমের প্রকৃত দায়িত্ব মনে করিয়ে দেয়: ‘সাংবাদিকতা হলো সেটাই যা কেউ প্রকাশ করতে চায় না; বাকিটা হলো জনসংযোগ।’  মানবজমিন কখনো জনসংযোগের মুখপত্র হয়ে যেতে রাজি হয়নি। তারা সত্য প্রকাশের জন্য লড়াই করেছে এবং তাদের এই সংগ্রামই গণতন্ত্রের টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য।

আওয়ামী পরবর্তী যুগের চ্যালেঞ্জ:
বাংলাদেশ যখন গণতান্ত্রিক অখণ্ডতা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে, তখন গণমাধ্যম সংস্কারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার সম্মুখীন। তারা কি সত্যিই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করবে, নাকি সেন্সরশিপের পুরনো অভ্যাস বজায় থাকবে? রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝতে হবে যে, জবাবদিহিতা ছাড়া গণতন্ত্র দুর্বল থেকে যাবে। ইতিমধ্যেই নতুন প্রশাসনের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে সাবেক শাসকগোষ্ঠীর কিছু উপাদান এই বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে আবার ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করতে পারে। কার্ল বার্নস্টাইন, যিনি ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির বিষয়টি ফাঁস করেছিলেন, একবার সতর্ক করে বলেছিলেন: ‘আজকের সংবাদমাধ্যমে সবচেয়ে বড় অপরাধ হলো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়া।’ এই বক্তব্য বাংলাদেশে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। যদি গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রকাশ করতে না পারে এবং অনিয়ম উন্মোচন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এটি কেবল প্রাসঙ্গিকতা হারাবে না বরং তা ন্যায়বিচারের হাতিয়ার না হয়ে কেবল প্রোপাগান্ডার একটি যন্ত্রে পরিণত হবে।

মানবজমিনের পথচলা সত্যের মূল্যকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে: 
সরকারি প্রতিশোধ, অর্থনৈতিক চাপ এবং প্রধান সম্পাদককে নির্বাসনে পাঠানো এসব কিছু সত্ত্বেও মানবজমিন কখনোই বিচ্যুত হয়নি তাদের নীতিবোধ থেকে। নোবেল বিজয়ী মারিয়া রেসা একবার বলেছিলেন: ‘তথ্য ছাড়া সত্য সম্ভব নয়। সত্য ছাড়া বিশ্বাস গড়ে ওঠে না। আর বিশ্বাস ছাড়া আমাদের কোনো সম্মিলিত বাস্তবতা থাকে না, গণতন্ত্রও টিকে থাকতে পারে না।’ বাংলাদেশের জনগণ ভীতিহীন ও মুক্ত সাংবাদিকতার অধিকার রাখে। দেশের দুর্বল গণতন্ত্র আরেকটি দমন ও প্রোপাগান্ডার যুগ সহ্য করতে পারবে না। সাংবাদিকদের ক্ষমতা দিতে হবে যাতে তারা তাদের প্রকৃত দায়িত্ব পালন করতে পারে ক্ষমতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সত্য প্রকাশ করতে পারে। শুধুমাত্র এই পথেই বাংলাদেশ তার স্বৈরাচারী অতীতকে অতিক্রম করে এমন একটি ভবিষ্যৎ গড়তে পারবে, যেখানে গণতন্ত্র শুধু একটি প্রতিশ্রুতি নয়, বরং বাস্তবতা হবে।

মানবজমিন: বাংলাদেশের সাংবাদিকতার অবিচল বাতিঘর
ইতিহাসজুড়ে গণমাধ্যম গণতন্ত্র গঠনে, দুর্নীতি উন্মোচনে এবং ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে এক অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেছে। 

মানবজমিন তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই নীতি ধারণ করে চলেছে। চাপ, সেন্সরশিপ কিংবা ভয়ভীতির কাছে কখনোই মাথা নত করেনি। এর নির্ভীক প্রতিবেদনের প্রতি প্রতিশ্রুতি একে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, অর্থনৈতিক দমননীতি, এবং আইনি হয়রানির প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। তবুও, মানবজমিন দুর্নীতির বিরুদ্ধে আলোকপাত করতে, ন্যায়বিচারের দাবি জানাতে এবং নিপীড়িতদের কণ্ঠ তুলে ধরতে কখনো পিছপা হয়নি। গণতান্ত্রিক সরকার হোক বা স্বৈরশাসন মানবজমিন তার লক্ষ্য থেকে কখনো বিচ্যুত হয়নি। এর একমাত্র মিশন: নির্ভয়ে ও নিরপেক্ষভাবে জনগণকে তথ্য প্রদান করা। বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার এই অদম্য লড়াইয়ের প্রতীক হিসেবে মানবজমিন দাঁড়িয়ে আছে, প্রমাণ করেছে যে সত্য বলা কোনো বিশেষ অধিকার নয় এটি একটি দায়িত্ব।
ভবিষ্যতের পথ: বাংলাদেশের সাংবাদিকতাকে শক্তিশালী করা

বাংলাদেশ যখন একটি নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রবেশ করছে, তখন দেশটির সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দাঁড়িয়ে আছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে গণতন্ত্রের মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে রক্ষা করা হবে, নাকি স্বাধীন সাংবাদিকতাকে দমন করার দীর্ঘস্থায়ী চক্র অব্যাহত থাকবে? সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক আদর্শকে গ্রহণ করতে হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে শুধু সহ্য করা নয়, বরং সক্রিয়ভাবে সুরক্ষিত ও উৎসাহিত করতে হবে। এটি অর্জনের জন্য একটি বহুমুখী কৌশল গ্রহণ করা জরুরি:

১. সাংবাদিকদের জন্য আইনি সুরক্ষা বাংলাদেশে এমন কঠোর আইন বাতিল করতে হবে, যা সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের যৌক্তিক কারণ ছাড়াই গ্রেপ্তারের সুযোগ সৃষ্টি করে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এর মতো আইন ভিন্নমত দমন এবং সমালোচনামূলক সাংবাদিকতাকে অপরাধে পরিণত করতে ব্যবহৃত হয়েছে। সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ নয়, বরং কার্যকর গণতন্ত্রের অপরিহার্য অংশ।

২. প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা, এক্ষেত্রে গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। সরকার, রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ নির্বিশেষে, নির্ধারণ করতে পারে না যে গণমাধ্যম কী প্রকাশ করবে আর কী করবে না। স্বাধীন মিডিয়া কমিশন গঠন করা জরুরি, যা সাংবাদিকতার স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে।

৩. গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য জনসমর্থনও প্রয়োজন। একটি স্বাধীন গণমাধ্যম শুধু সাংবাদিকদের একার লড়াই নয়; এটি নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন প্রয়োজন। নাগরিকদের বুঝতে হবে যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু সাংবাদিকদের অধিকার নয়, এটি গণতন্ত্র রক্ষার একটি মৌলিক মানবাধিকার।

ওয়াল্টার ক্রনকাইট বলেছিলেন: ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধু গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি গণতন্ত্র নিজেই।’ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর যেমন ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস’ এবং ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস’ বাংলাদেশের গণমাধ্যমের প্রতি সরকারের আচরণের নিরবচ্ছিন্ন পর্যবেক্ষণ বজায় রাখতে হবে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাই গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ: 
বাংলাদেশ যদি সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে গণমাধ্যমকে ভয়ভীতির শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে হবে। একটি শক্তিশালী ও স্বাধীন সাংবাদিকতা ব্যবস্থা না থাকলে, দেশ আবারও দমন-পীড়নের চক্রে ফিরে যাবে। তাই এখনই সময় প্রেসের স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করা, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনা। শুধুমাত্র এই পথেই বাংলাদেশ একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবে।

মানবজমিনের উত্তরাধিকার: সত্যের মূল্য চুকানোর গল্প
মানবজমিনের পথচলা প্রমাণ করেছে যে শত্রুতাপূর্ণ গণমাধ্যম পরিবেশে সত্যকে রক্ষা করার মূল্য কতটা চড়া হতে পারে। প্রতিকূলতার মুখে তারা আপস না করে সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর পথ বেছে নিয়েছে। ইতিহাস আমাদের শেখায় যে কোনো দমনমূলক শাসন চিরদিন সত্যকে দমিয়ে রাখতে পারে না। বিখ্যাত সাংবাদিক কার্ল বার্নস্টাইন বলেছিলেন: ‘আজকের সংবাদমাধ্যমে সবচেয়ে বড় অপরাধ হলো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়া। অপ্রাসঙ্গিক হওয়া মানেই অস্বচ্ছ ও অসৎ হওয়া।’

মানবজমিন কখনোই প্রাসঙ্গিকতা হারাতে চায়নি। এর সত্যের প্রতি অবিচল প্রতিশ্রুতি শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং সারা বিশ্বের সাংবাদিকদের জন্য অনুপ্রেরণা, যারা সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে চলেছেন।
এখন প্রশ্ন হলো বাংলাদেশ কি একটি মুক্ত গণমাধ্যমকে গণতন্ত্রের শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করবে, নাকি সেন্সরশিপ ও দমনপীড়নের পুরনো পথেই হাঁটবে?
বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সাংবাদিকদের সাহস, প্রাতিষ্ঠানিক সততা, এবং জনগণের স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য দৃঢ় দাবির উপর। মানবজমিনের দৃঢ়তা একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠায়: সাংবাদিকতা শুধু সংবাদ প্রকাশের কাজ নয়, এটি গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রাম।

যারা গণমাধ্যমের শক্তিতে বিশ্বাস করেন, তাদের প্রতি: 
ইতিহাসজুড়ে গণমাধ্যম সত্যের নির্ভীক অভিভাবক হিসেবে কাজ করেছে, ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহির আওতায় এনেছে এবং নিপীড়িতদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরেছে। যখন স্বৈরতন্ত্র শক্তি বাড়ায় এবং গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে, তখন নির্ভীক সাংবাদিকতাই পথ দেখায়। একটি মুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া কোনো সমাজে স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার বা ক্ষমতাসীনদের চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ থাকে না।

ইতিহাস শুধু সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোদেরই মনে রাখে: 
বিশ্বজুড়ে অসংখ্য সরকার ও শাসক গণমাধ্যমকে স্তব্ধ করতে চেয়েছে, কিন্তু ইতিহাস দমনকারীদের নয়, বরং যারা প্রতিরোধ করেছে, তাদের মনে রাখে। ওয়াটারগেট থেকে পেন্টাগন পেপারস, আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশের সাহসী সাংবাদিকতা সংবাদমাধ্যম দুর্নীতি ও অবিচারকে ফাঁস করেছে, অনেক সময় নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, নির্বাসিত করা হয়েছে, এমনকি সত্য প্রকাশের জন্য প্রাণও দিতে হয়েছে। তবুও, তাদের উত্তরাধিকার আজও টিকে আছে।

সাংবাদিকতা শুধুমাত্র একটি পেশা নয়, এটি জনগণের প্রতি দায়িত্ব: 
একজন সাংবাদিকের কাজ কেবল তথ্য পরিবেশন করা নয় তারা জনগণকে সচেতন, শিক্ষিত ও ক্ষমতায়িত করার দায়িত্ব পালন করে। সত্যকে উদঘাটন করা এবং নিশ্চিত করা যে কোনো সরকার, নেতা বা প্রতিষ্ঠানই প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার ঊর্ধ্বে নয় এটাই সাংবাদিকতার আসল কাজ। বাংলাদেশে, যেখানে অতীত সরকারগুলো সেন্সরশিপ, হুমকি, এবং আইনি হয়রানির মাধ্যমে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে, সেখানে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রয়োজন এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

একটি স্বাধীন গণমাধ্যম ছাড়া ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়বে, দুর্নীতি বাড়বে, এবং ক্ষমতাসীনরা অপরিবর্তিত থেকে যাবে। গণমাধ্যম কঠিন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে, ভয়ের ঊর্ধ্বে উঠে তদন্ত করতে এবং সত্যকে কখনোই প্রোপাগান্ডার নিচে চাপা পড়তে দেয়া যাবে না। 

একটি মুক্ত গণমাধ্যমই একটি মুক্ত জাতির ভিত্তি: 
একটি জাতি শুধুমাত্র তখনই প্রকৃত স্বাধীন হতে পারে, যখন তার গণমাধ্যম মুক্ত থাকে।
স্বাধীন সাংবাদিকতা ছাড়া সচেতন ভোটার, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। যখন কোনো সরকার ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করে, তখন তারা গণমাধ্যমকে দুর্বল করে না তারা গণতন্ত্রকেই দুর্বল করে ফেলে। একটি শক্তিশালী, স্বাধীন গণমাধ্যম অবশ্যই যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে, কারণ এটি স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সর্বশেষ প্রতিরক্ষা। সাবেক মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হুগো ব্ল্যাক যথার্থই বলেছিলেন:‘গণমাধ্যম জনগণের সেবা করার জন্য, শাসকদের নয়।’
উপসংহার; নির্ভীক সাংবাদিকতার উত্তরাধিকার: মানবজমিন যখন তার নিরবচ্ছিন্ন মিশনের আরেকটি বছরে প্রবেশ করছে, তখন এটি নির্ভীক সাংবাদিকতার শক্তির জীবন্ত উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক নিপীড়ন, অর্থনৈতিক সংকট, এবং সেন্সরশিপের হুমকি এসব প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করেও প্রতিবারই আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ভয়ভীতি ও নির্বাসনের মুখে দাঁড়িয়েও, এটি সত্যের সঙ্গে কখনো আপস করেনি।

পত্রিকার অবিচল প্রধান সম্পাদক, মতিউর রহমান চৌধুরী, একবার বলেছিলেন: ‘আমরা সত্য লিখতে থাকব, যত মূল্যই দিতে হোক না কেন।’ এই কথাগুলো মানবজমিনের প্রকৃত চেতনার প্রতিফলন, একটি সংবাদপত্র যা কখনোই প্রতিকূলতার সামনে পিছপা হয়নি। বাংলাদেশের সবচেয়ে অন্ধকার রাজনৈতিক অধ্যায়গুলোতেও এটি নিজের অবস্থানে অটল থেকেছে, দমনমূলক শাসকদের প্রতিহত করেছে, এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার শেষ প্রতিরক্ষা হিসেবে দাঁড়িয়ে থেকেছে।

জর্জ অরওয়েল বলেছিলেন: ‘যদি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কোনো অর্থ থাকে, তবে তা হলো সমালোচনা এবং বিরোধিতার স্বাধীনতা।’ গণমাধ্যমের স্বাধীনতার লড়াই শুধু সাংবাদিকদের নয় এটি গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, এবং জনগণের সত্য জানার অধিকারের লড়াই। রাজনৈতিক শাসন আসে এবং চলে যায়, কিন্তু স্বাধীন সাংবাদিকতার ভূমিকা অপরিবর্তিত থাকে। 

 

(ড. সিরাজুল আই. ভূইয়া যুক্তরাষ্ট্রের সাভানা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক এবং সাবেক চেয়ারপার্সন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভারত, জাপান এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ফ্রিল্যান্স লেখক হিসেবে নিয়মিত লেখালেখি করেন। )
যোগাযোগ: [email protected]

পাঠকের মতামত

A GOOD WRITE-UP.

Prof. Dr. M. Zahangi
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২:২৭ অপরাহ্ন

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status