ঢাকা, ১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শান্তি সংলাপ নিয়ে ইউরোপ কেন উদ্বিগ্ন

মানবজমিন ডেস্ক

(৩ সপ্তাহ আগে) ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৬:১৪ অপরাহ্ন

mzamin

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি চুক্তি বিষয়ক আলোচনা শুরুর আগেই ইউরোপিয়ান নেতারা সোমবার প্যারিসে অনানুষ্ঠানিক এক বৈঠক করেছেন। তাতে তারা এই শান্তিচুক্তির বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন। তারা অব্যাহতভাবে ইউক্রেনকে সমর্থন দেয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। মস্কোর আগ্রাসন মোকাবিলায় তারা কিয়েভকে যৌথভাবে সমর্থন দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তবে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সংলাপ শুরুর মধ্যে ভিন্ন কিছু হতে পারে এমন কোনোরকম নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন ইউরোপিয়ান নেতারা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। উল্লেখ্য, ইউরোপিয়ান মিত্রদের উপেক্ষা করে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। ফলে কিয়েভের কর্মকর্তারা মনে করছেন তাদেরকে একপেশে করে ফেলছে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন। এ জন্যই তাদেরকে আলোচনার বাইরে রেখে সৌদি আরবে ওয়াশিংটন ও মস্কোর কর্মকর্তারা সরাসরি আলোচনা করছেন। এতে অংশ নিয়েছেন রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিকরা। মঙ্গলবারের এই মিটিংকে বিরল হিসেবে দেখা হয়। এ নিয়ে ভীতি প্রকাশ করেছে মস্কো। এই মিটিংয়ে অংশ নিতে সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালটজ এবং বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে পাঠিয়েছেন ট্রাম্প। তার ইউক্রেন বিষয়ক দূত কিথ কেলোগ শনিবার বলেছেন, এই আলোচনার টেবিলে ইউরোপের জন্য কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। পক্ষান্তরে ইউরোপিয়ান রাজধানীগুলোতে ওয়াশিংটন একটি প্রশ্নমালা পাঠিয়েছে। তাতে জানতে চাওয়া হয়েছে কিয়েভের জন্য তারা কী ধরনের নিরাপত্তা গ্যারান্টি দিতে পারে। কারা কারা সেনা মোতায়েনে প্রস্তুত। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ছায়ার নিচেই বেশি থেকেছে ইউরোপ। কিন্তু হোয়াইট হাউসে ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের পর থেকে নতুন প্রশাসন ইউরোপিয়ান অংশীদার বা তাদের প্রতিরক্ষার সঙ্গে সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেয়নি। ফলে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ইউরোপকে এখন ঐক্যবদ্ধ হতে হচ্ছে। অন্যদিকে ইউক্রেন বিষয়ে ওয়াশিংটন ও মস্কোর আলোচনার ওপর নির্ভর করবে তাদের ইউক্রেন বিষয়ক নির্ভরতা। রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আচরণই বা কেমন হবে সেটাও তাদের কাছে বড় প্রশ্ন। তবে ইউরোপিয়ানদের ভয় হলো তাদের মহাদেশের নিরাপত্তা কাঠামো পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। 
ন্যাটোকে পূর্বদিকে বিস্তৃত হওয়ার বিরুদ্ধে পুতিন। রাশিয়ার ক্ষুদ্র ও সাবেক সোভিয়েত বাল্টি স্টেট এবং পোল্যান্ড এখন বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজেদেরকে উদ্ভাসিত মনে করছে। ফরাসি পত্রিকা লা মন্ডে বলছে, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিচ্ছেদ ঐতিহাসিক। তবে ইউরোপকে দেখাতে হবে যে, তারা তাদের নিজেদের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার সক্ষমতা রাখে। এতে বলা হয়, ইউরোপের চোখ বন্ধ করে থাকার দিন মিউনিখে উদ্ভটভাবে শেষ হয়েছে। বর্তমানে তাদের মহাদেশের নিরাপত্তা নির্ভর করে একান্তই ইউরোপিয়ানদের ওপর। একই সঙ্গে তাদের ঐক্য ধরে রাখার ওপরও তা নির্ভর করে। 

প্যারিসে ইউরোপিয়ান নেতারা অনানুষ্ঠানিক যে সম্মেলন করেছেন সেখান থেকে দৃশ্যত কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের ধারণায় ব্যাপক বিভক্তি দেখা গেছে তাদের মধ্যে। ফ্রান্স এবং বৃটেন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চেয়েছে। সেনা মোতায়েনের প্রস্তাবে জার্মানি ভিন্নমত দেখিয়েছে। এই সম্মেলনে যোগ দেন জার্মানি, বৃটেন, ইতালি, পোল্যান্ড, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক, ন্যাটো এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নেতারা। তারা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করেছেন। আলোচনা করেছেন কিয়েভকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেয়া নিয়ে। একই সঙ্গে ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী মোতায়েন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। তিনি ইউক্রেনের জন্য শক্তিশালী এবং বিষ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে শান্তিচুক্তি ২০১৪ ও ২০১৫ সালের মিনস্ক চুক্তির মতো ব্যর্থ না হয়। পরে জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি এবং ম্যাক্রন কীভাবে শান্তি অর্জন করা যায় তা নিয়ে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন।টেকসই একটি শান্তিচুক্তির জন্য অন্যদের পাশাপাশি বৃটিশ সেনা মোতায়েনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার। তবে এতে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িত হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে থাকতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চয়তাই শুধুমাত্র রাশিয়াকে আবার ইউক্রেন আক্রমণে কার্যকরভাবে বিরত রাখতে পারে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন, একটি শক্তিশালী শান্তি প্রত্যাশা করে ইউক্রেন। তাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ভূখণ্ডের অখণ্ডতা শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর মাধ্যমে তা করা যেতে পারে। 

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status