ঢাকা, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪ রজব ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

ভূমি জরিপ কর্মকর্তার দুর্নীতি

কেশবপুরে উচ্ছেদ আতঙ্কে ১১ কৃষক পরিবার

নূর ইসলাম, যশোর ও আব্দুর রহমান, কেশবপুর থেকে
১২ জানুয়ারি ২০২৫, রবিবার

যশোরের কেশবপুরে ভূমি জরিপ কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে উপজেলার আলতাপোল গ্রামের ১১টি কৃষক পরিবার বসতভিটা, পুকুর-বাগান সবই হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। সরজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৬২ ও ১৯৯৬ সালের ভূমি (মাঠ) জরিপের সময় এলাকার একটি মহল পুরাতন ঘষামাজা পর্চা দেখিয়ে ওই ১১ কৃষক পরিবারের সর্বস্ব করে তাদের নিজ নিজ নামে রেকর্ড করে দখলে নেয়। তারা বর্তমানে উচ্ছেদ আতঙ্কে রয়েছে। ফলে পৈতৃক জমাজমি ও ভিটেমাটি ফিরে পেতে দীর্ঘ ৬০ বছর ধরে পরিবারগুলো আদালতসহ বিভিন্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফিরছেন। কিন্তু কোথাও মিলছে না ন্যায়বিচার। ফলে সর্বহারা এই পরিবারের সদস্যদের আইনের প্রতি বাড়ছে বীতশ্রদ্ধ। জানা গেছে, ১৯৬২ সালে তৎকালীন ভূমি জরিপ কর্মকর্তা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে কৃষক ইমান আলী গংদের কোনো ওয়ারিশ না হওয়া সত্ত্বেও তাদের ৬৬৯ শতক সম্পত্তি মাঠ পর্চায় সমান চার ভাগ করে দিয়ে যায়। ফলে ইমান আলী গংদের ৬৬৯ শতক সম্পত্তির মধ্যে ১৬৭.২৫ শতক জমি তাদের নামে রেকর্ড হয় এবং তাদের অবশিষ্ট জমি মৃত সাহেব আলী বিশ্বাস ও মৃত সামাদ আলী গংয়ের নামে রেকর্ড হয়। মৃত সাহেব আলী বিশ্বাসের ছেলে মজিবার রহমান ও মৃত সামাদ আলী বিশ্বাসের ছেলে নজরুল ইসলাম উক্ত সম্পত্তি রেকর্ড করান। রেকর্ড শর্তে মজিবার রহমান ও মতিয়ার রহমান গং এবং নজরুল ইসলাম গংরা জোরপূর্বক জমি দখল করে নেয়। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালের ভূমি জরিপে ১৬৭.২৫ শতক সম্পত্তির মধ্যে মাত্র ৫১ শতক জমি ইমান আলী গংয়ের মাতা শহরজান বিবির নামে রেকর্ড হয়। অবশিষ্ট জমিও প্রতিপক্ষরা রেকর্ড করে দখলে নেয়। প্রতিবারই মাঠ জরিপের সময় ভূমি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ঘষামাজা পর্চা দিয়ে কৌশলে ইমান আলী গংদের জমি রেকর্ড করে হাতিয়ে নেয় প্রতিপক্ষ মজিবার রহমান গং এবং নজরুল ইসলাম গংরা বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় ১৯৯৬ সালে ইমান আলী গং বাদী হয়ে মৃত সাহেব আলী বিশ্বাস ও মৃত সামাদ আলী বিশ্বাস গংয়ের নামে যশোর বিজ্ঞ দেওয়ানি আদালতে মামলা করেন। অবশেষে দীর্ঘ চেষ্টার পর ২০২৩ সালে ইমান আলী গংরা ঢাকা থেকে ৭৮৫ খতিয়ানের সহি মোহরীযুক্ত এসএ পর্চা সংগ্রহ করেন। যে পর্চায় এখনো তাদের ১৬৭.২৫ শতক জমি রয়েছে। পর্চা পেয়েই ১১ জন বাদী হয়ে ডিক্রি পেতে প্রতিপক্ষ মজিবার রহমান ও মতিয়ার রহমান গং এবং নজরুল ইসলাম গংদের ৫৭ জন ওয়ারিশকে বিবাদী করে যশোর বিজ্ঞ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। 
ইমান আলী অভিযোগ করেন, ওই জমির উপর আমার ও শরীকদের বসতঘর, পুকুর, শিশুগাছ, সুপারি ও বাঁশবাগান রয়েছে। তিনি রেকর্ড শর্তে জমির শরীক মকছেদ আলীর কাছ থেকে ৫৯.৫০ শতক, তার মেয়ে ইশারন নেছার কাছ থেকে ৪০ শতকসহ মোট ৯৯.৫ শতক জমি ক্রয় করেন। যা বিবাদীরা জোর করে দখল করে নিয়েছেন। এ ছাড়াও কোনো দলিল না থাকার পরও আব্দুস সাত্তার গং ১২ শতক ও সুশান্ত সিংহ ১২ শতক জমি জোরপূর্বক রেকর্ড করে দখলে নিয়েছে। বর্তমানে প্রতিপক্ষরা বসতভিটা থেকে আমাদের ১১ পরিবারকে উচ্ছেদ করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা নানাভাবে আমাদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতনসহ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে চলেছে।    
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মজিবার রহমান বলেন, ২০০৮ সালে ইমান আলী গংরা বাদী হয়ে আমার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। কিন্তু তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়। ফলে মামলার রায় আমাদের পক্ষে যায়। তারা আমাদের একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এক পর্যায়ে এসএ রেকর্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তার যুক্তির পক্ষে তিনি কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। বর্তমানে উপজেলার আলতাপোল গ্রামের ১১টি কৃষক পরিবার বসতভিটা, পুকুর-বাগান সবই হারিয়ে নিঃস্ব প্রায়। যেকোনো মুহূর্তে প্রতিপক্ষরা তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করে তাদেরকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করবে বলে তারা জানতে পেরেছেন।  
 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

Bangladesh Army

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status