শেষের পাতা
‘বখাটে’ দুলাভাই তরুণীর সর্বনাশ
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৩০ জুলাই ২০২২, শনিবার
বখাটে দুলাভাই আনোয়ারের চোখ পড়েছিল তরুণী শ্যালিকার ওপর। আকার-ইঙ্গিতে অশ্লীল ভাবভঙ্গি দেখাতো। এতে পাত্তা দিতো না তরুণী। একরাতে পরিবারের সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তরুণী শ্যালিকাকে নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিল দুলাভাই। এরপর সিলেট শহরের একটি বাসায় এনে তাকে ধর্ষণ করে। পরে পুলিশি চাপের মুখে ওই তরুণীকে ফেরতও দেয়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে গোয়াইনঘাট থানায়। এ নিয়ে তোলপাড় চলছে এলাকায়। উপজেলার ধর্মগ্রামের সিরাজউদ্দিন। গরিব কৃষক। ১ ছেলে ও ৫ মেয়ের জনক তিনি। ইতিমধ্যে ৩ মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন। তৃতীয় মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন আনোয়ার হোসেনের কাছে। আনোয়ারের সংসারে ৪ সন্তানও রয়েছে। তবে- আনোয়ারের নির্যাতনে ওই মেয়েও সংসারে তেমন সুখে নেই। দুলাভাই আনোয়ারের লোলুপ দৃষ্টি পড়ার কারণে ১৫ বছর বয়সী ওই তরুণীকেও বিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সিরাজ উদ্দিন। খুঁজছিলেন পাত্র।
এরইমধ্যে কয়েকটি বিয়ের প্রস্তাবও এসেছে। কিন্তু আনোয়ার হোসেন ওইসব পাত্রের কাছে শ্যালিকা সম্পর্কে নানা কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলে বিদায় করে দেয়। এ কারণে পাত্ররা এসে দেখলে বিয়ের কথাবার্তা চূড়ান্ত হচ্ছিল না। তরুণীর মা কুঠিন বেগম জানিয়েছেন, ‘আমরা জানি মেয়ের এখনো বিয়ের উপযুক্ত সময় হয়নি। আইনগতভাবে বিয়ে দিতে পারি না। এরপরও মান সম্মানের ভয়ে মেয়েকে অল্প বয়সেই বিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। কিন্তু তার আগেই আমার মেয়ের সম্ভ্রভহানি ঘটালো বখাটে। এমন ঘটনা ঘটবে, আমরা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি। ঘটনার পর থেকে মেয়েটিও চুপসে গেছে। তাকে নিয়ে এখন আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।’ মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে- গত ১৭ই জুলাই ওই তরুণীর দুলাভাই আনোয়ার হোসেন ও সম্পর্কে আত্মীয় শামীম আহমদ তরুণীর ধর্মগ্রামে আসে। রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। ভোরে ফজরের নামাজের সময় উঠে দেখেন তরুণী ঘরে নেই। সঙ্গে দুলাভাই আনোয়ার ও শামীমও নিরুদ্দেশ। এরপর থেকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। সব আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খুঁজলেও পাওয়া যায়নি তরুণীকে। ঘটনার পরদিন ১৮ই জুলাই রাতে দুলাভাই আনোয়ার হোসেন অপরিচিত এক নাম্বার থেকে ফোন করে তরুণীর পিতাকে। জানায়, তরুণীটি তার সঙ্গে রয়েছে। চিন্তা না করার কথাও বলেন।
এরপর তরুণীর পিতা সিরাজ উদ্দিন ঘটনাটি পুলিশকে জানান। এবং মেয়ের জামাই আনোয়ার হোসেন ও স্বজন শামীমকে অভিযুক্ত করেন। ঘটনা জানার পর গোয়াইনঘাট থানার ওসি কেএম নজরুল ইসলাম পুলিশি তৎপরতা জোরদার করেন। আনোয়ার হোসেনকে খুঁজতে থাকেন। চাপ প্রয়োগ করেন বিভিন্ন তরফ থেকে। এরপর ১৯শে জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে মামলার দ্বিতীয় আসামি শামীম আহমদ একটি সিএনজি অটোরিকশাযোগে ওই তরুণীকে গোয়াইনঘাট বারহাল এলাকার বাইপাসগামী রাস্তায় রেখে চলে যায়। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে শামীমকে গ্রেপ্তার করে। তবে, এখনো পলাতক রয়েছে আনোয়ার হোসেন। সে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। স্বজনরা জানিয়েছেন, রাতে ওই তরুণীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়ার পর তাকে বারহাল এলাকার তার আরেক বোনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে আইনি প্রক্রিয়া সমাপ্ত করে। বর্তমানে ওই তরুণী পিতার হেফাজতে রয়েছে। মামলার এজাহারে অপহৃত হওয়া তরুণীর ভাষ্যের বর্ণনা দিয়ে উল্লেখ করা হয়- দুলাভাই আনোয়ার হোসেন ওই তরুণীকে প্রায় সময় প্রেমের প্রস্তাবসহ ইশারা ইঙ্গিতে কুপ্রস্তাব দিতো। এতে রাজি না হওয়ার কারণে সে ক্ষিপ্ত হয়। ঘটনার দিন রাত ১টার দিকে ‘ভালো’ ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে ফুসলিয়ে জোরপূর্বক ঘর থেকে নিয়ে যায়।
পরে সিএনজি অটোরিকশাযোগে নিয়ে আসে সিলেট শহরের অজ্ঞাত একটি বাসায়। সেখানে দুলাভাই ওই তরুণীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে বলে জানায় ওই তরুণী। এদিকে, তরুণী উদ্ধারের পর গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ ২০শে জুলাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩: অপহরণ করত: ধর্ষণ সহায়তার অপরাধ আইনে একটি মামলা করেছে। আর ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে উপজেলার লামা সাতাইন গ্রামের আব্দুল রহিমের ছেলে শামীম আহমদকে। এছাড়া মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে লামা সাতাইন গ্রামের সিকন্দর আলীর ছেলে তরুণীর দুলাভাই আনোয়ার হোসেনকে। সে পলাতক রয়েছে। মামলার বাদী ওই তরুণীর পিতা দরিদ্র কৃষক সিরাজউদ্দিন জানিয়েছেন, ‘এক ঘরে দুই বোনের সংসার হয় না। এ কারণে আমার চতুর্থ মেয়ে আনোয়ারের প্রস্তাবে রাজি হয়নি। এরপর ঘটনার দিন ঠাণ্ডা পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে।’ তিনি জানান, ‘তার তৃতীয় মেয়ের সংসারে ৪টি মেয়ে রয়েছে। প্রয়োজনে ওই মেয়েকেও তার বাড়িতে নিয়ে আসবেন। এরপরও তিনি আনোয়ারের শাস্তি চান। আনোয়ার অমানুষের কাজ করেছে।’ পুলিশ জানিয়েছে, আনোয়ার ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি ঘটনার তদন্তও চলছে।