বাংলারজমিন
তিন সেতুতে বদলে যাচ্ছে হাওরের যোগাযোগ
আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে
১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার
কিশোরগঞ্জে হাওরের তিন প্রত্যন্ত উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে নির্মাণ হচ্ছে তিনটি সেতু। আর এই তিনটি সেতুতে বদলে যাবে হাওরের যোগাযোগ চিত্র। তিন উপজেলার আন্তঃযোগাযোগ ছাড়াও পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ জেলার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হবে। স্থানীয় লোকজনের চলাচল, কৃষিপণ্য পরিবহন হবে সহজতর। দুয়ার খুলবে হাওর পর্যটনেরও। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পর্যটন খাতের উন্নতি হলেও এগুলো ছিল অনেকটা অগোছালো। অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে এসব উন্নয়নের প্রকৃত সুফল পাচ্ছিল না হাওরবাসী। কৃষিপণ্য পরিবহনে ঝক্কি, চলাচলে দুর্ভোগ ও পর্যটকদের আবাসন সমস্যায় গতি পায়নি সেখানকার অর্থনীতি। এ পরিস্থিতিতে ওইসব খাত চাঙ্গা করতে হাওরে চলছে ব্যাপক তোড়জোড়। নির্মিত হচ্ছে বেশকিছু সেতু, সড়ক ও পর্যটকদের আবাসনের জন্য সার্কিট হাউজ। আর কয়েকশ’ কোটি টাকার এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
ইটনা উপজেলার বর্শিকুড়া এলাকায় ধনু নদীতে নির্মিত হচ্ছে প্রায় শত কোটি টাকার একটি সেতু। ৫৯০ মিটার দীর্ঘ সেতুটির কাজ শেষের দিকে। এটি খুলে দেয়া হলে হাওরের সঙ্গে তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হবে। স্থানীয়রা বলছেন, পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে এই দৃষ্টিনন্দন সেতু। বর্শিকুড়া গ্রামের আবুল কাশেম, সৌরভ ও দিদার বলেন, আমরা যে গ্রামে থাকি সে গ্রামে কেউ প্রেগন্যান্ট (গর্ভবতী) হলে খুব সমস্যা হতো। যাতায়াতে খুব ঝামেলা হতো। এই ব্রিজটা নির্মিত হলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবে প্রেগন্যান্ট মহিলারা। আর এই ব্রিজটি হলে এই এলাকায় পর্যটকরা এসে ভিড় করবে বর্ষায়। ইটনার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী ননী গোপাল দাস বলেন, সেতুটি চালু হলে বহু বছরের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে হাওরের লোকজন।
অষ্টগ্রামের আব্দুল্লাহপুর ও কলমা ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার মানুষজনের কাছে বহু বছরের দুর্ভোগের নাম ছিল বিলমাকসা নদী। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গ্রামগুলোকে অষ্টগ্রাম সদরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ প্রশংসা কুড়াচ্ছে এলাকাবাসীর। এখানে নির্মিত হচ্ছে ৪৫০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু। আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ প্রায় ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেতুটির কাজ শেষ হবে। এটি নির্মিত হলে হবিগঞ্জের সঙ্গে অষ্টগ্রামের সরাসরি সড়ক যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হবে। উপকৃত হবে কৃষি, মৎস্য ও পর্যটনখাত। পরিবর্তন আসবে মানুষের জীবযাত্রায়ও। দুর্ভোগ কমবে স্থানীয় লোকজনের। আব্দুল্লাহপুর গ্রামের বাসিন্দা কাউসার, আলম ও রনি বলেন, আমরা কিশোরগঞ্জ জেলার মানুষ হলেও আমাদের খুব কাছেই হবিগঞ্জ। জরুরি দরকারে আমরা নদীপথে হবিগঞ্জেই যাই এবং আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য হবিগঞ্জেই বেশি। এই ব্রিজটা আমাদের বহুদিনের দাবি ছিল। আমরা যারা হাওরবাসী আছি, তারা জানি হাওরে থাকাটা কতটা কষ্টের। প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে আমাদের বাঁচতে হয়। ব্রিজটা নির্মাণ হলে আমরা বাঁচবো। অষ্টগ্রামের উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ রেজাউল হকের ভাষ্য, এলাকাবাসীর জীবনযাত্রা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সেতুটি ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এদিকে, মিঠামইন উপজেলা সদরে ঘোড়াউত্রা নদীতে নির্মণাধীন সেতুটির কাজও শেষের দিকে। ৩৬২ মিটার সেতুটি নির্মাণে খরচ হচ্ছে প্রায় ৪৯ কোটি টাকা। এর কাজ শেষ হলে কাজীপুর-খিলপাড়াসহ অন্তত ১০টি গ্রাম সরাসরি যুক্ত হবে উপজেলা সদরের সঙ্গে। সহজ হবে কৃষিপণ্য পরিবহন, পর্যটক ও শিক্ষার্থীদের চলাচল। মিঠামইন উপজেলা প্রকৌশলী ফয়জুর রাজ্জাক বলেন, হাওর উপজেলা মিঠামইনে পর্যটনের সম্ভাবনার সূচনা হলেও অবকাঠামোর অভাব থাকার কারণে যে পর্যটকরা আসতেন তাদের খুবই সমস্যা হয়। বিশেষ করে থাকার ব্যবস্থা, খাওয়া-দাওয়া, শৌচাগারের খুব সমস্যা হয়। আমাদের যে রেস্ট হাউজটা নির্মিত হচ্ছে এটা নির্মিত হলে পর্যটকদের খুবই সুবিধা হবে। তাছাড়া হাওরে যে ব্রিজ ও সাবমারসিবল সড়ক তৈরি হচ্ছে সেগুলো দিয়ে অতি সহজেই বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করতে পারছে এবং পারবে।