ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

অভিযানের খবরে পালিয়ে যান অর্ধনগ্ন তরুণীরা

শুভ্র দেব
১২ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবারmzamin

রোববার রাত সাড়ে ১২টা। গুলশান-২ এর ৫০ নম্বর রোডের ৬ নম্বর বাড়ির ষষ্ঠতলার হলরুম। এটি কোয়ালিটি ইন প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি হোটেল। হলরুমের ভেতরে আবছা অন্ধকার। লেজার লাইটের ঝলকানি। বিটের তালে তালে কেঁপে উঠছিল চার দেওয়াল। বাজছিল হিন্দি-ইংরেজি গান। স্টেজ থেকে উড়ন্ত চুম্বন দিচ্ছিলেন ডিজে তরুণী। তার সঙ্গে মেতে উঠছিলেন অর্ধনগ্ন তরুণীরা। সঙ্গ দিচ্ছিলেন বিভিন্ন বয়সী ছেলেরা। প্রত্যেকের মুখে সিগারেট। হাতে বিয়ারের ক্যান- বিদেশি মদের গ্লাস। মাতাল তরুণ-তরুণীরা সময়ে সময়ে একে- অপরকে জড়িয়ে ধরছিলেন। এই যখন অবস্থা তখন খবর চলে যায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে। যেই খবর সেই অভিযানের সিদ্ধান্ত। কিন্তু ডিএনসি কর্মকর্তারা অভিযান চালাবেন সেই খবরও চলে যায় ডিজে পার্টির আয়োজক ও অতিথিদের কাছে। কর্মকর্তারা ছয় তলা ভবনের লিফ্‌ট দিয়ে উঠতে উঠতে হলরুমের ভেতরের আয়োজক, অতিথি ও অর্ধনগ্ন তরুণীরা পালিয়ে যান। পালাতে গিয়ে অনেকে হাতে পায়েসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পান। তবে থেমে যাননি ডিএনসি কর্মকর্তারা। পার্টি আয়োজকদের মধ্যে কামাল উদ্দিন (৪৮) ও আরিফুল ইসলাম (৩২) নামের দু’জনকে গ্রেপ্তার করেন। এছাড়া সেখানে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ-১১ বোতল ও ১৭ ক্যান বিয়ারের বোতল উদ্ধার করেন। 

অভিযান সংশ্লিষ্ট ডিএনসি কর্মকর্তারা বলেছেন, একটি চক্র রাজনৈতিক ছত্রছায়ার বহুদিন ধরে কোয়ালিটি ইন প্রাইভেট হোটেলে নানা ধরনের অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। তারা রাতভর সেখানে অশ্লীল ডিজে পার্টির আয়োজন করতো। ডিজেতে অংশ নিতো শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার  ছেলে-মেয়েরা। বিশেষ করে বিত্তবানরা বেশি অংশগ্রহণ করতেন। আয়োজকরা শহরের নামিদামি ডিজেদের সংগ্রহ করে পার্টি আয়োজন করতেন। রাতভর সেখানে অর্ধনগ্ন তরুণ-তরুণীরা মদ খেয়ে মাতাল হয়ে নাচতেন। অভিযোগ আছে বিদেশি মদের সঙ্গে সেখানে ইয়াবা, এলএসডি, কুশের মতো মাদক পরিবেশন করা হতো। এছাড়া হতো অসামাজিক কার্যকলাপ। 

স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, সন্ধ্যার পর থেকে গুলশান-২ এর ৫০ নম্বর রোডের ওই বাড়ির সামনে দামি দামি গাড়িতে অভিজাত ঘরের মানুষ এসে নামতেন। এছাড়া মোটরসাইকেল, সিএনজিতেও অনেকে আসতেন। যেদিন ডিজে পার্টির আয়োজন থাকতো সেদিন বেশি ব্যস্ত থাকতো বাড়িটির আশপাশ। সবারই গন্তব্য ছিল কোয়ালিটি ইন হোটেল। পশ্চিমা দুনিয়ার আদলে পরা পোশাক পরিহিত তরুণীদের আনাগোনা বেশি ছিল। ধনীর দুলাল থেকে শুরু করে সরকারি চাকরিজীবী, চিকিৎসক, বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীরা সেখানে আসতেন। ভেজাল মদও পরিবেশনের অভিযোগ রয়েছে হোটেলটিতে। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ের (উত্তর) সহকারী পরিচালক রাহুল সেন মানবজমিনকে বলেন, তারা আগেও এখানে অশ্লীল ডিজে পার্টির আয়োজন করতো। বিভিন্ন ধরনের মাদক পরিবেশন করতো। এমন খবর আমাদের কাছে ছিল। সরকার পতনের আগে পুরোদমে এমন কর্মকাণ্ড করলেও পতনের পর কিছুটা কমেছিল। কয়েকদিন ধরে তারা আবার চালু করার পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন শুরু করে। তবে খবর পেয়ে আমরা সেটি থামিয়ে দিয়েছি। তিনি বলেন, সেখানে বার ছিল না। এ ধরনের আয়োজনের অনুমতিও ছিল না। তারপরও তারা অবাধে মাদকদ্রব্য পরিবেশন করছিল। এরসঙ্গে যারাই জড়িত তাদের প্রত্যেককেই আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।  
ঢাকা মেট্রো: কার্যালয়ের (উত্তর) উপ-পরিচালক শামীম আহম্মেদ বলেন, অভিযান চালানোর আগে খবর পেয়ে পেছনের দরজা দিয়ে আয়োজকসহ অনেকেই পালিয়ে যায়। তবে আমরা দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিদের বিষয়ে আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি। গুলশান থানায় একটি মামলাও হয়েছে।

 

 

পাঠকের মতামত

উনি ট্রেনিং নিয়েছেন কিভাবে তাদের বাঁচিয়ে রাখা যায় l এসব বন্ড লোকজনে ভরে গেছে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্টান l কিভাবে এইদেশ ও জনগন রক্ষা পাবে একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন l

মোহাম্মদ আলী আহসান খ
২৫ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ৫:০২ পূর্বাহ্ন

ঢাকা মেট্রো: কার্যালয়ের (উত্তর) উপ-পরিচালক শামীম আহম্মেদ জানেই না অভিযান কিভাবে পরিচালনা করতে হয়। এরা আগেই সব information হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তারপর অভিযান নাটক করেছে।

Md. Zahidul Islam
২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন

ঢাকা মেট্রো: কার্যালয়ের (উত্তর) উপ-পরিচালক শামীম আহম্মেদ বলেন, অভিযান চালানোর আগে খবর পেয়ে পেছনের দরজা দিয়ে আয়োজকসহ অনেকেই পালিয়ে যায়। --------- মনে হয় এই অফিসার চাকুরীতে যোগদানের আগে ট্রেইনিং করেনি। দায়সারা বক্তব্য দিয়ে ব্যর্থতা ঢাকতে চাচ্ছে, বাস্তবতা হলো কোথাও অভিযান বা রেইড দিলে আগেই ফোর্সের একটি অংশ পিছনের দরজায় রাখতে হয়, বাকীদের আশেপাশে যেখান দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেখানে সেখানে অবস্থান নিতে হয়। আশাকরি ইন্টেলিজেন্স কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে বিষয়টি শিখিয়ে দিবেন,,, ধন্যবাদ।

মুহাম্মদ হানিফ
১৮ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ৫:১৮ অপরাহ্ন

ধন বৈষম্য এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী,এটা আরো ভয়াবহ হবে।স্বার্থে বৈষম্য টিকিয়ে রাখা হয়।থার্ড ল, 'প্রত্যেক ক্রিয়ার বিপরীত ক্রিয়া রয়েছে'।

সফ্দার ডাক্তার
১৪ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:০৫ পূর্বাহ্ন

অনাচার বন্ধে, এসব বন্ধ করে দেয়া উচিত

হাফিজুর রহমান
১৪ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:২৮ পূর্বাহ্ন

নষ্ট হয়ে গেছে সমাজ, মন্দের দল প্রচণ্ড ভারী হয়ে গেছে

জিয়াউল
১৩ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৫:১২ অপরাহ্ন

প্রশাসন খবর রাখে না। এসব জায়গা তো পাতাল পুরিতে, কিভাবে খবর রাখবে? আবার অভিযানের আগেই আসামি পালিয়ে যায়। প্রশাসনের এখনও ঘুম ভাঙলো না।

Md. Manirul Islam
১২ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন

টাকার থলি পেয়ে আবার তদন্ত ও গ্রেফতার বন্ধ না হয়ে যায়!

তৈমুর
১২ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৬:৩৮ পূর্বাহ্ন

যারা অভিযানে গেছে তাদের মোবাইল ফোন চেক করলে কে অভিযানের খবর ফাস করেছে তা বের করা যাবে।

মরশিদুল আলাম
১২ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৫:২১ পূর্বাহ্ন

মদ নিষিদ্ধ না করে এ ধরনের অভিযান চালিয়ে কোন লাভ নেই। এসব আমদানির রপ্তানি বন্ধ করে দেন। জড়িত ব্যক্তিদের তালিকা সংশ্লিষ্ট অফিসেই আছে।

Anwarul Azam
১২ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৪:৪৯ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status