বাংলারজমিন
হাসপাতালের ১০ কোটি টাকার কাজ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার
মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবারব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১০ কোটি টাকা মূল্যের নির্মাণাধীন ৬ তলা ভবনের কাজ ফেলে লাপাত্তা হয়ে গেছে ঠিকাদার। ২০২২ সালের শেষের দিকে ক্ষমতার প্রভাবে দাপট দেখিয়ে যেনতেনভাবে ঠিকাদার কাজটি শুরু করেছিল। শুরু থেকেই খুবই ধীরগতিতে নিয়ম অনিয়মের মধ্যেই চলছিল কাজটি। ঠিকাদারের ইচ্ছায় মাঝে মধ্যে কাজ চললেও গত ৫ই আগস্টের পর থেকে একেবারেই বন্ধ রয়েছে। দেখা মিলছে না ঠিকাদার/প্রতিনিধি বা কাজের লোকদের। ওদিকে ভবন না হওয়ায় জায়গার অভাবে প্রশাসনিক ও গর্ভবতী মহিলাদের কক্ষে ফ্লোরে ও কাঠের তৈরি বেঞ্চেই দিন-রাত পার করছেন ভর্তিকৃত রোগীরা। এদের মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়ার রোগীও। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, মেয়াদ শেষ হলেও এখনো বাকি ৭৫ ভাগ কাজ। চরম দুর্ভোগ আর কষ্টে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা।
সরজমিন অনুসন্ধান, হাসপাতাল ও ভুক্তভোগী রোগী সূত্র জানায়, ২০২২ সালে সমগ্র বাংলাদেশের ন্যায় সরাইল হাসপাতালেরও ৬ তলা ফাউন্ডেশনের সাড়ে তিন তলাবিশিষ্ট একটি বিশাল ভবন ও অন্যান্য কিছু স্থাপনা নির্মাণের বরাদ্দ অনুমোদন হয়। টেন্ডারে বিট করে ৩০ ভাগ লেসে কাজটি পান ‘অংকুর ট্রেডার্স’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কাজের চুক্তিমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে কাজ শুরু করেন তারা। ৬তলা ফাউন্ডেশনের ভবন নির্মাণের শুরুতেই অনিয়ম আর ধীরগতি অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। ক্ষমতাসীন দলের পাওয়ারফুল লোক পেছনে থাকায় স্থানীয়দের কোনো ধরনের অভিযোগকেই পাত্তা দেননি ঠিকাদার। যেনতেনভাবে ইচ্ছেমতোই করে আসছেন কাজ। কাজের সময়সীমা ছিল ১৮ মাস। প্রায় ৭-৮ মাস আগেই শেষ হয়ে গেছে কাজের সময়সীমা। এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ২৫ ভাগ। গত ৫ই আগস্টের পর কাজ ফেলে সটকে পড়েছেন ঠিকাদার ও কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নির্মাণ শ্রমিকরা। তিন মাস চলে গেছে কিন্তু আসছেন না তারা। অযত্নে অবহেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে রডসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মালামাল। অনেক জায়গায় রডগুলোতে মরিচা ধরে ফেলেছে। পাশের প্রশাসনিক ভবনে সাময়িক সময়ের জন্য সকল শাখা স্থানান্তরিত করলে এখন দীর্ঘসূত্রিতার কারণে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সিট বসানো হয়েছে সিজারের পর গর্ভবতী মহিলাদের অবস্থানের কক্ষেও। ভর্তিকৃত রোগীদের গিজগিজ আর গরমে ছটফটানি দেখলে চোখে জল এসে যায়। গিজগিজ করেও জায়গা হচ্ছে না। ফলে অনেক রোগীকে থাকতে হচ্ছে ফ্লোরে। কেউ থাকছেন কাঠের তৈরি বড় বেঞ্চে। অল্প জায়গায় অধিক রোগী হওয়ায় ভবন জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ। তার ওপর বিদ্যুৎ সমস্যায় অনেক রোগী হয়ে আরও অসুস্থ পড়ছেন। জায়গার অভাবে গোটা সরাইলের ৯টি ইউনিয়নের নারী-পুরুষ ও শিশু রোগীরা সীমাহীন দুর্ভোগ ও কষ্টে সময় পার করছেন। সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নোমান মিয়া কাজে দীর্ঘসূত্রিতার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গত তিন মাস ধরে কাজ বন্ধ। ঠিকাদারও আসছেন না। ওদিকে জায়গার অভাবে রোগীরা প্রচুর কষ্ট করছেন। আমরা স্বাচ্ছন্দ্যে স্বাস্থ্যসেবাটা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানিয়েছি। ভবনটির কাজ শেষ হয়ে গেলে এখানকার রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা শতভাগ নিশ্চিত হতো। ঠিকাদার মো. জুয়েল বলেন, এসি সাহেব বন্ধ রাখতে বলেছেন। সরকার পরিবর্তনের ফলে শুধু সরাইল নয়, সারা বাংলাদেশেই ২৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এটা খুব বড় প্রকল্প। এটা আমার লসের কাজ। তারপরও করতে চাচ্ছি। আমার লোকজন বসা। চিফ ইঞ্জিনিয়ার দৌড়াদৌড়ি করছেন। এই প্রকল্পটি আবারো একনেকে পাঠিয়েছেন। অনুমোদন হলেই কাজ শুরু করবো।