ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেটে শারপিন টিলায় ৫ কোটি টাকার পাথর লুট

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২ নভেম্বর ২০২৪, শনিবারmzamin

সিলেটের শারপিন টিলা। পাথর সাম্রাজ্য। এখন এই শারপিন টিলায় শেষ ছোবল দিচ্ছে পাথরখেকোরা। কোনোমতে টিকে থাকা মাজার এলাকাও   এখন লুটে খাওয়া হচ্ছে। গত তিন মাসে এই টিলা থেকে অন্তত ৫ কোটি টাকার পাথর লুট করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন; প্রতিদিন একশ’ থেকে দেড়শ’ ট্রাক্টর ভর্তি পাথর লুট হচ্ছে। এর বাইরে ৪ শতাধিক ট্রলি গাড়ি দিয়ে পাথর লুটে নিচ্ছে চিহ্নিত পাথরখেকোরা। তারা জানিয়েছেন- শারপিন টিলার চুড়োয় হযরত শারপিন (রহ.)-এর একটি আসন রয়েছে। বড় বড় কয়েকটি পাথরের ওপর এই আসনের অবস্থান। পাশে মহিলা ইবাদতখানা। বর্তমানে পাথরখেকোরা পাথর লুট করতে করতে মাজারের আসন পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত শারপিন টিলায় লুটপাট চালিয়েছিল স্থানীয় মোহাম্মদ আলী সহ একটি সিন্ডিকেট। তখন ওই টিলা থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার পাথর লুট করা হয়। এ নিয়ে কোম্পানীগঞ্জে স্থানীয়ভাবে ক্ষোভ দেখা দিলে প্রশাসন সক্রিয় হয়। তখন সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে পাথর লুট বন্ধ করা হয়েছিল। তবে তার আগেই শারপিন টিলাকে অস্তিত্বহীন করে দিয়েছিল পাথরখেকোরা। ওই বছরই শারপিন টিলার ক্ষতি নির্ণয়ের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছিল সেখানে জানা গিয়েছিল শারপিন টিলায় আড়াইশ’ কোটি টাকার পাথর লুটপাট হয়েছে। 

তদন্ত রিপোর্টে প্রশাসনের কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছিলেন- শারপিন টিলার ১৩৭ একর ভূমির ৭০ ভাগই ইতিমধ্যে কর্তন করা হয়েছে। প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন টিলা ধ্বংস করা হয়েছে। তারা উল্লেখ করেন- ৪০ টাকা দরের প্রায় ৬৩ লাখ ঘনফুট পাথর লুটপাট করা হয়েছে। এর মূল্য ২৫১ কোটি টাকা। তদন্ত প্রতিবেদন পরিবেশ অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। এই রিপোর্টের পর সিলেটের জেলা প্রশাসন থেকে কোম্পানীগঞ্জের পাথরখেকোদের ৪৮ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে। পরে তাদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয়েছিল আলোচিত কয়েকজন পাথরখেকোদের। বিশেষ করে র‌্যাব’র পক্ষ থেকে অভিযান চালানোর পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এরপর অবশ্য শারপিন টিলায় পাথরখেকোদের চোখ পড়েনি। কিন্তু ৫ই আগস্টের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তার সুযোগে ফের পাথরখেকোরা শারপিন টিলায় লুটপাট শুরু করেছে। এখন দিনে ও রাতে চলছে লুটপাট। এখন অবশ্য সিন্ডিকেটে অন্যরা। স্থানীয় চিকাঢর, জালিয়ারপাড়, শারপিন টিলা এলাকার লোকজন জানিয়েছেন- বর্তমানে শারপিন টিলায় জালিয়ারপাড়ের বাসিন্দা বাবুল আহমদের নেতৃত্বে পাথর লুট করা হচ্ছে। তার নেতৃত্বে একই এলাকার ফয়জুর রহমান, ইসমাইল হোসেন ওরফে বাট্টি ইসমাইল, চিকাঢর গ্রামের আইয়ূব আলী, আনোয়ার হোসেন আনাই, আদই মিয়া, মনির মিয়া ও আবুল বশর ওরফে বশর কোম্পানির নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছে। প্রথম দিকে তারা শারপিন টিলায় খেলার মাঠে পাথর লুটপাট শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে টিলা থেকে পাথর উত্তোলন শুরু করেছে।

 আর এই পাথর উত্তোলনে তারা ব্যবহার করছে অবৈধ বোমা মেশিনও। এ কারণে রাতের বেলা বোমা মেশিনের শব্দে পার্শ্ববর্তী ৪/৫টি গ্রামের মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন- পাথর লুটপাট বন্ধে পুলিশের পক্ষ থেকে তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। প্রতিদিনই টহলে থাকা পুলিশ দল আসতো। তারা চলেও যেতো। কোনো ব্যবস্থা নিতো না। ফলে দিন দিন পাথরখেকোরা আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা বলেন; যেভাবে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে আর কিছুদিন গেলে মাজারের আসন এবং পাহাড়েরই কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার প্রায় তিনঘণ্টাব্যাপী অভিযান চালায় কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনানের নেতৃত্বে টিলায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে পাথর, বালু ও তিনটি ট্রাক্টরসহ পাথরখেকোদের নিয়োজিত ৭জন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- পাড়ুয়া গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে তাজুল মিয়া, কুটি মিয়ার ছেলে ইকবাল হোসেন, রিয়াজ উল্লাহর ছেলে শুভ মিয়া, নারাইনপুর গ্রামের মৌলা মিয়ার ছেলে ফিরোজ মিয়া, তার ছেলে নজরুল ইসলাম, বাহাদুরপুর গ্রামের দ্বীন ইসলামের ছেলে রফিকুল ইসলাম ও সুনামগঞ্জের রানীগঞ্জ ইউনিয়নের মৃত ওয়াহিদ উল্লাহর ছেলে আব্দুল গফ্‌ফার। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পুলিশ জানায়- নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে শাহ্‌ আরেফিন টিলায় অভিযান হয়। অভিযানে ২শ’ ঘনফুট লাল পাথর, ২শ’ ঘনফুট লাল বালিমাটি ও তিনটি হাইড্রোলিক ট্রাক্টর আটক করা হয়। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানিয়েছেন- অভিযানের পর যে মামলা করা হয়েছে সেখানে তারা পাথরখেকোদের আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি আটককৃতদেরও আসামি করা হয়। এরপর থেকে শারপিন এলাকায় পাথর লুটপাট বন্ধ রয়েছে। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন- এখন দিনে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকলেও রাতে সক্রিয় হয়ে ওঠে পাথরখেকোরা। তারা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাথর লুটপাট চালাচ্ছে। আর এসব পাথর বিক্রি হচ্ছে ভোলাগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকার ক্রাশার মিলে।

পাঠকের মতামত

দেশটা কি লুটেরাদের রাজত্বে পরিনত হয়েছে? সুযোগ পেলে লুটপাট চালায় এ কেমন রাজত্ব?

হাসান
২ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ৩:২২ অপরাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status