খেলা
সাকিবের দেশ ছাড়তেও বাধা দেখেন না ক্রীড়া উপদেষ্টা
স্পোর্টস রিপোর্টার
১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যদিয়ে ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়, গঠন হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। রাজনৈতিক এই অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশ থেকে সরে গিয়েছিল নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এবার ঘরের মাঠের দ্বিপক্ষীয় সিরিজকেই তাই বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এছাড়া দেশের মাটিতে খেলেই টেস্ট থেকে অবসর নিতে চান সাকিব আল হাসান। তাকেও ঘরের মাটিতেই বিদায় দিতে চায় ক্রিকেট বোর্ড। সাকিবের নামে হত্যা মামলা থাকায় তার নিরাপত্তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। এসব দেখতেই দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো গতকাল মিরপুর স্টেডিয়াম পরিদর্শন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে বৈঠকের পর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের অবকাঠামো ঘুরে দেখেন তিনি। এরপর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাকিব আল হাসানের দেশে ফেরা, এবং দেশ ত্যাগের বিষয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা স্পষ্ট করেই বলেন, ‘(সাকিবের) দেশে আসা কিংবা বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে তো কোনো বাধা থাকার কথা নয়।’
সব ঠিক থাকলে আগামী ২১শে অক্টোবর শুরু দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের প্রথম টেস্টটাই হবে সাকিবের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট। ভারতে কানপুর টেস্টের আগেই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, এই ম্যাচটা খেলে বিদায় জানাতে চান টেস্ট ক্রিকেটকে। সেই থেকে আলোচনা, হত্যা মামলার আসামি সাকিব কি দেশে ফিরে কোনো আইনি জটিলতায় পড়বেন? তিনি কি এরপর আবার নির্বিঘ্নে দেশ ছাড়তে পারবেন? মামলা থাকায় আইনগত কোনো বাধার সম্মুখীন হবেন না তো! সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে এর আগেও একাধিকবার বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়েছে। তারপরও যেন কৌতূহল যায় না। সে কারণেই বিপিএল ও দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ সামনে রেখে শেরেবাংলা স্টেডিয়াম পরিদর্শনে এসে ক্রীড়া উপদেষ্টাকে আরেকবার বলতে হলো, ‘একজন ক্রিকেটার, তিনি খেলবেন এবং তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। আসার ব্যাপারে তো আমি কোনো বাধা দেখি না।’ উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেটা আমরা নিশ্চিত করবো।’ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বাইরে গত দুই-তিন দিন ধরে একটি পক্ষ সাকিবের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে। স্টেডিয়ামের বাইরের দেয়ালে সাকিব বিরোধী বিভিন্ন দেয়াল-লিখনও হয়েছে। শনিবার তো নাকি সাকিব বিরোধী এবং সাকিবের পক্ষের দুই গ্রুপের মধ্য ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে স্টেডিয়ামের বাইরে। আসিফ মাহমুদ সাকিব বিরোধীদের এমন আচরণকে তাদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখছেন। তিনি বলেন, ‘এটা তো আসলে আবেগের ব্যাপার। তাদেরও ওই অধিকার আছে। গণতান্ত্রিক দেশ, সাংবিধানিক অধিকার আছে যে কোনো ধরনের আন্দোলন বা যেকোনো কিছু করার।’ একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, যেকোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা দুই টেস্টের সিরিজটাকেই। তাই সবাইকে সর্তক থাকার কথা জানিয়ে বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। যেহেতু এখানে দক্ষিণ আফ্রিকা আসবে, আমাদেরও পরিবেশটা ভালো রাখতে হবে। না হলে বাইরের দেশগুলো এখানে খেলতে আসার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার সমস্যা বোধ করবে।’
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, কারও নিরাপত্তাই যেন হুমকির মধ্যে না পড়ে। কোনো আইনগত বিষয় থাকলে সেটা আইনের মতো করেই চলবে। সঙ্গে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের আগের একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘সংশ্লিষ্টতা না থাকলে যে হত্যা মামলা হয়েছে, সেখান থেকে নাম (সাকিবের) বাদ পড়ে যাবে।’ সাকিব অবশ্য তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এরই মধ্যে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নীরব থাকা নিয়ে দুঃখ প্রকাশও করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে ক্রীড়া উপদেষ্টার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটা বড় আন্দোলন হয়েছে এবং সাকিব আল হাসানের আগের ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল। এ ব্যাপারে উনি ওনার পোস্টে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তারপরও কিছু আবেগ রয়ে গেছে। তবে কোনো আইনি সমস্যা এখন পর্যন্ত নেই বলেই দেখা যাচ্ছে।’ বাংলাদেশের মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে আশা ব্যক্ত করে আসিফ বলেন, ‘আইন তো আইনের মতো চলে। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের মানুষ আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। এটা এর আগেও প্রমাণ হয়েছে। এত বড় একটা অভ্যুত্থান হয়েছে। এ রকম অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন দেশে যেরকম পরিস্থিতি হয়, আমাদের দেশের পরিস্থিতি কিন্তু সেদিকে যায়নি। বাংলাদেশের মানুষ তাদের এই অবস্থানটা রাখবে, এটাই আমি বিশ্বাস করি।’