খেলা
ভারতের মেয়েরা পেলো অর্থ পুরস্কার, ঋতুপর্ণারা পেলেন ভোররাতে সংবর্ধনা
স্পোর্টস রিপোর্টার
৮ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার
বাংলাদেশের মতো বাছাই পর্বের গণ্ডি পেরিয়ে এশিয়ান কাপের মূলপর্বে জায়গা করে নিয়েছে ভারত। তবে ভারতের এশিয়ান কাপে এটাই প্রথম অংশগ্রহণ নয়। এর আগেও নারী এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলেছে ভারতের মেয়েরা। তারপরেও মেয়েদের এমন সাফল্যে বড় অঙ্কের অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করেছে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)। দলটির জন্য ৫০,০০০ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে এআইএফএফ। এ ছাড়া সফল বাছাইপর্ব শেষে দেশে ফেরার পর উষ্ণ সংবর্ধনা পেয়েছে ভারতের নারী ফুটবলাররা। গভীর রাতে ইতিহাস গড়া বাংলাদেশ দলকে সংবর্ধনা দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। রাত তিনটায় হাতিরঝিলের এম্ফিথিয়েটারে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের কীর্তির সম্মাননা জানাতে ছুটে এসেছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও ছিলেন। হাতিরঝিলের আলোজ্বলমলে আয়োজনে সবই ছিল, ছিল না শুধু মেয়েদের জন্য কোনো পুরস্কারের ঘোষণা।
২০০৩ সালে শেষবার বাছাইপর্ব পেরিয়ে নারী এশিয়ান কাপে যোগ্যতা অর্জন করেছিল ভারত নারী দল। ২০২২ সালে আয়োজক দেশ হিসেবে এশিয়ান কাপ খেলেছে ভারত। এরপর আবারো এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলতে দেখা যাবে তাদের। এতেই দলটির ভাগ্যে জুটলো বড় আর্থিক পুরস্কার। আর বাংলাদেশ এশিয়ান কাপ খেলবে প্রথম বারের মতো। তাইতো ঝলমলে আয়োজনে এদিন সবার নজর ছিল বাফুফের তরফে কোনো অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করে কিনা সে দিকে। যদিও তেমন ঘোষণা আসেনি। সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাফুফে গত বছর ৯ই নভেম্বর দেড় কোটি টাকা বোনাস ঘোষণা করেছিল বাফুফে। সেই অর্থ এখনো দিতে পারেনি। নারী ফুটবলারদের মধ্যে ঋতুপর্ণারা কয়েকজন মাত্র মাসে ৫৫ হাজার সম্মানী টাকা পান। দেশে নেই ঘরোয়া লীগ। ফলে নারী ফুটবলারদের আর্থিক দুর্দশা প্রকট।
রোববার রাত দেড়টায় মিয়ানমার জয় করে দেশে ফিরেন নারী ফুটবল দলের ফুটবলাররা। প্রথম বারের মতো এশিয়ান কাপের টিকিট কেটে তাদের এই ফেরাটা হলো বীরের মতো। বিমানবন্দর থেকে তাদের সরাসরি আনা হয় হাতিরঝিলে। গভীর রাতেও হাজারখানেক দর্শক অপেক্ষায় ছিলেন তাদের জন্য মুখে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ ধ্বনি নিয়ে। বাফুফের সদস্যরা তাদের বরণ করেন ফুলের তোড়ায়। মেয়েরা মঞ্চে বসেন যেন মাথায় গর্বের অদৃশ্য মুকুট পরে। ঝলমলে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল মেয়েদের প্রশংসা করে বলেন, ‘আপনারা দু‘টি কাজ করেছেন। নতুন করে ইতিহাস লিখছেন এবং আমাদের সমাজের মনমানসিকতা বদলানোর যাত্রায় এগিয়ে নিচ্ছেন।’ বাফুফে সভাপতির কাছ থেকে নগদ কিছু চাইছিলেন দর্শকরাও। কিন্তু তাবিথ সেদিকে না গিয়ে বলেন,‘ যেভাবে আমরা নারী দলের পেছনে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকবো। আমরা আপনাদের ওপর আস্থা রাখছি এবং প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনাদের পেছনে আমরা আছি।’ এরপর এখন শুধু ‘মিশন অস্ট্রেলিয়া’ বলে শেষ করেন বাফুফে বস। কিন্তু স্বপ্ন পূরণ করতে শক্ত কাঠামো লাগে। লীগ আয়োজনসহ সঠিক পরিকল্পনা দরকার। সেসব অনুচ্চারিতই রয়ে গেল বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসেই অভিনব এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। পৃথিবীতে আর কোনো ক্রীড়া দল এভাবে মধ্যরাতে সংবর্ধনা পেয়েছে কিনা, সেটাও বিরাট গবেষণার বিষয়। এই সংবর্ধনায় কোচ পিটার বাটলার মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে পরিশ্রম কতোটা হয়েছে তা তুলে ধরে বলেন ‘এই জয় সম্ভব হতো না যদি মেয়েরা নিজেদের শেষবিন্দুও ঢেলে না দিতো।’ উপস্থিত জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হকের কণ্ঠেও ঝরে মেয়েদের প্রশংসা। সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি, আরও পেশাদার পরিকল্পনায় মেয়েদের গড়ে তোলা দরকার। কিন্তু এই অভ্যর্থনা শেষে একটি প্রশ্ন ভেসে বেড়াচ্ছিল শুধু ফুলের তোড়া আর সভাপতির বক্তব্য অনুযায়ী ‘আপনাদের পেছনে আছি’ কথাই কি যথেষ্ট? অনুষ্ঠান শেষে ঋতুপর্ণা আর মনিকা চাকমা আবার রওনা দিলেন বিমানবন্দরের পথে, ভুটানে লীগ খেলতে। এদিকে গতকাল রাতে এশিয়ান কাপ নিশ্চিত করা মেয়েদের জন্য ৫০ লাখ টাকা অর্থপুরস্কার ঘোষণা করেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।