অনলাইন
বিএসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যানসহ ৮ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(৩ সপ্তাহ আগে) ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১২:৩৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৫:০৩ অপরাহ্ন
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামসহ ৮ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিএসইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইন ও বিধিমালা লঙ্ঘন করে স্ব স্ব নামে ও তাদের পরিবার-পরিজনের নামে বেনামে দেশে ও বিদেশে (সংযুক্ত আরব আমিরাত, কানাডা, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে) উৎস বহির্ভূত ১০০০ কোটি টাকা সমপরিমাণ স্থাবর, অস্থাবর, অবৈধ সম্পদের অভিযোগ রয়েছে, যা অনুসন্ধান/তদন্ত করে ওইসব অবৈধ সম্পদ ক্রোক/ফ্রিজ করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
ওই ৮জন কর্মকর্তা হলেন-সাবেক কমিশনার শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক মো. মাহবুবুল আলম, নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম, পরিচালক শেখ মাহবুবুর রহমান, পরিচালক মো. মাহমুদুল হক, অতিরিক্ত পরিচালক এস কে মোহাম্মদ লুৎফুল কবির ও যুগ্ম পরিচালক ও চেয়ারম্যানের একান্ত সহকারী মো. রাশিদুল আলম।
আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জাবেদ এ মতিনের হংকংয়ের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১ কোটি ৩৪ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয়া, প্রতারণার অর্থ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে পাচার করে আনা এবং এ ক্ষেত্রে অধ্যাপক শিবলীর প্রত্যক্ষ সহায়তার তথ্য পাওয়া গেছে। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদে বসে বেআইনিভাবে শেয়ার ব্যবসা করেছেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। শেয়ার ব্যবসা করতে গিয়ে শিবলী রুবাইয়াত শেয়ার কারসাজির অন্যতম হোতা আবুল খায়ের হিরো কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এলআর গ্লোবালকে একের পর এক বিতর্কিত সুবিধা দিয়েছেন শিবলী। এলআর গ্লোবালের সিইও রিয়াজ ইসলামের সঙ্গে দুবাইয়ে সিগমা ম্যানেজমেন্ট নামে যৌথ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন তিনি। ওই কোম্পানির পার্টনার শিবলীর বড় ছেলে যুহায়ের ইসলাম।
বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার সময়ই শিবলী ঋণখেলাপি ছিলেন। অর্থঋণ আদালতে মামলায় ২০০৭ সাল থেকেই টানা প্রায় ১৬ বছর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ঘুরছিলেন তিনি। চেয়ারম্যান পদে চার বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালনের প্রথম দুই বছর চার মাস পর্যন্ত তিনি ঋণখেলাপি ছিলেন এবং তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদের ডিন থাকাকালীন অনৈতিকভাবে ডাকসুর ৮ নেতাসহ ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করায় জড়িত থাকার অভিযোগে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয় অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
মাহমুদুল হক সরকারের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব পেয়েছেন। এমনকি বর্তমান দায়িত্বে তিনি নিয়ম লঙ্ঘন করে মেয়াদ বৃদ্ধি করিয়েছেন। তফসিল লঙ্ঘন করে ২০২২ সালের ৯ই নভেম্বর অফিস আদেশের মাধ্যমে মো. মাহমুদুল হককে কমিশন সচিবালয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়। মো. মাহমুদুল হক শিবলি রুবাইয়াতের অনৈতিকে এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়তা করে এসেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে শিবলী কমিশন সভার সিদ্ধান্ত সমূহ (এজেন্ডা, তারিখ) অন্যান্য কমিশনারকে না জানিয়েই নিজের মতো করে পরিবর্তন করে ফাইলে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ রয়েছে। শিবলীর বিরুদ্ধে মাহমুদুল হকের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে প্রায় ২৬টি কোম্পানি দখল করার অভিযোগ রয়েছে।
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান এবং আবুল খায়ের হিরো মিলে বন্ধ থাকা কোম্পানি চালুর উদ্যোগ নেন। এরা অবৈধভাবে সুবিধা নিয়ে বন্ধ কোম্পানি চালু করার নামে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নিজস্ব লোকদের নতুন পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দিয়ে বেশকিছু কোম্পানি দখল করেন। এরমধ্যে এমারেল্ড অয়েলের পর্ষদ ভেঙে মিনোরি বাংলাদেশকে মালিকানা দিয়ে শেয়ার কারসাজি করে শতকোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আছে।
এসকে মো. লুৎফুল কবির দীর্ঘদিন ধরে ক্যাপিটাল মার্কেট রেগুলেটরি রিফর্মস অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগে থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে সুযোগ দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। এছাড়া দুর্বল কোম্পানির পর্ষদ ভেঙে দখল নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এমনকি আইন পরিবর্তন হওয়ার আগে ও পরে বেনামে শেয়ার কিনে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
চেয়ারম্যানের পিএস মো. রাশিদুল আলম সরকারি চাকরি বিধিমালা লঙ্ঘন করে ১৪ বছর ধরে একই স্থানে (চেয়ারম্যানের পিএস) কাজ করছেন। এছাড়া বিধিমালা অনুসারে উপপরিচালক থেকে যুগ্ম পরিচালক হতে সময় লাগে ন্যূনতম ৫ বছর। কিন্তু রাশিদুল আলমের ক্ষেত্রে তা কার্যকর হয়নি। ২০২১ সালের ২৯শে জুন রাশিদুল আলম উপপরিচালক হিসেবে পদোন্নতি পান। কিন্তু মাত্র ১ বছর ২ মাস পর ২০২২ সালের ৩০শে আগস্ট তাকে যুগ্ম পরিচালক হিসাবে পদোন্নতি দেয়া হয়। পাশাপাশি তিনি চেয়ারম্যানের পিএস হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন বলে কমিশনের অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়। শিবলী রুবাইয়াতের শেয়ার বাজার কারসাজি, নিয়োগ ও পদোন্নতি বাণিজ্যের মতো একাধিক অনৈতিক কাজে রাশিদুল আলম সহায়তা করেছেন বলে জানা গেছে।
এইসব অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদকের মানি লন্ডারিং শাখা উক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিএসইসির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কিন্তু তারও আগে দরকার দুদকের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত করা। এরা সবাই এক একটা চোর বাটপার।