শেষের পাতা
যশোরে হোটেল জাবিরে অগ্নিসংযোগ নিহত ২৪
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে
৭ আগস্ট ২০২৪, বুধবারশেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের পর যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে অগ্নিসংযোগ করে বিজয় মিছিলে অংশ নেয়া বিক্ষুদ্ধ জনতা। এতে দগ্ধ হয়ে ২৪ জন নিহত ও ৩৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে সব নিহতদের পরিচয় জানা না গেলেও নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৪ জন বিদেশি রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ২ জন ভারতীয় ও ২ জন ইন্দোনেশিয়ান ছিল বলে জানা যায়। গত সোমবার বিকাল ৪টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। এ সময় হোটেলের ভিতরে অনেকে আটকা পড়েন। হেলিকপ্টারে করে উদ্ধারকারী দল ১৫ তলাবিশিষ্ট হোটেলের ছাদ থেকে কয়েকজনকে উদ্ধার করে। আরও কয়েকজনকে ১৪ তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে উদ্ধারের জন্যে নিশানা উড়াতে থাকে। ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি দল রাত ৮টা পর্যন্ত চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
সরজমিন দেখা যায়, গত সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে যশোর শহরে বিজয় মিছিল বের করে ছাত্র-জনতা। ওই মিছিল থেকে বিক্ষুব্ধ লোকজন চিত্রা মোড়ে অবস্থিত হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর শুরু করে।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘জাবির হোটেলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে পর্যায়ক্রমে ২৩ জনের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে আনে ফায়ার সার্ভিসের টিম। এ ছাড়া একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। হোটেলে অগ্নিদগ্ধের ঘটনায় মোট ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে ৩৫ জনের মতো। আহতদের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কাজনক।’ হোটেলে কতোজন আটকা পড়েছে বা কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানার জন্যে হোটেলের মালিক শাহীন চাকলাদারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এ ছাড়া হোটেলের মুঠোফোন নম্বর, ফায়ার সার্ভিস যশোরের উপ-পরিচালক, যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি।
এদিকে, শাহীন চাকলাদারের হোটেল ছাড়াও তার শহরের কাজীপাড়া কাঁঠালতলাস্থ বাসভবন, কাজীপাড়াতে যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের বাসা, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, শেখ মুজিব, শেখ রাসেলের ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে কারফিউ ভেঙ্গে যশোর শহরের চাঁচড়া মোড়ে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শহরের ঈদগাহ্ মোড়ে অবস্থান নেয় জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দিনভর তারা সরকার পতনের নানা স্লোগান দেন। এরপর বিকাল ৩টার দিকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন এমন সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরে আন্দোলনে থাকা ছাত্র জনতা ও বিএনপি’র নেতাকর্মীরা শহরে আনন্দ মিছিল বের করে। মিছিল থেকে দুবৃর্ত্তরা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায় বলে স্থানীয়রা জানান।
এদিকে, হামলা ও ভাঙচুরের সময় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কোনো সদস্যকে রাস্তায় দেখা যায় না। ফোন করলেও কেউ ফোন ধরেননি। এ ছাড়া চাঁচড়ায় যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় দৃবৃর্ত্তরা। গত সোমবার সন্ধ্যায় প্রেস ক্লাব যশোরে প্রেস ব্রিফিং এ যশোরে ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদ খান বলেন, অনেকদিন ধরে যশোরে আন্দোলন করে আসছি। যশোরে কোথাও সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। আজ আমাদের বিজয়ের দিনে এমন ঘটনা ঘটেছে, সেটি দুঃখজনক। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব ঘটনা ঘটায়নি। যারা করেছে, তাদের রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। তিনি এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
এর আগে দুপুর থেকে যশোরে সড়কে সড়কে মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। জাতীয় পতাকা নিয়ে তারা উল্লাস করছে। স্লোগান দিতে দেখা যায়। বিকালে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশ ছেড়েছেন, এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর অলিগলি থেকে সড়কে বেরিয়ে মানুষ স্লোগান দিতে থাকে। বেলা ৪টার দিকে শহরের ঈদগাহ্ মোড়ে দলে দলে মানুষ জড়ো হয়। এদিকে আজ সকাল থেকে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা পুড়ে যাওয়া হোটেল জাবির থেকে ভষ্মীভূত মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। শহরে কোথাও নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।