শেষের পাতা
পিতাকে হত্যার পর থানায় হাজির কিশোরী
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে
১৫ জুলাই ২০২৪, সোমবারবাবাকে হত্যা করে থানায় হাজির হয়েছেন খুলনার দৌলতপুরের দেয়ানা এলাকার এক কিশোরী। শুক্রবার রাতে দৌলতপুর থানায় হাজির হয়ে তিনি দাবি করেন, তার শেখ হুমায়ুন কবিরকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ও বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেছেন। নিহত শেখ হুমায়ুন কবির নগরীর দৌলতপুর থানার দেয়ানা উত্তরপাড়া এলাকার নেসার উদ্দিন সড়কের বাসিন্দা। থানায় আত্মসর্মপণ করা কিশোরী তার ছোট মেয়ে। তাকে বর্তমানে কেএমপির ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে।
দৌলতপুরে গিয়ে জানা গেছে, শেখ হুমায়ুন কবির নামাজি পরহেজগার ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু তার দুই মেয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করতেন। এটা নিয়ে প্রায় মেয়েদের বকাঝকা করতেন। ৫২ বছর বয়সী সুস্থ, সবল শেখ হুমায়ুন কবির প্রতিদিন মুসল্লিদের সাথে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন। প্রতিদিনের ন্যায় ৪ঠা জুলাই দৌলতপুর থানাধীন দেয়ানা উত্তরপাড়া জামে মসজিদে মুসল্লিদের সঙ্গে মাগরিবের নামাজ আদায় করে নিজ বাড়িতে চলে যান। ওইদিন মসজিদে তিনি আর এশার নামাজ পড়তে আসেন নাই। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রতিবেশী এবং মুসল্লিরা ফজরের নামাজ শেষে জানতে পারেন হুমায়ুন কবির মারা গেছেন। তার হঠাৎ এই অস্বাভাবিক মৃত্যু স্বজন, প্রতিবেশী এবং মুসল্লিদের মেনে নিতে কষ্ট হয়। হুমায়ুন কবিরের মৃত্যু জানাজানি হওয়ার পর থেকেই আশেপাশের লোকজন ভিড় জমাতে থাকে তার বাড়িতে। স্ত্রী, কন্যাদের, আচার-আচরণ এবং কথাবার্তা শুনে প্রতিবেশীদের মধ্যে সন্দেহ দানা বাঁধে। হুমায়ুন কবিরের মৃত্যু নিয়ে এলাকায় গুঞ্জন সৃষ্টি হয়। সেই গুঞ্জনের সত্যতা মেলে ঘটনার এক সপ্তাহ পর। ১২ই জানুয়ারি নিহত হুমায়ুন কবিরের ছোট মেয়ে সুমাইয়া বিনতে কবির দৌলতপুর থানায় হাজির হয়ে পিতার মৃত্যুর জন্য নিজের দায় স্বীকার করলেও ধোঁয়াশা কাটছে না। রহস্য থেকে যাচ্ছে। রাতে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে পিতাকে হত্যা করা হয়েছে বলে সুমাইয়া বিনতে কবির পুলিশকে বলেন। দৌলতপুর থানা অফিসার ইনচার্জ প্রবীর বিশ্বাস বলছেন, সুমাইয়া বিনতে কবিরের কথাবার্তা অসংলগ্ন। সে একেক সময় একেক রকম কথা বলছে। এ নিয়ে বিভ্রান্ত হতে হচ্ছে। রোববার সরজমিনে দেয়ানা উত্তরপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন নিহত হুমায়ুন কবিরের স্বজন এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনার দিন রাতের খাবার খেয়ে হুমায়ুন কবির নিজ শয়ন কক্ষে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে তার মৃত্যু এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয় সে স্ট্রোক করে মারা গেছে। পরবর্তীতে মৃতদেহ গোসল করানোর সময় বাম হাতের বাহুতে দুইটা ছিদ্র দেখা যাওয়ায় অনেকে ধারণা করতে থাকে সাপের কামড়ে হয়তো তার মৃত্যু হয়েছে। নিহত হুমায়ুন কবিরের বড় মেয়ে মরিয়ম বলেন, বাবার মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশার ভিতরে আছি। এখনো মামলা করার সিদ্ধান্ত নেইনি। পারিবারিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
দৌলতপুর থানা অফিসার ইনচার্জ প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, ঘটনার এক সপ্তাহ পর ১২ই জুলাই থানায় এসে নিহত হুমায়ুন কবিরের ছোট মেয়ে সুমাইয়া বিনতে কবির প্রথমে বলেন, আমি আমার বাবাকে রাতে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেছি। কিন্তু পরক্ষণেই সে আবার বলে- আমি বাবাকে হত্যা করিনি আমার ঘাড়ে জ্বিন আছে সেই জ্বিন হত্যা করেছে। তার অসংলগ্ন কথাবার্তায় আমরা বিভ্রান্ত হচ্ছি। তার মা বলছে- তার মেয়ের মানসিক সমস্যা আছে। তিন বছর আগে তাকে একবার মানসিক ডাক্তার দেখানো হয়েছিলো। থানায় কেউ অভিযোগ দায়ের করেনি। এ কারণে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছি না। সুমাইয়া বিনতে কবিরকে আজ খুলনা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। আমরা আদালতের নির্দেশনায় আছি। আদালত থেকে যে নির্দেশনা আসবে আমরা সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিব।