বাংলারজমিন
৭০ বছর বয়সেও ভাগ্যে জোটেনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা
১৩ জুলাই ২০২৪, শনিবার
ছেলে সন্তান নেই। স্বামীর ভিটেমাটিতেও ঠাঁই হয়নি ময়নার। ছোটকালে বাবা হারিয়েছেন তার মেয়ে রোকেয়া বেগম। নিরুপায় হয়ে তাকে নিয়ে নিয়ে ওঠেন বোন বাতাসির বাড়িতে। সন্তান লালন-পালন করতে ভিক্ষাবৃত্তিই ছিল রোজগারের একমাত্র পন্থা। ১৩ বছর বয়সে রোকেয়ার বিয়ে দেন সুন্দরগঞ্জের পূর্ব সোনারায় গ্রামের সামসুল হকের সঙ্গে।
হাফ শতক জমিতে একটি খরের ঘর ছিল সামসুল হকের। পেটের ব্যথায় মাঝেমধ্যে কুঁকড়ে যেতো সে। বৈদ্যের কাছে যেতে যেতে সেই হাফ শতক জমিও বিক্রি করে সামসুল। এবার রোকেয়াকে নিয়ে আশ্রয় নেয় হাসপাতাল রোডের দক্ষিণ পাশের গলিতে তার মায়ের কাছে। কিন্তু স্বামীর সুখ আর কপালে সইলোনা রোকেয়ার। বিয়ের কয়েক বছর যেতে না যেতেই মারা যান সামসুল। ফলে মাতৃত্বের স্বাদও আর স্পর্শ করা হয়নি তার। স্বামীর লাশের সঙ্গে শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিল রোকেয়া। থাকতেও চেয়েছিল সেখানে। কিন্তু ঠাঁই না পেয়ে চোখের জলে এবার এক কাপড়ে বেরিয়ে পড়ে সে। ফিরে আবার খালার বাড়িতে থাকা বৃদ্ধা মায়ের কাছে।
ভিক্ষের চালে নিজের পেট চালাতেই হিমশিম অবস্থা ময়নার। অর্ধাহারে জীবন চলতো তার। একবেলা খাবার জুটলে তো জুটতো না আরেক বেলা। তার ওপর বিধবা মেয়ে কাঁধে এসে পড়ায় চোখে অন্ধকার দেখেন ময়না। দুবেলা দুমুঠো খাবার জুটবে কী করে! তাই মার সঙ্গে নিজেও ভিক্ষা করতে যেতো রোকেয়া। বেলা শেষে যা জুটতো তা দিয়েই খেয়ে না খেয়ে চলতে থাকে তাদের দিনকাল। রোকেয়ার বয়স যখন সত্তরের কাছাকাছি তখন মাও তাকে ছেড়ে যায় স্রষ্টার ডাকে। কয়েক যুগ ধরে থাকার পর এখন আর তাকে থাকতে দিতে চাইছে না রোকেয়ার খালাতো বোন। চালার পেছনে ও সামনে নোংরা পানি ও কাদায় মাখামাখি অবস্থা। ঘরের ভেতরে পড়ে রয়েছে নানা ডাউয়া-ঢোকনা। যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। আলো-বাতাসহীন বদ্ধ জায়গায় ভ্যাপসা গরমের মধ্যেও ছোট্ট চৌকির ওপর কম্বল বিছানো। বৈদ্যুতিক যুগেও নেই কোনো আলো। অন্ধকার ঘোচাতে আছে ছোট্ট একটি টর্চলাইটে ভরসা। পানিও খেতে দেন না খালাতো বোন। অন্যের বাড়ি থেকে পানি এনে তবেই তৃষ্ণা মেটে রোকেয়ার।
একদিন বিকাল বেলা। ভিক্ষা করতে করতে ক্ষুধার জ্বালায় অস্থির রোকেয়া। খাওয়ার পর দোয়া করে বাড়ির পথ ধরে সে। রাস্তার ধারেই ছিল প্রধানমন্ত্রীর দেয়া গৃহহীনদের জন্য লাল, নীল রঙের ঘরের সারি। মসজিদের সামনে বসে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওই লাল, নীল ঘরের দিকে। মচকা খাওয়া কোমরে এবার উঠে দাঁড়ায় রোকেয়া। আর ফিসফিস করে বলতে থাকে, ‘সারা বাড়ি দেখি নাল, নীল কতো ঘর! ঈশ! কেউ যদিল একটা ঘর দিলে হয়।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম রোকেয়ার দুর্বিষহ জীবন-যাপনের বিষয়টি নিজে পরিদর্শন করে তার আশ্রয়ের আশ্বাস দিয়েছেন।