ঢাকা, ১৬ মার্চ ২০২৫, রবিবার, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ রমজান ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

প্রশ্নফাঁসে গ্রেপ্তার ২ ভাইয়ের ঢাকায় বিলাসী জীবন

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ থেকে
১২ জুলাই ২০২৪, শুক্রবারmzamin

সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ১৭ জনের মধ্যে দু’জন আপন ভাই সাখাওয়াত হোসেন (৩৪) ও সাইম হোসেন (২০)। গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি সাখাওয়াত। মাদ্রাসায় কয়েক মাস লেখাপড়া করে ১২ বছর আগে নিজ গ্রামে পানির ফিল্টারের ব্যবসা শুরু করেন। দুই বছরেও ব্যবসায় সফলতা আসেনি। সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করে সংসার চালাতেন। এরপর ছোট ভাই সাইমকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। এলাকার লোকজনের ভাষ্য, সাখাওয়াত হোসেন ও সাইম হোসেনের বাবা সাহেদ আলী অন্তত ৪০ বছর ধরে ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন। ময়মনসিংহ নগরীর লাশকাটা ঘর এলাকায় ও পরে সেখান থেকে তিন বছর আগে দিঘারকান্দা বাইপাস এলাকার কাদুরবাড়ি মোড়ে ওয়েল্ডিংয়ের ব্যবসা করে আসছেন তিনি। আকুয়া বাইপাস এলাকায় ভাগনি কমলা খাতুনের বাসায় বসবাস করেন সাহেদ আলী।

সাখাওয়াত ভাই-বোনদের মধ্যে বড়। হাফেজিয়া মাদ্রাসায় তিনি লেখাপড়া করেছেন। ঢাকার মতিঝিলে পানির ফিল্টারের ব্যবসা আছে। তবে তিনি এখন  বিলাসী জীবনযাপন করেন। এশিয়া, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন বলে জানান সাখাওয়াতের কাছের বন্ধুরা যা তাদের কাছে বিস্ময়কর।
সূত্র জানায়, ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। ময়মনসিংহ নগরীর বাইপাসেও রয়েছে তার জমি। দুই বছর আগে প্রাইভেটকার কিনেছেন, আছে ড্রাইভারও। ঢাকায় ফিল্টারের ব্যবসা করে গাড়ি কিনে এলাকায় আলোচনায় আসেন সাখাওয়াত।

তার এক কাছের বন্ধু বলেন, এক সময় সাখাওয়াতের পরিবার কষ্ট করে জীবনযাপন করেছে। হঠাৎ আর্থিক অবস্থার এত পরিবর্তন কীভাবে হলো এ নিয়ে আমাদের সন্দেহ ছিল। তিনি ঘন ঘন বিদেশ যেতেন। এশিয়া মহাদেশের প্রতিটি দেশ তার ভ্রমণ করা শেষ। তিনি আমেরিকাসহ কানাডা ভ্রমণ করেছেন। দুই বছর আগে প্রাইভেটকার কিনেছেন। ড্রাইভারও রেখেছেন। তবে বাড়িতে কোনো সম্পত্তি কেনেননি।

সাখাওয়াতের ফুপাতো বোন আছিয়া বেগম বলেন, সাখাওয়াত ও সাইমের মা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ১২ বছর আগে মারা যান। দুই ভাই ও দুই বোন তারা। তাদের এক বোন ঢাকায় একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। আর ছোট বোন ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি নার্সিং কলেজে পড়ছেন।
সাখাওয়াতের চাচি জমিলা খাতুন বলেন, সাখাওয়াত মতিঝিলে পানির ব্যবসা করে সংসার চালায়। বাড়িতে কোনো সম্পত্তি নেই। পানির ব্যবসা করেই ভাইবোনদের মানুষ করেছে। দুই বছর আগে প্রাইভেটকার কিনেছে। এবার ঈদে বাড়িতে আসে নাই।

বাবা সাহেদ আলী বলেন, আমি ৪০ বছর ধরে ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির কাজ করি। ছেলেরা আমার ১৭ কাঠা জমি বিক্রির টাকায় ঢাকায় পানির ফিল্টারের ব্যবসা করে আসছে। আনুমানিক দুই বছর আগে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ১১ লাখ টাকায় প্রাইভেটকার কিনেছে সাখাওয়াত। ব্যবসার ওপর ছেলেদের কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ আছে। আমার ছেলেদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ১৫ বছর আগেও তার বাবা আমার বাড়িতে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করেছে। ১০ বছর আগে তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা এমন ছিল না। হঠাৎ করে গাড়ি কেনা, দেশ বিদেশে ভ্রমণ করা অস্বাভাবিক মনে হয়। তিনি আরও বলেন, বাড়িতে থাকার জন্য ৫-৬ কাঠা জমি হবে। কী পরিমাণ জমি বিক্রি করে তার ছেলেকে দিয়েছে তার সঠিক হিসাব আমি বলতে পারবো না। তবে ১৭ কাঠা জমি বিক্রি করেনি।
ফুলবাড়ীয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বাদল বলেন, ইছাইল গ্রামের সাহেদ আলী ও তার দুই ছেলে মো. সাখাওয়াত হোসেন ও সাইম হোসেনকে চিনতাম না। তবে ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আসে।
 

পাঠকের মতামত

Now it is a good profession !!!!!!!!

delwar
১৩ জুলাই ২০২৪, শনিবার, ৮:৩০ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status