শেষের পাতা
সিলেটে একসঙ্গে মেয়র আনোয়ার ও আরিফের যে বার্তা
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২৩ জুন ২০২৪, রবিবার
নগর নিয়ে চিন্তিত সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। নানা পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু বন্যার পানির তীব্রতা সব পরিকল্পনাই তছনছ করে দিচ্ছে। কী করলে কাজ হবে; কেমন উদ্যোগ নিলে সিলেট বাঁচবে-এসব চিন্তায় রীতিমতো তিনি অস্থির। সিটির মসনদে বসেছেন ৯ মাস হলো। নির্বাচনের এক বছরও পেরিয়ে গেছে গতকাল। এই সময়ে অভিজ্ঞতা তিক্ত। সরকারের পলিসি লেভেলে দৌড়ঝাঁপ করছেন। সবারই কথা একটাই-সঠিক পরিকল্পনা নিন। এবারের পর পর দু’দফা বন্যায় সবচেয়ে বেশি আঘাত এসেছে নগরেই। ঢল নামলে এখন নগর তলিয়ে যায়। শুধু সুরমার ঢল নয়, এবার পিয়াইন ও ধলাইয়ের ঢল এসে চায়ের বাগান মাড়িয়ে নগরে পানি ঢুকেছে। এতে করে নগরের যেসব এলাকায় কখনোই বন্যা হয়নি, সেসব এলাকার মানুষও বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। নগরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ৯টি ছড়া ও অসংখ্য খাল ও নালা। সেগুলো পানি ধারণ করতে পারছে না। অতিবৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় নগর। বন্যা ও জলাবদ্ধতা দুটোই হয় দীর্ঘস্থায়ী। এতে করে বার বার বন্যায় পিছিয়ে পড়ছে সিলেট নগরও। একটি কার্যক্রম শুরু করতে চান মেয়র আনোয়ার। যেটির ঘোষণা অবশ্য তিনি গতকালই দিয়ে দিলেন। সিলেট বাঁচাও-নগর বাঁচাও- কার্যক্রম শুরু করতে চান তিনি। সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এ ঘোষণা দিলেন। এতে চ্যালেঞ্জও থাকবে বেশি। এই চ্যালেঞ্জের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে নগরকে- মানুষকে নিয়ন্ত্রণে আনা। নগরের ভেতর দিয়ে যে ৯টি ছড়া প্রবাহিত হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই দখল। প্রবাহিত খালগুলোর অস্তিত্বও বিলীনের পথে। এ কারণে বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় সিলেট নগর। এবার মেয়র আনোয়ার বলেছেন যারা ছড়া ও খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উদ্ধার করা হবে ছড়া ও খাল। সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়েছে; গতকাল দুপুরে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ নগরীর বিভিন্ন ছড়া পরিদর্শন করেছেন সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। নগরীর স্টেডিয়াম এলাকার সংলগ্ন মাদার কেয়ার হাসপাতালের পাশের বৈঠাখাল ছড়া পরিদর্শন করেন তারা। এসময় ছড়ায় পানি প্রবাহে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তদারকি করেন এবং সমস্যা সমাধানে একে অপরকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী এ সময় জানিয়েছেন- নগরীর ভেতর ২৩টি ছড়া আছে; ১৯৫৬ সালের ম্যাপ ধরে আমরা কাজ করবো। নগরীর সমস্ত ছড়া উদ্ধার ও খনন করে সুরমা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত করবো এবং সুরমা নদী খনন করা হবে। শুধু সিটি করপোরেশন এলাকা খনন করলে হবে না। উৎপত্তিস্থল থেকে খনন কাজ করতে হবে। সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তিনি আন্তরিকতার সঙ্গে আমাকে সহযোগিতা করছেন। তার ১০ বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা কাজ করবো এবং তিনি কোথায় কোথায় প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন সেগুলোও আমাকে অবহিত করছেন। মেয়র আনোয়ারুজ্জামান আরও বলেন- ‘নগর বাঁচাও, সিলেট বাঁচাও’ এই স্লোগানকে সামনে নিয়ে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ নগরীকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সিলেটের স্বার্থে আমরা দলমতনির্বিশেষে সবাই একমত। কিছু সংখ্যক মানুষের স্বার্থে সিলেট শহর ডুবে যাবে, বৃহৎ নগরবাসীর ভোগান্তি হবে- সেটা আমরা মেনে নিবো না। সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির নগরী। বহু বছর ধরে আমরা দেখছি নগরীর মানুষ পানিবন্দি হয়ে যান এবং মালামাল নষ্ট হয়ে যায়- এটি আর দেখতে চাই না। তবে এটির দায়ভার একা সিটি করপোরেশনের দায় নয়। যে সকল ছড়া, খাল আছে সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ কিছু ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা যদি নগরবাসীর কথা বিবেচনা করে এগুলো ছেড়ে দেন তাহলে তাদের স্বাগত জানাবো- অন্যথায় বর্তমান মেয়র তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ছড়াগুলো উদ্ধার করা গেলে সিলেটবাসী বন্যার কবল থেকে অনেকটা রক্ষা পাবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনের সঙ্গে তুলনা করেন তাহলে সিলেট অনেক পিছিয়ে। এর মূল কারণ হচ্ছে আমাদের নেতৃত্বের অভাব। আমার বিশ্বাস বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর মধ্যে এই নেতৃত্ব গুণ আছে। তিনি দায়িত্ব নিয়ে সিলেটের উন্নয়ন করতে পারবেন। সিলেট সিটির মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করলে মূল উৎপত্তি স্থল থেকে নগরীর ছড়া সরকারি ভাবে খননসহ শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ করা যায় তাহলে এর লাঘব হবে। এ সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মো. মখলিছুর রহমান কামরান, প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সিলেট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামিম আহমদ, দেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মিসবাউর রহমান সহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পাঠকের মতামত
সাবেক এবং বর্তমান মেয়র মহোদয় মিলে কাজ করছেন দেখে খুশি হলাম।
মিষ্টি কথায় কেউ দখল ছাড়বে না । বর্তমান সরকার দখলদার মুক্ত করতে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা প্রশংসনীয় । ঢাকার দখলদার মুক্ত করার ভিডিও ইউটিউব এর বদৌলতে দেখেছি । বুলডোজার চালাতে হবে । দলীয় বিবেচনা আত্মীয়তার সম্পর্ক দেখলে সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হবে । নগরবাসীর ভাগ্য পরিবর্তন হবে না। রাজশাহীর মত আদর্শ নগর গড়ার চিন্তা করুন। সিলেট বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে সুবিধাজনক ভৃপ্রাকৃতি অবস্থানে আছে । বাংলাদেশের সুন্দর নগর ছিল সিলেট। হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবেই।