ঢাকা, ২৬ জুন ২০২৪, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

অনলাইন

‘অযৌক্তিক’ ট্যাক্স, সিলেটে সংক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

(১ সপ্তাহ আগে) ১৭ জুন ২০২৪, সোমবার, ৪:১২ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১:২৪ অপরাহ্ন

সিলেট সিটি করপোরেশনের ধার্য করা হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে সংক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ। হুমকি দিয়েছেন আন্দোলনে নামার। ধার্যকৃত হোল্ডিং ট্যাক্সকে তারা লাগামহীন, অযৌক্তিক ও অন্যায্য বলে দাবি করেছেন। এই অবস্থায় নগরবাসীর সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছেন সিলেটের বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। যদিও ধার্যকৃত হোল্ডিং ট্যাক্স’র ব্যাপারে দায় নিতে রাজি নন তিনি। সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও ধার্যকৃত হোল্ডিং ট্যাক্সকে স্থগিত করা হয়েছিলো বলে তার উপর থেকে দায় সরিয়ে নিয়েছেন। তবে নাগরিক সমাজের ভাষ্য হচ্ছে; ট্যাক্স যে-ই ধার্য করুক সেটা তো জনগণের উপর পড়বে। সুতরাং এটি স্থগিত করে পুনরায় এসেসমেন্ট এবং আলোচনা ছাড়া ট্যাক্স আদায়ের জন্য সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। এজন্য প্রয়োজন হলে তারা আন্দোলনে নামবেন বলে জানিয়েছেন। 

সিলেট সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে আইন কী বলে, সেটি এখন বড় প্রশ্ন। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত কোনো সিদ্বান্ত সিটি করপোরেশন স্থগিত করতে পারে কী না- এ নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম হয়েছে।

বিজ্ঞাপন
সিলেটের সাবেক এডিশনাল পিপি এডভোকেট শামসুল ইসলামের মতে; বর্তমান মেয়র কিংবা পরিষদ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটি আইনগত ঠিক আছে। তবে; ধার্য ট্যাক্স অযৌক্তিক কী না- সেটি ভিন্ন প্রশ্ন। ব্যাখ্যা তুলে ধরে তিনি বলেন- সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এসেসমেন্টের পর সেটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। এখন সেটি স্থগিত করার অধিকার কেবল মন্ত্রণালয়ই রাখে। সিটি করপোরেশন স্থগিত করলে সেটি কার্যকারিতা থাকে না। সুতরাং বর্তমান মেয়র কিংবা পরিষদ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত বিষয়টি কার্যকর করতে যাচ্ছেন বা করছেন। এখানে আইনী কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে আরোপিত হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে সিলেট নগরের সবখানেই অস্বস্তি বিরাজ করছে। ধীরে ধীরে দানা বাঁধছে আন্দোলন। এই অবস্থায় মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আন্দোলনরত জনগণের সঙ্গে আলোচনা করতে ক্ষোভের মুখোমুখি হচ্ছেন। এতে তিনিও পড়ছেন অস্বস্তিতে। বৃহস্পতিবার নগরের দক্ষিণ সুরমার কদমতলী এলাকা ট্যাক্স বিরোধী স্থানীয়দের একটি বৈঠকে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন মেয়র। সেখানে তাকে দেখে জনতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই সভায় মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক সিলেটের মেয়রকে উদ্দেশ্য করে বলেন; যে ট্যাক্স ধার্য করা হয়েছে সেটি জনগণ মানছে না। এজন্য ১৪ তারিখের যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছে সেটি আরো দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দিলে ভালো হয়। একই সঙ্গে নতুন করে এসেসমেন্টের উদ্যোগ নিলে জনগণও সহায়তা করবে। 

জবাবে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন- ‘আমার উপর ভরসা রাখুন। জনগণের অসুবিধা হয়, এ ধরনের কোনো কাজই আমার দ্বারা হবে না।’ 

সিলেটের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন- ১৩ই মে তারা এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে স্মারকলিপি দেবেন। ট্যাক্সের ব্যাপারে তারা সুনির্দ্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দেওয়ারও চিন্তাভাবনা করছেন। সিলেটের নাগরিকবৃন্দের আহবায়ক ও সিলেট জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি  অ্যাডভোকেট এমাদ উল্ল্যাহ শহিদুল ইসলাম বলেছেন- ‘যারা কর দেবেন, যারা অংশীজন, স্টেক হোল্ডার তাদের মতামত না নিয়ে যদি কর নির্ধারণ করা হয়ে থাকে এ পদ্ধতিটি অবৈধ, অগণতান্ত্রিক ও জনস্বার্থের পরিপন্থি। এ পদ্ধতিতে যে কর আরোপ করা হয়েছে আমরা নাগরিকবৃন্দের পক্ষ থেকে সেটি প্রত্যাখ্যান করছি।’ 

সিলেট জেলা জাসদের সভাপতি ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ লোকমান আহমদ বলেছেন- ‘সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে, আমরা বলবো অনৈতিক ভাবে, অস্বাভাবিক হারে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে। এটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। যতদিন পর্যন্ত সহনীয় পর্যায়ে না নিয়ে যাওয়া হয়েছে নগরবাসী এই আন্দোলনের ধারা অব্যাহত রাখবে।’

তিনি বলেন- ‘আমরা হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে চাই, সহনীয় পর্যায়ে দিতে চাই। এই অমানবিক, অসহনীয়, অযৌক্তিক, বেআইনী যে কোনো বিবেচনায় এগুলো কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ 

সিলেট জেলা সিপিবি সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য বলেন- ‘এই যে ট্যাক্স কিসের ভিত্তিতে কী মাত্রায় বৃদ্ধি করা হয়েছে সেটি এখনো বুঝা যাচ্ছে না। চল্লিশ টাকার ট্যাক্স চার হাজার টাকা করা হয়েছে। একশ’ গুন, পাঁচশ’ গুন বাড়ানো হয়েছে। স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা না করে এভাবে ট্যাক্স বৃদ্ধির কোনো কারণ ছিলো না। তিনি আরোপিত করের আদেশ প্রত্যাহার করে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা পর সহনীয় পর্যায়ে ট্যাক্স আরোপের আহ্বান জানান।’ 

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি সিলেট বিভাগের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শিরিন আক্তার বলেন- ‘এমনিতেই মানুষের দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধির কারণে বিপর্যস্থ। এই অবস্থায় যদি সাধারণ মানুষের চিন্তা না করে কর চাপিয়ে দেওয়া হয় তাহলে আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি কর আদায় বন্ধ রেখে গণশুনানী করে, রি-এসেস করে যৌক্তিক কর আরোপের দাবি জানান।’ 

বাসদ জেলা আহবায়ক আবু জাফর বলেছেন- ‘আরোপিত কর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে নগরের মানুষের মধ্যে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। মানুষের মধ্যে ভোগান্তির তৈরী হয়েছে। এ কারণে আমরা এই হোল্ডিং ট্যাক্স বাতিলের দাবি জানিয়ে যাচ্ছি।’ 

গণতন্ত্রী পার্টির জেলা সভাপতি মো: আরিফ মিয়া বলেছেন- ‘যে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়েছে সেটি অন্যায়। আলোচনা করে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত ট্যাক্স বাড়াতে পারতেন। তা না করে একশ’ থেকে পাঁচশ’ শতাংশ ট্যাক্স বাড়ানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে দাবি করেন তিনি।’

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status