খেলা
মোহামেডানকে হারিয়ে কিংসের ট্রেবল
স্পোর্টস রিপোর্টার
২৩ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার
বসুন্ধরা কিংস ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব উপহার দিলো দারুণ এক ফাইনাল। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ তো ছিলই, কমতি ছিল না রোমাঞ্চেরও। ম্যাচে উত্তেজনাও ছড়িয়েছে বেশ কয়েকবার। শুরুতে এগিয়ে মোহামেডান পাচ্ছিল দারুণ জয়ের ঘ্রাণ। শেষ দিকে সমতায় ফিরে ম্যাচ জমিয়ে তুলে বসুন্ধরা কিংস। অতিরিক্ত সময়ে কিংসের এগিয়ে যাওয়া গোল নিয়ে ছড়ায় উত্তাপ। মাঠ ছেড়ে ডাগআউটে চলে যাওয়ার পর মোহামেডানের খেলোয়াড়েরা। ১০ মিনিটে প্রতিবাদ শেষে তারা ম্যাচে ফিরলে ঘটনাবহুল ম্যাচে জিতে ফেডারেশন কাপের মুকুট ফিরে পায় বসুন্ধরা কিংস। ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে গতকাল রোমাঞ্চকর ফাইনালে ২-১ গোলে জিতেছে টানা পাঁচবারের লীগ চ্যাম্পিয়নরা। একই ব্যবধানে একই দলের কাছে হেরে স্বাধীনতা কাপের শিরোপা খুইয়ে ছিল মোহামেডান। এ জয়ে ২০২০-২১ মৌসুমের পর ফেডারেশন কাপের শিরোপা ফিরে পেলো বসুন্ধরা কিংস। এ নিয়ে ঘরোয়া ফুটবলের ট্রেবল (স্বাধীনতা কাপ, ফেডারেশন কাপ ও প্রিমিয়ার লীগ) জিতলো তারা। এর আগে ২০১২-১৩ মৌসুমে ট্রেবল জিতেছিল শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র।
রেকর্ড ১২টি ফেডারেশন কাপজয়ী আবাহনীর পাশে বসার সুযোগ ছিল মোহামেডানের। যদিও শুরুতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ কিংসের হাতে। তবে নিজেদের রক্ষণ জমাট রেখে সুযোগ পেলে পাল্টা জবাব দিচ্ছিল মোহামেডানও। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে দারুণ কিছু সেভ করেছেন দুই দলের দুই গোলরক্ষক। প্রথমার্ধে বসুন্ধরা কিংসের চেয়েও সুযোগ বেশি পেয়েছে মোহামেডান। ম্যাচের ৪০তম মিনিটে ইমানুয়েল সানডে থেকে মোজাফফরভের পা ঘুরে বল পেয়ে দিয়াবাতে যে মিসটি করেছেন, সেটি নিয়ে আক্ষেপ হতেই পারে মোহামেডানের। এর পরপরই রাইট উইঙ্গার আরিফ হোসেন দারুণ ভাবে দিয়াবাতেকে আবারো একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার প্লেসিং লক্ষ্য খুঁজে পায়নি। কিংসও সুযোগ পেয়েছিল। ডোরিয়েল্টন একটি মিস করেন। তবে সবচেয়ে সহজ সুযোগটি বোধ হয় কাজে লাগাতে পারেননি সোহেল রানা জুনিয়র। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই মোহামেডানের আধিপত্য। একের পর এক আক্রমণে কিছুটা দিশাহারাই হয়ে পড়ে কিংস। মোজাফফরভ তো ছিলেনই, ছিলেন ইমানুয়েল সানডে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে শাহরিয়ার ইমন আশরাফুল হক আসিফের জায়গায় মাঠে নেমে মোহামেডানের খেলাই পাল্টে দেন। ম্যাচের ৬০ মিনিট থেকে ৬৫ মিনিট পর্যন্ত কিংসকে একেবারে নাজেহালই করে ফেলে সাদা-কালোরা। গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ পরপর তিনটি নিশ্চিত গোল রক্ষা করেন। কিংসের রক্ষণে চাপ ধরে রেখে ৬২তম মিনিটে এগিয়ে যায় মোহামেডান। দারুণ ডজে দুইজনকে কাটিয়ে জায়গা করে নিয়ে বাম পায়ের শট জাল খুঁজে নেন এমানুয়েল সানডে। ঝাঁপিয়েও বলের নাগাল পাননি শ্রাবণ। ৭৭তম মিনিটে ডোরিয়েল্টনের শট কোনোমতো দুই পায়ে আটকে কিংসের হতাশা আরও বাড়ান সুজন। তিন মিনিট পর রবিনিয়োর দূরপাল্লার শট সুজনের গ্লাভস ছুঁয়ে পোস্টে লেগে ফিরে। এরপরই পাল্টা আক্রমণে দিয়াবাতের শট শ্রাবণ পা বাড়িয়ে আটকে কিংসের আশা বাঁচিয়ে রাখেন। ৮৪তম মিনিটে গোলমুখে বল পেয়েও সুজনের বরাবর মারেন রবিনিয়ো। অবশেষে ৮৬তম মিনিটে মিগেইল ফিগেরার একক প্রচেষ্টার গোলে ম্যাচে ফেরে কিংস। যোগ করা সময়ে সানডের কাছের পোস্টে নেয়া শট শ্রাবণ ফিরিয়ে দিলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ১০৪তম মিনিটে রবিনিয়োর দূরপাল্লার শট আঙ্গুুলের টোকায় কর্নার করে দেন সুজন। সেই কর্নার থেকেই এগিয়ে যায় কিংস। কর্নারে লাফিয়ে উঠে বল গ্লাভসে নিলেও জমাতে পারেননি সুজন; ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান তিনি, সামনে থাকা জাহিদ হোসেন টোকায় জালে বল জড়িয়ে দেন। এই গোল নিয়েই উত্তাপ ছড়ায়। ফাউলের দাবি এবং তা না মানায় মোহামেডানের খেলোয়াড়রা মাঠ ছেড়ে যান। গ্যালারি থেকে কিংসের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্য করে বোতল থেকে শুরু করে নানা কিছু নিক্ষেপ করতে থাকেন সমর্থকরা। দুই কোচকেও দেখা যায় রেফারিদের সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলতে। রিপ্লেতে দেখা যায়, সুজন লাফিয়ে ওঠার সময় গফুর ও দিয়াবাতেও কিছুটা লাফিয়ে উঠেছিলেন, সে সময় কিংস ডিফেন্ডারের হালকা পুশ ছিল দিয়াবাতের পিঠে, সুজনের সঙ্গে অবশ্য তার কোনো সংস্পর্শই ছিল না। অবশেষে পরিস্থিতি শান্ত হলে মোহামেডান শেষ পর্যন্ত মাঠে ফেরে। তবে বাকি সময়েও সুযোগ এসেছিল তাদের সামনে একাধিক। অতিরিক্ত সময়ের একেবারে শেষদিকে কিংসের বক্সের মধ্যে ঢুকে শাহরিয়ার ইমনের একটি শট বার ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। এরপর মোজাফফরভের দূর পাল্লার প্রচেষ্টা যখন অল্পের জন্য পোস্টের ওপর দিয়ে চলে গেল, তখন মোটামুটি নিশ্চিতই হয়ে যায় ভাগ্য মোহামেডানের সঙ্গে নেই। কিংস জিতুক, আর মোহামেডান হারুক। ময়মনসিংহে শেষ পর্যন্ত জয়ী ফুটবলই। দেশের ফুটবলের আরও একটি ফাইনাল প্রমাণ করেছে, ফুটবলের রোমাঞ্চটা এ দেশের মানুষ প্রাণভরেই উপভোগ করেন।